চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আবারও অস্থির পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিন

১৭ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

পর্যাপ্ত মওজুদ ও সরবরাহ সত্ত্বেও মুনাফাশিকারিদের কারসাজিতে পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি অবারিত করে টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি ও অসাধুচক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পর দাম কমলেও এখন ফের চড়া হয়ে উঠেছে বাজার। সরকারের বহুমাত্রিক পদক্ষেপ সত্বেও কেনো পেঁয়াজের বাজারে তুঘলকি কা- বন্ধ হয়নি তা বোধগম্য নয়। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো বলছে, সংকট নয়, অতি মুনাফাশিকারি সিন্ডিকেটগুলোর কারসাজিতেই বাজারে দুর্মূল্য হয়ে উঠছে পেঁয়াজ। বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের এতো তৎপরতার পরও কীভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের বাজার নিয়ে দুর্বৃত্তপনা প্রায় নির্বিঘেœই চালিয়ে যাচ্ছে তা এখন বড় প্রশ্ন। এভাবে পেঁয়াজের দামের যুক্তিহীন উল্লম্ফন অব্যাহত থাকলে সাধারণ মানুষদের জীবনে দুর্ভোগের পরিধি যে আরো বাড়বে সন্দেহ নেই।

নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য পেঁয়াজের দাম গত তিন মাস থেকেই কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অজুহাত একটাই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার, তুরস্ক, মিসরসহ নানা দেশ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির পরও দাম না কমায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো অভিযানে নামে। এতে প্রত্যাশিত ফলও আসে। পেঁয়াজের দামে মোটামুটি ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বস্থি ফিরে আসে ভোক্তাসাধারণের মনে। কিন্তু হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই ফের পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। দু’দিন আগেও যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০/৫০ টাকা তা এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ দামের এই উল্লম্ফন কেনো তা খোদ ব্যবসায়ীরাও বলতে পারছেন না। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো বলছে, এর পেছনে মুনাফাশিকারি সিন্ডিকেটগুলোর বড় ধরনের কারসাজি আছে। কিছু অসাধু আড়তদার গুদামে পেঁয়াজ মজুদ রেখে অস্বাভাবিক হারে মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি আমদানি করার পরও প্রশাসনিক শৈথিল্যের সুযোগে অসাধু চক্রগুলো বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে সংকট তৈরি করে মুনাফা লুঠছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজের ঝাঁজে এখন রীতিমতো কাঁদছে ক্রেতা। হঠাৎ পেঁয়াজের দামের এই যুক্তিহীন উল্লম্ফন সাধারণ মানুষদের জীবনে খরচজনিত দুর্ভোগের পরিধি আরো বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে সরকার জনকাক্সিক্ষত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে জনজীবন চরম বেকায়দায় পড়বে।

সরকার টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সংকট কাটাতে আমদানি ত্বরান্বিত করতেও ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন ভারত থেকেও পেঁয়াজ আসার পথ মসৃণ হয়েছে। কিন্তু বাজারে এর প্রভাব পড়তে দিচ্ছে না দুর্বৃত্তচক্রগুলো। এ ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। টিসিবিকে আরো বড় আকারে মাঠে নামাতে হবে। বিকল্প বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে মুনাফাশিকারিদের অপতৎপরতা অনেকটাই কমে আসবে। একইসঙ্গে মূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষে বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারের জোরালো উদ্যোগের অনুপস্থিতির সুযোগে মুনাফালোভীরা তাদের কুইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে বাজারে। এদের রাশ টানতে ব্যর্থ হলে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। উল্লেখ্য, রান্নার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান উপকরণ হচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজ ছাড়া বাঙালি রান্নার কথা ভাবতেও পারে না। কৃষিভিত্তিক এ পণ্যটি ছাড়া শাক-সবজি, মাছ-মাংস, তরি-তরকারি- এক কথায় রান্নাবান্না একেবারে অচল। এ কারণে যুগ যুগ ধরে ধনী-গরিব সবার ঘরে পেঁয়াজের চাহিদা সমান। তাই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রেতাসাধারণের পকেট কাটার বিষয়টিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তাই সরকারকে বাজারমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট