চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কিডনি সমস্যা সমাধানে করণীয়

অধ্যক্ষ ডা.রতন কুমার নাথ

১৭ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

ইদা নীং কিডনি সমস্যা বেড়েই চলে ছে। কিডনিতে গোলমাল হলে শরীরের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যায়। পেটের মধ্যে অনেকটা উঁচুতে আর ডায়াফ্রামের ঠিক নীচে কিডনির অবস্থান মানবদেহে। মূত্র উৎপাদন ও মূত্র নিঃসরণ এ দুটো কাজ ছাড়াও কিডনি থেকে কিছু কিছু হরমোন নিঃসৃত হয় এবং কিডনি সেই হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, কিডনির কাজ। কিডনিতে রোগ দু’ভাবে হয়, কিডনি খারাপ হলে অর্থাৎ কিডনি কাজ না করতে পারলে, আর অন্য রোগের কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে। কিডনি কাজ না করলে হয় নেফ্রাইটিস। এটা আবার দু’রকমের। ক্রনিক ও একিউট। এছাড়া নেফ্রেটিক সিনড্রোম, পাইরোনেফ্রাইটিস, কিডনি বা মূত্রথলীতে পাথর এসবই এ আওতায় পড়ে। পাইরোনেফ্রাইটিসের মধ্যে ইকোলাই ও প্রোটিয়াস বেশি হয়। এছাড়া অন্যান্য রোগ যেমন, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিস, হাইপোপলিসিয়া, অতিরিক্ত রক্তপাত, দেহ থেকে অতিরিক্ত জলীয় পদার্থ নিঃসরণ এবং বেশ অনেকদিন ধরে রক্তচাপ কম থাকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যার দরুণ চোখের নীচে মুখ পায়ের গোড়ালি ফুলে যায়। রক্তাল্পতা দেখা দেয়। প্রস্রাব কম হয়। অনেক সময় জ¦র হয়। হিমেচুরিয়া অর্থাৎ রক্তপ্রস্রাব হয়। প্রস্রাবে কষ্ট হবে, জ¦ালা-যন্ত্রণা হবে। প্রস্রাবের দ্বার সরু হয়ে যাবে। প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাবে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় কিডনিতে টিউমার হলে। টিউমার হয় পুরোপুরি যন্ত্রণাহীনভাবে। একদম টের পাওয়া যায় না। হঠাৎ একদিন হিমেচ্যুরিয়া অর্থাৎ রক্তপ্রস্রাব হয়। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে ভীষণভাবে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। কিডনির অসুখ কিন্তু বংশগত নয়। প্রস্রাব নিয়মিতভাবে দমন করে রাখলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দুটো কিডনি অচল হয়ে গেলে কিডনি বদলানো ছাড়াও ডায়ালিসিস করা যেতে পারে। ডায়ালিসিস দু রকমের হয়। পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস এবং হিমোডায়ালিসিস। কিডনি খারাপ হলেও অনেক ক্ষেত্রে দু তিনবার পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস করলেই কিডনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিডনি ভাল হবার কোনও সম্ভাবনা না থাকলে সপ্তাহে থেকে তিনবার হিমোডালিসিস করতে হয়। এ অবস্থায় কিডনি বদলই একমাত্র রাস্তা যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন হিমোডায়ালিসিস করে যেতে হয়। একটি কিডনি খারাপ হলে কিডনি বদলানোর প্রয়োজন নেই।

কিডনি বদল করতে হলে দাতা ও গ্রহীতার দুজনের রক্তের গ্রুপ এক হতে হবে। টিস্যু ম্যাচ করতে হবে। ষাটের বেশি বয়স হয়ে গেলে কিডনি দেয়া চলবে না। সব থেকে ভাল হয়, যদি রক্ত সম্পর্কিত ব্যক্তি কিডনি দান করেন। অনাত্মীয় ব্যক্তি কিডনি দান করলে অনেক সময় কিডনি ঠিকমত কাজ করতে চায় না। অবশ্য এখন অনেক ঔষুধ পাওয়া যাচ্ছে যা থেকে এই অসুবিধা রোধ করা সম্ভব। যিনি দাতা তিনি একটি মাত্র কিডনির সাহায্যে বাকি জীবনটা সুস্থ স্বাভাবিকভাবে কাটাতে পারেন। যদি ঐ কিডনি কোনও সমস্যার সৃষ্টি না করে। গ্রহীতা সুস্থ জীবন কাটাতে পারে। তবে যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন ডাক্তারের পরামর্শে চালাতে হবে। শরীরের কিডনি নির্দিষ্ট জায়গায় পেরিকার্ডিয়ানর মধ্যে সুরক্ষিত থাকে। কিডনি বদলের সময় কিডনিকে আগের জায়গায় না বসিয়ে কিছুটা নীচের দিক বসানো হয়। তাই কিডনি বদলের পর বেশি ভিড়ের মধ্যে না যাওয়া বা ধাক্কা লাগা বা অতিরিক্ত ওজন তোলাও ক্ষতিকর। কিডনি বদলের পর পুরুষ বা নারী সন্তানের পিতা-মাতা হতে পারে। মৃত্যুর পর কোন ব্যক্তি কিডনি দান করে যেতে পারেন।

কিডনি সমস্যায় হোমিওপ্যাথিক অনুরোধ প্রয়োগ সংকেত যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। কিডনিতে পাথর ও টিউমার সরাতে এই প্যাথির ওষুধ প্রচ- শক্তিশালী যা অন্য প্যাথিতে নেই। শুরুতেই নির্দিষ্ট মাত্রায় ঔষুধ সেবনে এটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ছক বাধা গতানুগতিক বাজার চলতি ঔষুধ খাবেন না। যেহেতু এটা জটিল বিষয় তাই ইচ্ছামাফিক ঔষুধ খেলে হিতে বিপরীত হবে।

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট