চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মাদক নির্মূল করুন, অপরাধ কমে যাবে

জুবায়ের আহমেদ

১৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১১ পূর্বাহ্ণ

বহু অপরাধের মূলেই রয়েছে মাদকের প্রভাব। একজন মানুষ মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়, অবরুদ্ধ হয়ে যায় বিবেক, যার ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তির দ্বারা যেকোন ধরনের অপরাধ মুহূর্তের মধ্যেই সংঘটিত হয়ে যায় কোন অনুশোচনা ছাড়াই। মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে মানবিকবোধ নিস্ক্রীয় হয়ে যাওয়ার কারণে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে সুবিধাবাধীরা। সম্প্রতি বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীরাও মাদকাসক্ত ছিলেন এবং মাদকের নেশায় আসক্ত থাকার মুহুর্তেই বর্বরোচিত আঘাতের মাধ্যমে আবরারকে মেরেছেন। এর আগে বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীরাও মাদকাসক্ত ছিলেন মর্মে জানা গেছে। শুধুমাত্র হত্যাকান্ডই নয়, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাইসহ বহু অপরাধের মূলে এই মাদক।

মাদকের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে, তরুণ-তরুণীরা মাদকে বেশি আসক্ত হলেও শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই মরণঘাতি মাদক গ্রহণ করছে। সরকারী, বেসরকারী উদ্যোগসহ সামাজিক ভাবে মাদকের ভয়াবহতা এবং পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করলেও কমছে না মাদকসেবীর সংখ্যা, কমছে না মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা। মাদক ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ে অধিক সম্পদের মালিক হওয়ার নেশায় সারা দেশে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে।

মাদকের ভয়াবহতা ও পরিণতির কথা বুঝতে ও জানতে পারার বহু কিশোর-কিশোরী বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা মাদক বিক্রেতাদের ফাঁদে পা দিয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের প্রভাবে একজন মানুষ সহজেই হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়ে। কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, কোন কাজ করা উচিত, কোন কাজ করা ঠিক নয়, সে বিষয়ে জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে মাদকসেবীরা, যার ফলে সমাজে নানা প্রকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, পারিবারিক কলহ তৈরী হয়, চিহ্নিত অপরাধীরা মাদকসেবীদের ব্যবহার করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করাসহ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে সহজেই জড়িয়ে পড়ে মাদকসেবীরা। পাশাপাশি মাদকদ্রব্য কেনার জন্য পিতা-মাতা এবং পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে টাকা চেয়ে না পেলে, চুরি করা এবং যেভাবেই হোক মাদকের টাকা জোগাড় করতেই হবে, এই ভাবনা থেকে পাড়াপ্রতিবেশীও রেহায় পায় না মাদকাসক্ত থেকে। এমনকি মাদকের নেশায় মত্ত হয়ে এবং মাদকের টাকার জন্য মানুষ খুন করা এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবারের সদস্যদের মারধর করা সহ নানা প্রকার অপরাধজনক ঘটনাও পত্রিকার পাতা উল্টালে পাওয়া যায়।

মনে রাখতে হবে অসৎসঙ্গের কারণে এবং পরিবারের অবহেলা কিংবা অধিক আস্কারা পেয়েই মাদক সেবনে আগ্রহী হয় তরুণ-তরুণীরা। পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলে-মেয়েরা কার মেলামেশা করছে সেদিকে খেয়াল রাখা পিতা মাতাসহ পরিবারের বড় সদস্যদের দায়িত্ব। বহু অপরাধের মূলে মাদক, মাদকাসক্তরা যেকোন অপরাধ সংঘটিত করতে পারে অনাসায়েই, যার বহু প্রমাণ এখন প্রকাশ্য। মাদকসেবীদের বিবেকহীনতাকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগীরা তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। নিজেরা সাধু সেজে থেকে মাদকসেবীদের দিয়ে সকল অপরাধজনক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। মাদকাসক্ত হয়েই খুন ও ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করছে মানুষ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। ইতিপূর্বে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা হয়েছে। বর্তমানে জুয়া, ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে সফল অভিযান পরিচালনা করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। এবার মাদক নির্মূলের জন্যই অভিযান জরুরী।

সকল অপরাধের মূলে মাদক, এ সত্যটিকে সামনে রেখে মাদক ব্যবসায়ীদের মতো মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাদকাসক্তদের প্রয়োজনে আইনের আওতায় এনে এবং মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসার ব্যবস্থা করার কোন বিকল্প নেই। তাহলেই কমে যাবে খুন-ধর্ষণ, সন্ত্রাসী কমকান্ড। মাদকের কারণে হারাবে না কোন তাজা প্রাণ, মাদকাসক্ত হয়ে নষ্ট হবে না কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জীবন। দেশব্যাপী মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন দেশ ও জাতির স্বার্থে সময়ের দাবী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট