চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বৌদ্ধ উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমার আবেদন ও তাৎপর্য

ডক্টর প্রণব কুমার বড়–য়া

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১১ পূর্বাহ্ণ

মহামতি বুদ্ধ আজ থেকে আড়াই হাজারেরও কিছু আগে নেপালের লুম্বিনী কাননে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন কপিলাবস্তুর রাজকুমার। সিংহাসন, রাজ্য, প্রজা, মাতাপিতা ও স্ত্রী-পুত্রের মায়া ত্যাগ করে তিনি ২৯ বছর বয়সে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় সংসার ত্যাগ করেন দুঃখমুক্তির অন্বেষায়। দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর তপস্যার পর শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় ভারতের বিহার রাজ্যের গয়ার সন্নিকটে উরুবেলা নামক গ্রামে তিনি দুর্লভ মহাজ্ঞান লাভ করেন। গৌতম হলেন বুদ্ধ বা মহাজ্ঞানী। গৌতম তার নাম। বুদ্ধ লাভের পর তিনি গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিত হন। তিনি যে ধর্ম প্রচার করেন তার নাম বৌদ্ধধর্ম। বুদ্ধত্ব লাভের তিনমাস পর ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসীর সন্নিকটে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় তিনি তার নবলব্ধ জ্ঞান প্রচার করেন। গৌতম বুদ্ধ ৪৫ বছর ধর্মপ্রচারের পর ৮০ বছর বয়সে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় ভারতের উত্তর প্রদেশের কুশীনগরে মহাপ্রয়ান করেন- বৌদ্দিক ভাষায় তাকে বলে মহাপরিনির্বান।

গৌতমবুদ্ধের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল ভিক্ষুসংঘ প্রতিষ্ঠা – যার মাধ্যমে তার ধর্ম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ভিক্ষুদের জন্য নিয়মনীতি প্রবর্তন করেন। প্রবারণা পূর্ণিমা হলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একটি অবশ্যই প্রতিপালনীয় কর্ম। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রতিবছর বর্ষাব্রত পালন করেন আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশি^নী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনমাসব্যাপী সময়ে। এই তিনমাস বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নিজেদের বিহারে অবস্থান করে ধ্যানচর্চা করেন, জ্ঞানের অনুশীলন করেন- এই সময় ভিক্ষুরা নিজস্ব বিহার ছাড়া অন্যত্র রাত্রিযাপন করতে পারেন না- কোথায় ভক্তদের আহ্বানে বা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও সূর্যাস্তের পর স্ব স্ব বৌদ্ধ বিহারে ফিরে আসেন। বর্ষাব্রত পালনকালে ভিক্ষুদের মধ্যে ভুল ভ্রান্তি হতে পারে। একসংগে থাকলে এটা হওয়া অস্বাভাবিক নহে। সেজন্য আশি^নী পূর্ণিমায় ভিক্ষুদের প্রবারণা করতে হয়।

প্রবারণা হলো আত্মসমর্পণ ও আত্মশুদ্ধির অনুষ্ঠান। কনিষ্ঠ ভিক্ষু বয়োজেষ্ঠ্য ভিক্ষুর সামনে উপস্থিত হয়ে যদি কোন দোষ হয়

ত্রুটি হয় তা স্বীকার করে এবং প্রতিবিধানের জন্য নির্দেশনা চায়। এই স্বীকার করাটা হলো আত্মসমর্পণ। বয়োজেষ্ঠ্য ভিক্ষু অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তা অপনোদনের জন্য নির্দেশ দেন। এতে ভিক্ষু আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায়- সেজন্য এটা হলো আত্মসমর্পণ এবং আত্মশুদ্ধি অনুষ্ঠান। কোন ভিক্ষু জ্ঞানতঃ কোন দোষ না করলেও বলেন প্রভু, বর্ষাব্রত পালনকালে যদি আমার কোন দোষ আপনার নজরে আসে তা বলুন এবং তা অপনোদনের সুযোগ দেন। ঠিক তেমনি জেষ্ঠ্য ভিক্ষুও তার পরবর্তী ভিক্ষুকে অনুরূপ বলেন। মানুষ মাত্রেরই ভুল হতে পারে গোচরে অথবা অগোচরে। কিন্তু সে ভুলের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা এবং ভুল স্বীকার করে শুদ্ধ হওয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের এই যে নিয়ম তা মাত্রই প্রশংসিত হয়েছে।

এই থেকে আমাদের শিক্ষা হলো-মানুষের পারিবারিক জীবনে, চাকুরী জীবনে, ব্যবসায় বা অন্য কোন কারণে ভুল হতে পারে- এই ভুল নিয়ে যে দিন কাটায় কিন্তু অন্যকে তা বলে না, গোপন করে, এতে তার মনের জ¦ালা বেড়ে যায়, সে অস্বস্তিতে থাকে। যদি দোষী ব্যক্তি নিজের ভুলকে স্বীকার করে তা সংশোধনের প্রচেষ্টা চালায় তখন সে পরম শান্তি লাভ করতে পারে। আবার দেখি মানুষ ভুলকে বা অন্যায়কে বুকে ধারণ করে থাকলেও ঐ ভুল তাকে বার বার শুদ্ধ করার আবেদন জানায়। পিতা-পুত্রের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি ভুল হয় কেহ দোষ করে, তখন তা স্বীকার করাকে পরাজয় মনে করে। অথচ এই ভুলের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সারাজীবন মনোবেদনায় দগ্ধ হয়। সেজন্য আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির এই আহ্বান প্রবারণা পূর্ণিমায় নিয়ে আসে তা শুধুমাত্র সংসারত্যাগী ভিক্ষুদের জন্য নহে তা সকলের জন্যও কল্যাণকর। পৃথিবীতে এরকম মানুষও আছে যারা অপরকে দুঃখ দিলে, অন্যায় অপবাদ দিলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ডেকে এনে স্বীকার করেন – যদি অপনোদন হয় তবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর বিশ^াস বেড়ে যায়। আবার দেখা যায়, অপরকে অপবাদ দিয়ে তাকে ডেকে অথবা তার কাছে গিয়ে বলে- তোমাকে আমার অপবাদ দেয়া ঠিক হয়নি-তুমি আশা করি বিষয়টি ভুলে যাবে। এতে প্রতিপক্ষ চিরকাল আক্রমণকারীর প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোপন করার কিছু থাকা উচিত নয়, অথচ হয় স্বামী নয়তো বা স্ত্রীর নিজের দোষ বা অন্যায় গোপন করে যদি কোন সময় তা ধরা পড়ে তবে পরিবারে অশান্তি নেমে আসে, আর যদি অপনোদন করে তবে সুখের সাগরে দাম্পত্য জীবনে ভেসে যায়।

প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অনুষ্ঠান হলেও এতে বৌদ্ধরাও অংশ নিয়ে থাকে পূর্ণিমা ঘিরে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বৌদ্ধ দায়ক-দায়িকারা ভিক্ষুদের বর্ষাব্রতের সময় তিনমাসব্যাপী প্রতি মাসের অষ্টমী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে উপোসথ গ্রহণ করে। উপোসথ হলো অষ্টশীল পালন করা। বৌদ্ধেরা প্রতি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাধারণত পঞ্চশীল গ্রহণ করে – অষ্টশীল বিশেষ অনুষ্ঠানে এবং বিশেষ সময়ে গ্রহণ করে। প্রবারণা পূর্ণিমায় বিহার সজ্জিত করা হয়- মূর্তিগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়। এটাকে বৌদ্ধেরা স্থানীয় ভাষায় বড় ছাদাং বলে। ছাদাং বার্মিজ শব্দ, অর্থ উপোসথ- বড় ছাদাং হলো বড় উপোসথ দিবস। এটা বৌদ্ধদের দ্বিতীয় বড় উৎসব। প্রধান উৎসব হলো বুদ্ধপূর্ণিমা।

প্রবারণা পূর্ণিমার সামাজিক দিক হলো – এদিন বৌদ্ধেরা নতুন জামা কাপড় পড়ে, ¯œাত হয়ে সকালে বৌদ্ধ বিহারে যায়। সাথে নিয়ে যায় বুদ্ধপূজার সামগ্রী এবং ভিক্ষুসংঘের জন্য আহার্যবস্তু। এদিন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই সকাল-বিকাল বিহারে সমবেত হয়। সকালে বুদ্ধপূজা করে-পঞ্চশীল গ্রহণ করে এবং ভিক্ষুদের পিন্ডদান করে অর্থাৎ আহার্য প্রদান করে। যারা অষ্টশীল নেয়- তারা বিহারে বিশ্রাম নেয় এবং ধ্যানচর্চা করে। বিকেলে ধর্মসভায় যোগদান করে, সন্ধ্যায় প্রদীপ পূজা করে এবং শীল গ্রহণ করে- সন্ধ্যার পর অকাশে ফানুস উড়ায়। সে এক জমজমাট অনুষ্ঠান, দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় বিহার মুখরিত হয়। বিহারের পাশে অনির্ধারিত মেলা বসে যায়। প্রতি বাড়ীতে ভাল রান্না হয়-পায়েস রান্না হয়। এগুলি অতিথি অভ্যাগতদের পরিবেশন করে। ফানুস উড়ানোর পর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ গ্রামগুলিতে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।

ফানুস উড়ানোর বিশেষত্ব হল, গৌতম গৃহত্যাগ করার পর ঘোড়ায় চড়ে সারথি ছন্দককে নিয়ে অনোমা নদীর তীরে আসে। তারপর রাজআভরন পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসীর কাপড় গ্রহণ করে। তিনি মাথার তাজটি পুত্র রাহূলকে এবং পাদুকাকে পত্নী গোপাদেবীকে দেয়ার জন্য ছন্দকে দিয়ে বিদায় করে। ছন্দ কপিলাবস্তুতে ফিরে আসে। তার বিদায়ের পর গৌতম মাথার চুল কেটে বাম হাতে নিয়ে উর্দ্ধে উত্তোলন করে অধিষ্টান করেন এবং বলেন- যদি আমি আমার সন্ন্যাস যাত্রায় সিদ্ধিলাভ করতে সমর্থ হই, যদি আমি আমার অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছুতে সমর্থ হই, তবে এই মাথার চুল আকাশের দিকে ছেড়ে দিলাম। ঐ পবিত্র কেশরাশি নিচে না পড়ে উর্দ্ধে উঠে যায় এবং আকাশে মিলিয়ে যাবে। বৌদ্ধেরা বিশ^াস করে, স্বর্গের দেবতা ইন্দ্র ঐ চুল গ্রহণ করে আকাশে চুড়ামনি চৈত্য প্রার্থনা করে পূজা-বন্দনা করতে থাকে। ঐ কেশরাশি এখনো আকাশে ভাসমান আছে। এই কেশরাশিকে বন্দনা জানানোর জন্য প্রতি বছর প্রবারণা পূর্ণিমায় আকাশে ফানুস উড়ানো হয়। চীনাকাগজে তৈরি ফানুস উড়ানোর দৃশ্যটি দেখার জন্য প্রতি বিহারে বহু নর-নারীর সমাবেশ হয়। তখন বাজা বাদ্য হয়, কীর্তন হয় এবং মন্ত্র উচ্চারিত হয়। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। ফানুসগুলো বিভিন্ন সাইজের হয়। ফানুস তৈরির জন্য সপ্তাহখানেক আগে থেকে বিহারে বিহারে সমবেত হয় প্রস্তুতকারীরা। বাড়ীতেও ফানুস তৈরি হয়।

প্রবারণা পূর্ণিমার দিন ছোটরা বড়দের প্রণাম করে, বড়রা ছোটদের আশীর্বাদ করে, দূর নিকট হয়, পর আপন হয়, এ যেন দূরকে করিলে নিকট বন্ধু পরকে করিলে ভাই। এই যে পারস্পরিক মিলন শুভেচ্ছা নিবেদন, শ্রদ্ধা নিবেদন, খাওয়া দাওয়া এটা অনুশীলনের অনুসংগ হয়ে উদ্ভাসিত হয়। এতে করে সামাজিক মিলন, ঐক্য ও সংহতি বর্দ্ধিত হয়। প্রবারণার পরদিন থেকে এক মাস ব্যাপী সময়ের মধ্যে প্রতি বৌদ্ধ বিহার শুভ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়। প্রবারণার আবেদন সুদূরপ্রসারী ধর্মীয় আবরণের মধ্যে সামাজিক ঐক্য ও মিলনের মহতী প্রেরণা।

আজ প্রবারণা পূর্ণিমা, বাংলাদেশের তিন হাজার বৌদ্ধ বিহারে এই পূর্ণিমা পালিত হচ্ছে। বৌদ্ধ গ্রামগুলি ফানুসের কারণে রাতে যেন তারার মেলায় পরিণত হয়। রাজধানী ঢাকায় সবুজবাগস্থ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার, বাড্ডার আন্তর্জাতিক বিহার, অদূরে পার্বত্য বৌদ্ধদের শাক্যমুনি বিহার (মীরপুর), চট্টগ্রামে নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার, কাতালগঞ্জস্থ নবপ-িত বিহার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান শহরের কেন্দ্রীয় বিহার, রামু সীমা বিহার, উখিয়ার পাতাবাড়ী বৌদ্ধ বিহার, রাউজানের সুদর্শন বিহার, মহামুনি বিহার, রাঙ্গুনিয়ার ধর্ম চক্র বিহার, সৈয়দ বাড়ী, সার্বজনীন বিহার, পদুয়া, পটিয়া, উনাইনপুর’রা লঙ্কারাম বিহার সহ দেশের সর্বত্র এই উৎসব হচ্ছে। অধিকন্তু ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে এই উৎসব পালিত হচ্ছে।
এই পবিত্র দিনে আমাদের কামনা হলো, বহু জনহিত ও সুখের জন্য আত্মনিবেদিত হওয়া। বুদ্ধ বলেছেন- সকল প্রকার পাপ কর্ম থেকে বিরত থাকবে কুশল কর্ম (পূণ্যকর্ম) সম্পাদন করা এবং স¦ীয় চিত্তকে সমহিত রাখবে। তিনি বলেছেন আত্মদীপ হতে নিজের মধ্যে যে আলো আছে তাকে বিকশিত করতে। আজকে বৌদ্ধেরা দেশের কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করার শপথ নেবে। বৌদ্ধ ধর্মে জাতিভেদ নাই, সকল মানুষ সমান, মানুষ কর্মের দ্বারাই শ্রেষ্ঠ হয়। তিনি বলেছেন, সংগ্রামে সহ¯্র মানুষকে জয় করার চেয়ে, আত্মজয়ই শ্রেষ্ঠ জয়। প্রবারণা আলোকে নিজেদের সৎ করব, আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির জন্য সচেষ্ট থাকব, এই হোক প্রবারণা পূর্ণিমার অংগীকার।

প্রবারণা পূর্ণিমার আর একটি সামাজিক ও মানবিক দিকও আছে। সেটা হলো প্রবারণা শব্দের অর্থ নিয়ে। প্রবারণা শব্দের অর্থ হল প্রকৃষ্টরূপে বারণ এবং প্রকৃষ্টরূপ বরণ। এর ভেতরে একটি মূল্যবান আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষের জন্য যে সমস্ত জিনিষ বারণ আছে অর্থাৎ অশুভ, অন্যায় ও পাপকর্মকে বারণ করতে হবে অর্থাৎ গ্রহণ করা যাবে না তথা বর্জন করতে হবে। যা মানবজীবনের জন্য, সমাজের জন্য, জাতির জন্য অকল্যাণকর তা বর্জন করতে হবে। সমাজে দেখা যায় হিংসা, সন্ত্রাস, মাদকতা জীবনকে বিষময় করে তুলেছে। এগুলি কুশল কর্ম নহে, অতএব আচরণ করা বারণ। অন্যদিকে যেগুলি বরণ বা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, যা শোভন, কল্যাণকর, যা পূণ্যময় কাজ, যাতে মানুষের মংগল হয়-চরিত্র গঠন হয়, মানুষ মৈত্রীপরায়ন হয়, শীলবান হয়, সে সমস্ত বিষয়গুলি গ্রহণ করে আচরণ করতে হবে। অতএব অন্যায় ও মিথ্যাকে বর্জন করে, সন্ত্রাস ও মাদককে না বলে, সত্য, সুন্দর, মৈত্রীময় দিকগুলি, পূণ্যময় কাজগুলি বরণ করতে হবে অর্থাৎ গ্রহণ করতে হবে। অতএব দেখা যায় প্রবারণার সামাজিক, মানবিক দিকটাও মূল্যবান।

প্রবারণার পর ভিক্ষুরা একমাসব্যাপী কঠিনচীবর দান অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য গ্রামে গ্রামে, নগরে বন্দরে ধর্মীয় সফরে যায়। এতে মৈত্রীর চর্চা হয়- চরিত্র গঠনের দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়- তাই গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- হে ভিক্ষুগণ, তোমরা মানুষের হিত ও কল্যাণের দিকে দিকে বিচরণ কর। সেই ধর্ম প্রচার কর যার আদিতে মধ্যে এবং অন্তে কল্যাণ। অর্থাৎ মানবকল্যাণে তোমাদের নিজেদের নিয়োজিত কর। সেজন্য প্রবারণার ধর্মীয়, সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য অপরিসীম। আজ প্রবারণা পূর্ণিমায় আমরা অসুন্দরকে বর্জন করে সুন্দরকে বরণ করব এবং মহতীব্রতে নিজেদের নিয়োজিত করব। যা মানবের মংগল, সমাজের মংগল, জাতির মংগল, দেশের মংগল তা গ্রহণ করে – মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও বাংলাদেশে প্রগতি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের নিয়োজিত করব।
জগতের সকল প্রাণি সুখী হউক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট