চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় আগরতলা ও চট্টগ্রামের শিল্পীদের চিত্র প্রদর্শনী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

নাওজিশ মাহমুদ

১৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৯ পূর্বাহ্ণ

৬০ বছর উর্দ্ধে বযসী লোকজন শুধু গ্লাস ফ্যক্টরীর নাম শুনেছে। এতো পূর্বের ঘটনা কারো জানার কথা নয়। জায়গাটা তখনও ছিল শহতলীতে। বর্তমানে শহরে কিন্তু শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখনও জমজমাট আবাসভূমি হয়নি। কোন শিল্প গড়ে উঠে নি। এখনও গ্রাম্য পরিবেশ।

আগরতলায় নিমতলায় অবস্থিত গ্লাস ফ্যক্টরী দেরাদুনের টান্ডুয়া এবং আসামের হাফলং থেকে প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশে ঢুকার পূর্বে ট্রানিজট ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা হতো। গ্লাস ফ্যাক্টরীতে শেখ মনি বসতেন। এখানে কোন ভবন ব্যবহার না করে সকলে তাঁবুতে থাকতাম। মেঝেতে ঘুমাতাম। একটি তাঁবুতে শেখ মনি অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। চেয়ার টেবিল ছিল। তবে খুব একটা গোছানো অফিস ছিল না। গ্লাস ফ্যাক্টরী তখনও পরিত্যাক্ত অবস্থায় ছিল।

গ্লাস ফ্যাক্টরীতে আমার একটি স্মরণীয় ঘটনা মনে পড়ে। তৎকালীন বিএলএফ এর চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএলএফ নেতা এম এ মান্নান যিনি ৭১ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নিউক্লিয়াসের প্রথম ৫ জনের একজন ছিলেন। তিনি আমাদের মুজিববাদ সম্পর্ক ধারনা দেয়ার জন্য রাজনৈতিক ক্লাস নিতে এসেছিলেন। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষ সমন্বয়ে নিয়ে নতুন মতবাদ মুজিববাদ বুঝাতে ছিলেন।

তখন আমি প্রশ্ন করেছিলাম এখানে বঙ্গবন্ধুর মৌলিক অবদান কোথায়? এগুলি আগে থেকেই বিদ্যমান আছে। এর সাথে আরেকটি নীতি যোগ করলে কি আমার মতবাদ হয়ে যাবে। এই প্রশ্ন নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্লাস অমিমাংসিত রেখে মান্নান ভাই রাগ করে চলে যান। আর কোন দিন মুজিববাদ নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক ক্লাস হয় নি। তার পরের দিন একটি পুরানো মোটর সাইকেলে স্বপন চৌধুরী আমার কাছে ছুটে আসেন। মনে হয় বিএলএফ হাই কমান্ডে এটা নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি বললেন, তুমি এটা কি করলে তোমার জীবন নিয়ে সংশয় আছে। আমি উত্তরে বলেছিলাম, আমার জীবন নিয়ে সংশয় নাই। কারণ আমি ছাত্র লীগের অভ্যন্তরীণ কোন গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত নই। বরং আপনার জীবন সংশয় আছে। উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি কোন কিছু ভেবে বলি নি। হঠাৎ মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছে। কেন বললাম আমি নিজেও জানি না। ইতিপূর্বে স্বপন চৌধুরীর সাথে আমার কোন পরিচয় ছিল না। যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করার পূর্বে স্বপন চৌধুরী আমাকে তার সাথে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। আমি সবিনয়ে যেতে অস্বীকার করি। উনার সাথে গেলে হয়তো আমাকে স্বপন চৌধুরীর ভাগ্য বরণ করতে হতো।

তাই পরিত্যাক্ত গ্লাস ফ্যাক্টরীর জঙ্গলেভরা ভূমিতে দাঁড়িয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। ’৭১ সালের ঘটনা ছবির মতো ভেসে উঠে। বয়স তখন সর্বোচ্চ ১৫ বছর। এই বয়সে দেরাদুনের টান্ডুয়ায় প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল না। শুধু মাত্র চট্টগ্রাম ইন্টার মিডিয়েট কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলাম। পরিত্যাক্ত গ্লাস ফ্যক্টরী থেকে বের হয়ে এসে বিজেপির নির্বাচন ক্যাম্পে বসলাম।

তাঁরা চা খাওয়াতে চেয়েছিল। আমরা শুধু পানি খেলাম। গ্লাস ফ্যাটরীর স্মৃতি কাতরতা নিয়ে ফিরে আসি। স্বপন আচার্যের সাথে যোগাযোগ হয় ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে। চিত্র প্রর্শনীতে অংশ নেয়া চট্টগ্রামের শিল্পীরা সকলে চলে গেলেও সে থেকে যায়। একসাথে কলকাতা যাবো সন্ধ্যার ফ্লাইটে। সে শ্রীধর ভিলা দেখতে চাইলো। তাঁকে নিয়ে গেলাম। সে ছবি তুললো। শ্রীধর ভিলার এক মুঠো মাটি নিলো। বললো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করবে। (সমাপ্ত)

নাওজিশ মাহমুদ রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলামিস্ট

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট