চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস অন্ধত্ব নিবারণ ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিদের অধিকার রক্ষায় চাই কার্যকর পদক্ষেপ

১৫ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ‘সাদাছড়ি ব্যবহার করি, নিশ্চিন্তে পথ চলি’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা, সামাজিক মর্যাদা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৫ অক্টোবরকে ‘বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সাদাছড়ি বহনকারী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে নিরাপদে পথ চলতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে সচেতনতা বাড়ানোই এ দিবসের মূল লক্ষ্য। সন্দেহ নেই, দিবসটি উদযাপনের মাধ্যমে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর নিরাপদ চলাচল ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজে ফলপ্রসূ প্রভাব ফেলবে, একইসঙ্গে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনসহ তাদের প্রতি সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ৪০ লাখ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রয়েছে। অপুষ্টি, টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়রিয়া, পোলিও, এসিড নিপেসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যার কারণে বিশ্বব্যাপী এখন অন্ধতা নিবারণ ও প্রতিরোধে ব্যাপক কর্মসূচি গৃহীত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক উদ্যোগে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এক্ষেত্রে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুসরণে বাংলাদেশে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের কথা শোনা যায়। তবে সরকারের গৃহীত কর্মসূচিগুলো গণদৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতি বছর ‘বিশ্ব দৃষ্টিদিবসে’ কিছু জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি দেখা গেলেও বছরের অন্য কোনো সময় এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য তৎপরতা দৃষ্টিগোচর হয় না। দেশী-বিদেশী কিছু এনজিও অন্ধত্বের অভিশাপ দূরীকরণ কর্মসূচিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করলেও কাক্সিক্ষত ফলাফল নেই। সরকার প্রতি বছর এ বিষয়ে বাজেট বরাদ্দ দিলেও অন্ধত্ব মোচন তৎপরতা আশা জাগানিয়া নয়। দুর্নীতির কারণে বেশির ভাগ অর্থ প্রকল্প-পরিচালকের পেটে চলে যাওয়ার অভিযোগ আছে। ফলে বেশ কয়েক বছর থেকে বাংলাদেশে অন্ধত্বের অভিশাপ ঘুচানোর চেষ্টা চললেও এখনো পর্যন্ত সাধারণ মানুষ অন্ধত্বের কারণ এবং প্রতিকার বিষয়ে তেমন সচেতন হয়নি। প্রসঙ্গত, সারাবিশ্বের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে অন্ধ।

এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এবং ১৫ লাখ শিশু সম্পূর্ণভাবে অন্ধ। আর পৃথিবীর মোট অন্ধ লোকের এক তৃতীয়াংশ বাস করে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে। অন্য এক হিসেবে দেখা যায়, বিশ্বে প্রতি মিনিটে ১২ জন বয়স্ক লোক এবং একজন শিশু অন্ধত্ব বরণ করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতি মিনিটে ১২ জন বয়স্ক লোক এবং একজন শিশু অন্ধত্ব বরণ করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতি মিনিটে অন্ধত্ব বরণ করছে ৪ জন। উল্লেখ্য, চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, অন্ধত্ব বরণকারীদের ৮০ ভাগই উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারে।

একথা স্বীকার করার সুযোগ নেই যে, চিকিৎসার মাধ্যমে কোন ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সুযোগ থাকলে সে ব্যক্তির অধিকার আছে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবার। এটি তার মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। যদি এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা যায় তাহলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের এক বিশালসংখ্যক দৃষ্টিহীন ব্যক্তি তাদের দৃষ্টি ফিরে পাবে। এতে অন্ধব্যক্তি নিজে যেমন পরনির্ভরতার অভিশাপ থেকে রেহাই পাবে, তেমনি অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নেও অবদান রাখতে পারবে। এ জন্যে প্রয়োজন সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে অন্ধত্ব প্রতিরোধ এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে যাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়া যায় তাদের চিকিৎসার জন্যে নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এই যুগে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা যায়। এ জন্যে প্রয়োজন পর্যাপ্ত কর্নিয়া। আর পর্যাপ্ত কর্নিয়া পেতে চাইলে মরণোত্তর চক্ষুদানের ব্যাপারে গণমানুষের মধ্যে উৎসাহ বাড়াতে হবে। আর অন্ধ জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশই যেহেতু গ্রামীণ জনপদগুলোতে বসবাস করে সেহেতু চিকিৎসা-সুবিধা গ্রামে-গঞ্জে সুলভ করার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। একই সঙ্গে কি কি কারণে মানুষ অন্ধ হয়, ভিটামিন-এ এবং পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে কীভাবে প্রতি বছর আমাদের দেশে হাজার হাজার শিশু অন্ধ হয়ে যায় সে বিষয়েও ঘরে ঘরে প্রচারণা, প্রচার মাধ্যমে নাটক-নাটিকা প্রদর্শন, প্রবন্ধ-নিবন্ধ-সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠান প্রভৃতি কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। যদি এ বিষয়ে একটি কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা যায় তাহলেই কেবল বাংলাদেশ অন্ধত্বের অভিশাপ দূর করতে পারবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট