চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শ্রমিক ও শ্রমের মূল্য প্রসঙ্গে

মু.সাঈদী আলম

১৬ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:২৮ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর শুরুতে থেকে শেষ পর্যন্ত এত কিছুর চাকচিক্যের ঝলকানি। এত সৌন্দর্যের লীলাভূমি, নুদুস নাদুস এতকিছু, ভোগবিলাসের রাজপ্রাসাদ, আকাশচুম্বি চোখ ধাঁধানো অট্টালিকা সবগুলোর পেছনে কার ছোয়া লেগে আছে জানেন? নিশ্চয় বেরিয়ে আসবে একটি মাত্র উত্তর ‘শ্রমিক’ শ্রমিকের শরীর থেকে নিংড়ানো কষ্ট নামক নদীর পানি হলো ঘাম। এই ঘামের নহর পেরিয়ে গড়ে উঠেছে একেকটি সভ্যতা। আজকে আমি আপনি বিলাসবহুল প্রাসাদে মাস্তি করছি। আপনি কি জানেন এটা নির্মাণ করতে গিয়ে কত অসহায় শ্রমিকের যবনিকাপাত ঘটেছে। কত মায়ের বুক খালি হয়েছে, স্বামী হারা স্ত্রীর কত আর্তনাদে কত দেয়াল চুপসে গেছে। কত বাবা হারা সন্তানেরা এতিম হয়ে গেছে। তার প্রিয়জনেরা কত বিলাপ করছে। কত কুলি পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অসহায় নিদারুণ কষ্টে চেচামেচি করে দিন কাটাচ্ছে। কিছু মাস মাসোয়ারা পেয়ে হয়তো সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এদেশে শ্রমিকনির্যাতন, হয়রানি, প্রেসার কিন্তু কম নয় হয়তো পরিসংখ্যান দেখলে ভূরি ভূরি নজির পাওয়া যাবে শুধু ২০১৩ সালের দুটি ট্রাজেডি রানা পাজা আর তাজরিন ফ্যাশন গার্মেন্টস। এভাবে পূর্বেকার দিনগুলোতে কম নয়। ১৮৮৬ সালে যে শ্রমিক আন্দোলন হয়ছিল তা কিন্ত সফল হলে এখনও সুফল আমাদের দেশের শ্রমিকেরা ভোগ করতে পারছে না।
এদেশের উদ্যোক্তারা সুবিধা ভোগ করতে চায়, নিরাপত্তা দিতে চায় না।

আমাদের দেশের শ্রমিকদের এখনো মৌলিক অধিকার রক্ষিত হয় না। ঠিকমত তারা মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না ১২-১৮ ঘণ্টা কাটুনি কাটার পরও। লবণ আনতে পানতা ফুরায় এই তাদের অবস্থা। যদি কাজের সুষ্ঠু পরিবেশের কথা বলি তাহলে মায়াকান্না করি মনে হবে। শ্রমিকের সাধ্যের বাইরে এমন কোন কাজ চাপিয়ে দেয়া যাবে না যা তাদের কষ্ট হয়। যে আচরণটা বস তার অধিনস্ত কর্মচারীদের সাথে করে থাকেন কোন সুস্হ বিবেকসম্পন্ন মানুষ এই কাজ করতে চাইবে না। মানুষকে যন্ত্র মনে করাটা এক ধরনের বাস্তবতার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা। কোন প্রাণী মানসিক ও শারীরিক চাহিদার বাইরে নয়। সময়ের ক্ষেত্রে আট ঘণ্টা কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে এর বাইরে কাজ করলে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিতে হবে। এমন পারিশ্রমিক দিতে হবে যাতে মৌলিক চাহিদাগুলোর কোন অংশে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে। সে দিকে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। এদেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা কিন্তু কম নয় দিন দিন আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা একটি জাতির ভবিষ্যতের জন্যে অশনি সংকেত। এটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যেসময় হাতে বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা কয়টা কবিতা শেখার কথা সেসময় ছেলেটা তার হাতুড়ি পিটিয়ে কয়টা ইট ভাঙ্গছে সেটাই গণনা করছে। এভাবে যে ছেলে শ্রমিক হিসাবে বড় হচ্ছে এভাবে তার বয়সের পরিধি বাড়তে বাড়তে শ্রমিকই তার জীবন এভাবে সে তার জীবনপ্রদীপ নিভে যাচ্ছে। অথচ তার ভিতর লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভূ আর বিকশিত হচ্ছে না।

দেশে নারীশ্রমিকের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তারা যে পরিমাণে শ্রম দেয় সে পরিমাণে পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। অথচ সামান্য মজুরির বিনিময়ে হাড্ডিসার পরিশ্রম করে। সাধারণত আমরা ঘরে বাইরে তাদের অনেক শ্রমকে শ্রমও মনে করি না। এটা আমাদের দুর্বল মনমানসিকতা দায়ী। আমাদের মনে রাখতে হবে আমার ডান চোখ যেমন প্রিয় তেমন বাম চোখও। একটা চোখ অন্ধ হয়ে গেলে যেমন আমি পরিপূর্ণ ভালমতে কোন কিছু দেখতে পারি না। আমার পুরো শরীর সবকিছু ঠিক থাকলেও অপূর্ণ মনে হয়। আমি সুস্থ সবল পূর্ণাঙ্গ দেহের অধিকারী হতে পারি না। এরকম কোন এক অংশকে পেছনে রেখে আমরা সভ্য জাতির দাবিদার হতে পারি না। প্রত্যেক জাতির নারী-পুরুষ সমান সুযোগে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কোন মতে আমাদের শ্রমিকের ত্যাগ, কর্মকে অস্বীকার করা যাবে না। তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

দেশের অবহেলিত, পঙ্গুত্ব বরণকারী শ্রমিকদের পুর্নবাসন এর ব্যবস্থা করতে হবে। যারা নিহত হয়েছে তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা যাতে পেটে ভাতে চলতে পারে এ ব্যবস্থাটুকু করতে হবে। শ্রমিক সুরক্ষা আইন জোরদার করতে হবে। যাতে অহেতুক নির্যাতনের শিকার না হয়। এরকম মালিকদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে সবার কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় দক্ষ শ্রমিক তৈরীতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা হাতেখড়ির মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব।

মু.সাঈদী আলম বিএড ট্রেইনি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট