চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হযরত ফতেহ আলী ওয়ায়েসী (রা.)

মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম

১৭ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

এই পৃথিবীর বুকে যে সমস্ত আশেকে রাসূল (সা.) এর সংস্পর্শে এসে মানবগণ দ্বীনি হকের সন্ধান পেয়েছেন তাদের মধ্যে শাহ ছুফী সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়ায়েসী (রা.) অন্যতম। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত বিধানের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী ছিলেন।

ফার্সী ভাষায় রাসুল (সা.) এর প্রেমের উপর দিওয়ানে ওয়ায়েসী শীর্ষক বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ রচনা করে তিনি রাসূল নোমা উপাধিতে ভূষিত হন। সুবহানাল্লাহ। একজন খ্যাতনামা আশেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিসেবে তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে অত্র আলোচনার অবতারণা। যুবদাতুল আরিফীন কুতুবুল ইরশাদ রাসূল নোমা শাহ ছুফী সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়ায়েসী (রা.) চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত সাতকানিয়া উপজেলাধীন আমিরাবাদ নামক প্রাচীন গ্রামে ১৮২৫ খ্রী. জন্মগ্রহণ করেন। তার জৈনিক উর্ধ্বতন পুরুষ আরব থেকে ইরাকে হিজরত করে আসেন। অতঃপর পারস্যে এবং সে স্থান থেকে আফগানিস্তান হয়ে সর্বশেষ দিল্লীতে এসে বসবাস করেন। তার পিতামহ হারিস আলী (রা.) দিল্লী থেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আমিরাবাদে এসে বাসস্থান নির্মাণ করেন। এইভাবে এ মহান ব্যক্তিত্বের উর্ধ্বতন পুরুষ বাংলাদেশে এসেছিলেন। যার কারণে দেশবাসী গর্বিত। তার পিতার নাম শাহ ছুফী সৈয়দ ওয়ারিস আলী (রা.) আর মাতার নাম সাইয়্যেদা সায়ীদা খাতুন। তার পিতা চার ত্বরিকায় উৎকর্ষ সাধনকারী একজন প্রসিদ্ধ আলেম ছিলেন। তিনি সৈয়দ আহমদ শহীদে বালাকোট (রা.) এর হাতে বায়আত গ্রহণ করে ইলমে জাহের ও ইলমে বাতেনে কামালিয়াত লাভ করেছিলেন। তার মাতাও ঐশী কালামে পাকের হাফেজা এবং নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রা.) এর বংশধর ছিলেন। সুবহানাল্লাহ করুণাময়ের অফুরন্ত করুণায় উক্ত দম্পতি আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে অলীয়ে কামিলে উন্নীত হন।

বিধাতার কুদরতীর হাতে গড়া এই রকমের একটি পরিবেশ যখন ছুফী ফতেহ আলী (রা.) কৈশোরে উন্নত হন তখন তার পিতা বালাকোট ময়দানে শাহদাতের অমিয় সুধা পান করেন। ফলে বিধবা মাতা তাকে নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পথে কলিকাতার অদূরে হুগলী নদীতে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে জাহাজ ডুবলে তার মাতা চিরদিনের জন্য এই নশ^র ধরা পরিত্যাগ করে আল্লাহপাকের সান্নিধ্য চলে যান। সুবহানাল্লাহ। কিশোর ফতেহ আলী (রা.) আল্লাহপাকের অসীম রহমতে বেঁচে যান।

ঘরে বসে সুচিন্তিত পিতার কাছে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করলেও এখন অসহায় এতিম বালক সুফী ফতেহ আলী কি করবেন, এটা তার ভাবনা হলে স্বর্গীয় সুধায় সুশোভিত কচিমুখ মলিন হতে যাচ্ছিলো। কিন্তু মহান আল্লাহপাকের কোন এক সামর্থ বান পুরুষের মাধ্যমে তাকে মাদ্রাসায় পড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কেননা হাদিসে কুদসীতে আল্লাহপাক বলেছেন – ‘যার জন্য (ফয়সালার ব্যাপারে) আল্লাহ হয়ে যান তার জন্য দুনিয়ার সবকিছু হয়ে যায়। এই ছাড়াও হযরত মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন আল্লাহ যার জন্য কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করেন।
দয়াময়ের এই বিধান গুলিকে সুফী বলে। সৈয়দ ফতেহ আলী (রা.) মাত্র কয়েকবছরে পবিত্র কোরান ও হাদীস ও ভাষাতত্ত্বে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। সাথে সাথে ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খানকাসহ বিখ্যাত সুফী সাধকের সাহচর্যে অনেক দিন অতিবাহিত করেন। এবং ইলমে জাহেরের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যুৎপত্তি লাভ করেছিলেন।
যার উছিলায় এত লোক মঞ্জিলে মুকছুদে পৌঁছেছিল, তিনি যে কত বড় আশেকে রাসুল (সা.) সে কথা বলার অবকাশ রাখেনা। তবুও প্রিয়তমের জন্য প্রেমিকের যে কতটুকু অন্তহীন ব্যথা, তা অনুধ্যেয়। কর্মজীবনে একটা বিরাট অংশ কাটছে চাকরিতে কিন্তু আশেকে রাসুল (সা.) এর জন্য অপরের পায়রুবী করা চলে না। তাই তিনি চাকরির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নিয়োজিত হলেন সম্পূর্ণরূপে দ্বিনের খিদমতে। সুবহানাল্লাহ।

আর অবিরাম প্রচেষ্টার কারণে যারা খিলাফতের স্তরে উন্নীত হয়েছেন তাদের সংখা পঁয়ত্রিশ। তৎমধ্যে যারা উল্লেখযোগ্য তাদের অন্যতম শাহ আবু বকর সিদ্দিক ফুরফবাড়ী (রা)। আর তারই যোগ্যতম উত্তরসূরী হচ্ছে শাহ ছুফী, নেসার উদ্দিন আহমদ (রা.)। যার আলোকে সমগ্র বাংলাদেশ আলোকিত। অতএব বলতে পারি যে ভারত উপমহাদেশে ইসলামের রশ্মি যাদের মাধ্যমে ছড়িয়েছে, হযরত শাহ ছুফী সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়ায়েসী (রা.) তাদের একজন। সুবহানাল্লাহ।

তিনি আমলগত যে আশেকে রাসুল (সা.) তার বাস্তবতার খোরাক যোগাচ্ছে তারই লিখনীর তুলি। বিভিন্ন ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে

প্রেমাস্পদকে কেন্দ্র করে কাব্যে রচনা করে উপহার দিয়েছেন। কবিতা জগতে এক বিশাল সাহিত্যে ভা-ার “দিওয়ানে ওয়ায়েসী” নামক কাব্য সম্ভার। ফার্সী ভাষায় রচিত এই গ্রন্থে রয়েছে ১৪৭টি গজল। প্রতিটিই নবী (সা.) এর ভালোবাসায় পূর্ণ যেমন কাব্যানুবাদ – উৎস হতে হুরে রাসুল কাব্যে আমার জাগল এসে ভালোবাসার অরুন রাগে হৃদয় আমার জ¦লল শেষে। অবশেষে অনেক ভক্ত এবং খুলাফাদেরকে অশ্রু সাগরে ভাসিয়ে ১৮৮৬ সালে ৬ ডিসেম্বর এ মহামানব জান্নাতুল ফেরদাউসের পথে পাড়ি জমান। কলিকাতার মানিকতলা লালবাগ মহল্লায় ২৪/১ মুন্সীপাড়া লেনস্থ ২নং দিল্লীওয়ালা গোরস্থানে তার মাজার অবস্থিত। হে আল্লাহ আমাদেরকে তাদের নেক নজর কামনার তৌফিক দান করুক।
আমিন সুম্মা আমিন ওয়াচ্ছালাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট