চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে কয়েক দিন

আশফা খানম

১৮ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

তাই দেরী না করে আম রা ব্রেক ফাস্টের জন্য লবিতে নেমে পড়লাম। ইন্ডিয়ান ব্রেকফাস্ট। তাই আমাদের তেমন একটা সমস্যা হলো না। সবাই সিংগাপুর শহর দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। কারো চোখে ঘুম নেই। সারারাত জার্নির পরেও কোন ক্লান্তি নেই। মাশাআল্লাহ! বাচ্চাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে আমরাও নাস্তা সেরে আশেপাশে ঘুরবার জন্য বের হলাম। কারণ আমাদের ড্রাইভার বিকাল ৫টায় নাইট সাফারীতে যাবার জন্য নিতে আসবে। আমাদের হোটেলের খুব নিকটেই ছিল এশিয়ানদের প্রিয় সিঙ্গাপুরের অন্যতম বৃহৎ মার্কেট মোস্তফা সেন্টার। এই এলাকায় বেশি ভারতীয়, বাঙালি, মালয়দের আনাগোনা বা বসবাস। কিছু দূরে হেঁটে যেতেই ‘ঢাকা হোটেল’সহ বেশ কয়েকটি বাঙালি রেস্টুরেন্টের দেখা মিলে। প্রচুর বাঙালি, বাংলাদেশী এবং বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড দেখে মনে হচ্ছিল সিঙ্গাপুরের ভিতর এক টুকরো মিনি বাংলাদেশ। মুস্তফা সেন্টারের পার্শ্ববর্তী একটি চত্ত্বর আছে যেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাংলাদেশী শ্রমিক ও কর্মজীবীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সিঙ্গাপুরের মোস্তফা সেন্টার, মালেয়শিয়ায় হানিফা শপিং সেন্টার এর প্রতিষ্ঠাতা দু’জন ইন্ডিয়ান মুসলমান। একজন ব্যবসায়ীর পক্ষে এত বিশাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও শৃংখলার সাথে পরিচালনা করা দেখার মতো। আমরা মোস্তফা সেন্টার ও তার আশ পাশের দোকান থেকে টুকটাক কেনাকেটা করে বাঙালি রেস্টুুরেন্টে লাঞ্চ সেরে হোটেলে ফিরে আসি। বিকাল ৫টায় যথাসময়ে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে হাজির। এ যাত্রায় অন্য আরেকজন ড্রাইভার আমাদের নিতে আসেন। ১ ঘণ্টা প্রায় গাড়ী চালিয়ে তিনি আমাদেরকে নাইট সাফারীর টিকেট এবং ডিনারের টিকেট বুঝিয়ে দিয়ে রাতে ঠিক ১০ টার সময় একই জায়গায় নিতে আসবেন জানিয়ে সাফারি গেইট থেকে বিদায় নেন। নাইট সাফারি পৃথিবীর প্রথম নিশাচর প্রাণীদের বিচরণ দেখার ঘড়পঃঁৎহধষ তড়ড় (রাতে কর্মচঞ্চল থাকা চিড়িয়াখানা) এবং সিঙ্গাপুরের অন্যতম ট্যুরিস্ট আকর্ষণ। তথ্যানুসন্ধান করে জানতে পারলাম প্রায় ৯৯ একর জমির উপর এটি প্রতিষ্ঠিত। এতে বছরে ১.১ মিলিয়ন দর্শনার্থী বেড়াতে আসে। সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানার প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ড. অং সুইল প্রথম এই ঘড়পঃঁৎহধষ চধৎশ এর প্রস্তাব দেন। এটি বানাতে সিঙ্গাপুরী ৬৩ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এটি ১৯৯৪ সালের ২৬ শে মে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এতে বর্তমানে ২৫০০ টিরও বেশি প্রাণী আছে যাতে ১৩০ প্রজাতির প্রাণি বিদ্যমান এবং এদের ৩৮% হিং¯্র প্রজাতির। নাইট সাফারি হচ্ছে একটি উন্মুক্ত চিড়িয়াখানা।

এটিকে আটটি ভৌগলিক জোন এ ভাগ করা হয়। প্রতিটি জোন পায়ে হেঁটে কিংবা ট্রামে চড়ে দেখা যায়। অনেককে দেখলাম নির্ধারিত রুটে নিরাপত্তার ব্যবস্থায় হাইকিং করছেন। নাইট সাফারীতে কৃত্রিম চাঁদের আলো সৃষ্টি করে চাঁদনী রাতের পরিবেশ তৈরী করা হয়।

আবার আলোর প্রখরতায় যেন প্রাণীগুলো বিরক্ত না হয় সেজন্য আলোর তীব্রতা কমিয়ে দেয়া হয়। লন্ডনের লাইটিং ডিজাইনার সিমন করডার নাইট সাফারীর এই কৃত্রিম চাঁদনী আলো সৃষ্টি করেন। উল্লেখ্য, এই উন্মুক্ত চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোকে পধমবফ বা আবদ্ধ খাচাঁয় নয় বরং প্রকৃতির খাচাঁয় তাদেরকে উন্মুক্ত করে দর্শনার্থীদের থেকে পৃথক রাখা হয়। আমরা যথাসময়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট দেখিয়ে নাইট সাফারির ভিতরে প্রবেশ করি। এটি শহর থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক পথের দূরত্বে অবস্থিত। আমাদেরকে বিভিন্ন গর্তে বসবাসরত খরগোশ প্রজাতির প্রাণীর শো দেখানোর জন্য পথটি দেখানো হলো। আমরাও যথাস্থানে গ্যালারিতে সুবিধাজনক জায়গায় বসে পড়লাম। এখন অন্ধকার নামবার পালা। যেহেতু এটি ঘরমযঃ ঝধভধৎর একটুপর চারিদিক অন্ধকার হলেই ঝযড়ি শুরু হবে।
আমরাও অপেক্ষা করতে লাগলাম।

নির্দিষ্ট সময়ে ঝযড়ি শুরু হলো। দু’জন সুন্দরী তরুনী পুরো ঝযড়িিট বিভিন্ন নাটক ও ঘটনার অবতরন করে পশুগুলোকে নিয়ে মজা করে নাচে গানে ঝযড়ি প্রর্দশন করলো। ভোঁদড়, নেকড়ে, হায়েনাসহ ভয়ংকর অনেক বন্য প্রাণীকেও দেখানো হলো। আমরা ঝযড়িিট উপভোগ করে এবার ঘরমযঃ ঝধভধৎর দেখবার জন্য ট্রাম ধরতে পথ ধরলাম। দর্শনার্থীরা সুন্দরভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। এক দল ট্রামে চড়ে দেখে আসলে আরেক দলকে আবার উঠিয়ে নেয়া হয়। (চলবে)

আশফা খানম শিক্ষাবিদ, নারীউন্নয়নকর্মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট