চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্তন ক্যান্সার ও জনসচেতনতা

ডা. নাহিদা খানম সিমু

১২ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

অক্টোবর মাস হল স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস। প্রতি বছর সারা বিশ্বে গোলাপী রিবন ধারনের মাধ্যমে এই সচেতনতা কার্যক্রমে জড়িত হচ্ছেন হাজার হাজার মহিলা ও পুরুষ।

জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিউটের সাম্প্রতিক তথ্য মতে, বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মরণব্যাধি ক্যান্সার হল স্তন ক্যান্সার। বাংলাদেশের মহিলাদের মাঝে ১৫-৪৪ বছর বয়সের মধ্যে এই ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান মতে ২০১৫ সালে শুধুমাত্র তাদের প্রতিষ্ঠানে ১৪,৮১৬ জন স্তন ক্যান্সার রোগী সনাক্ত হয় তার মধ্যে ৭১৯২ জন জন মৃত্যু বরণ করেন ২০১৯ সালে। সারাদেশের কথা বিবেচনায় আনলে মহিলা আক্রান্ত ২২.৫ লক্ষ।
এই সংখ্যা আরো বেশী হতে পারে। স্তন ক্যান্সার আক্রান্তদের অনেকে দেশে বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন, গ্রামে-গঞ্জে অনেক মহিলা রোগের শেষ পর্যায়ে এসে না নিয়ে নীরবে মারা যাচ্ছেন, যার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই।

স্তন ক্যান্সার হল এক ভয়ংকর নিরব ঘাতক। অধিকাংশ মহিলারা সচেতনতার অভাবে বুঝতে পারেন না তাদের স্তনে ঘটে যাওয়া পরিবরর্তনটি তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সচেতনতার অভাব, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিকুলতা, লজ্জা, সংকোচ, চিকিৎসার অপ্রতুলতা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা এই সবকিছুই আজ স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় বাঁধা হয়ে দাঁিড়য়েছে।

স্তন ক্যান্সারের কারণগুলো ও লক্ষণসমূহ যদি মহিলারা জানাতে পারেন তাহলে মহিলারা নিজে ও পরিবারের অন্যদের সচেতন করতে পারবেন। একজন নারী যত দ্রুত এই রোগ সনাক্ত করতে পারবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তার তত বেশি বেড়ে যায়। মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদেরও এই সচেতনতায় প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, একজন পুরুষের সাথে তার মা, স্ত্রী, বোন ও মেয়ে এই ৪ জন জড়িত।

আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থার কারণে পুরুষদের অংশগ্রহণ ও সম্মতি ব্যতিত মহিলারা সচেতন হলেও এগিয়ে আসতে পারে না। লজ্জা, সংকোচ কাটিয়ে মহিলারা উপায়ান্তর না দেখে যখন ঘরের পুরুষদের জানায় তখন অনেক দেরী হয়ে যায়- আর ঐ অবস্থায় চিকিৎসার সুযোগও সীমিত হয়ে পড়ে। এই ৪ জনের মধ্যে ১ জনও যদি স্তন ক্যান্সারের আক্রান্ত হয়, তখন কিন্তু এদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করার দায়িত্বও কিন্তু পুরুষের কাঁদেই এসে পড়ে। সমীক্ষায় দেখা গেছে পুরুষও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। তাই এই অবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য পুরুষদেরও সচেতন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। মহিলাদের কিছু ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রী সমঝোতা বজায় রাখতে হবে। কারণ “জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি” স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী। সেক্ষেত্রে এই বড়ি গ্রহণে ডাক্তার পরামর্শ দিতে হবে।

মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া এই মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিতে হবে ক্যান্সার যুদ্ধে ওরা একা নয়। অক্টোবর মাসে পৃথিবীতে চরহশ চধষষু এই কার্যক্রমে যখন এগিয়ে চলছে তখন আমাদের বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। তাই, এই চট্টগ্রাম থেকে গত বছর আক্টোবর মাসে শুরু হলো চরহশ চধষষু বা “গোলাপী মিছিল” নামে এই সচেনতা কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের উদ্যোক্তা সংস্থা হলো “মহিলা ক্যান্সার সচেনতা সোসাইটি”। এই অলাভজনক সোসাইটির সাথে কাজ করে যাচ্ছে সমাজের সর্বস্তরের নারী, পুরুষ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও গৃহিনীসহ সকলে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিজ উদ্যোগে, গত এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কেট, বিউটি পার্লার, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে সভা ও সচেতনতা লিফলেট বিলি করে আসছে। স্তন ক্যান্সার রোগ নির্ণয় ও এর চিকিৎসার জন্য যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ক্যান্সার রোগ নির্ণয় ও এর চিকিৎসা ব্যবস্থা একটি জটিল, সময় সাপেক্ষে ও ব্যয়বহুল ব্যাপার, যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধান অপরিহার্য।

সুখের খবর হল এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ক্যান্সার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা এগিয়ে আসছে। মনে রাখতে হবে চিকিৎসকের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততার মধ্যেই কিন্তু সচেনতা কার্যক্রমের সার্বিক সফলতা নিহিত রয়েছে।

ি ডা. নাহিদা খানম সিমু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট