চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাঁচ বছরের শিশুকে বীভৎসভাবে হত্যা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক ঘাতকদের

১৬ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে সন্তোষজনক নয়, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতিদিনই ঘটছে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, ধর্ষণ, গুমসহ নানা অপরাধের ঘটনা। ঘটছে একের পর এক খুনের ঘটনাও। সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, দিনদিন অপরাধীরা চরম বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন সময়ে তা স্বীকার করেছে। কিন্তু যে বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয় তা হচ্ছে, খুন-ধর্ষণ কিংবা অপহরণের মতো গুরুতর কোনো অপরাধ সংঘটিত না করা অবধি কেন অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? সাধারণ মানুষের প্রতিরোধও কেনো দেখা যায় না তাও বোধগম্য নয়। যদি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনকাক্সিক্ষত পরিমাণে কঠোর হতো এবং অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে জোরালো জনপ্রতিরোধ থাকতো তাহলে কী সমাজে অপরাধপ্রবণতা বাড়তে পারতো? পাশবিক কায়দায় বুয়েটশিক্ষার্থী আবরার হত্যাকা-ের পর আরেকটি হত্যাকা- এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে উঠেছে। রোববার সুনামগঞ্জে তুহিন নামের পাঁচ বছরের এক শিশুকে বীভৎসভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে ক্রমেই বাড়ছে জন-উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।

একজন মাসুম শিশুর বীভৎস হত্যাকা- চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলাপরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, রোববার রাতে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে তুহিন মিয়া নামে ৫ বছরের এই নিষ্পাপ এবং অবুঝ শিশুটিকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পাষ-রা শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি শিশুটির পেটেও ছুরিকাঘাত করা হয়; কেটে নেওয়া হয় একটি কান ও জননাঙ্গ। এর পর ঝুলিয়ে রাখা হয় বাড়ির পাশের সড়কের কদমগাছে। গলা কেটে হত্যায় ব্যবহৃত দুটি ছুরি ঢুকিয়ে রাখা হয় পেটে। ছুরি দুটিতে সুলেমান ও সালাতুল নামে দু’জনের নাম লেখা হয়েছে।

তার দু’জনই ওই গ্রামের বাসিন্দা। দিরাইয়ের রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামে ঘটে বীভৎস এ ঘটনা। খবর পেয়ে সোমবার সকালে শিশুটির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে এ হত্যাকা- ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষে মানুষে বিরোধ-শত্রুতা থাকতে পারে। এখানে শিশুর কী অপরাধ! আবার হত্যাকা-েও কেনো চরম নিষ্ঠুরতা ফুটে উঠলো? দ্রুত সময়ে অপরাধীদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে ব্যর্থ হলে এমন পৈশাচিক ঘটনা জনআতঙ্ক বাড়িয়ে দেবে, সন্দেহ নেই।

আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই দেশে খুন, ধর্ষণসহ ভয়ংকর অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণ। শাস্তির ভয় না থাকায় অপরাধীরা ক্রমে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নিরাপদে এবং সম্মানজনকভাবে বসবাস মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা ও অধিকার। আর রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের সেই নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা। এ ধরনের অপরাধকর্ম বাড়তে থাকলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আরো তীব্র হবে। অপরাধীদের যথোচিত শাস্তি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে সমাজ এক অরাজক পরিস্থিতির দিকেই চলে যাবে। দিনদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে দেশ উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যেতে পারবে না। ভিশন ’২১ এবং ’৪১ অর্জনের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। সংগতকারণেই এই অবস্থার আশু অবসান হওয়া দরকার। শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার অপরাধীদের। অপরাধী যে হোক, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে, দেশ দ্রুত অপরাধমুক্ত হবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর, বিশেষ করে পুলিশবাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে অপরাধীদের সঙ্গে কিছু পুলিশ সদস্যের সখ্য অন্যতম। পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে পুলিশবাহিনীকে এসব দুর্বলতা থেকে মুক্ত করতে হবে। আর অপরাধপ্রবণতা রোধ করতে আইনের বল প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নাগরিকপ্রতিরোধ গড়ার ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার সুচিন্তিত কর্মসূচিও থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট