চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাজে লাগাতে হবে পর্যটন খাতের অমিত সম্ভাবনাকে

১১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

দিন দিন বাড়ছে পর্যটন-অর্থনীতির গুরুত্ব। বর্তমান সময়ে পর্যটনশিল্প যে কোনো দেশের জন্য খুবই লাভজনক শিল্প হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশই অনুধাবন করছে, সুচারু কর্মসূচিতে এগুলে দেশের অর্থনীতিতে পর্যটনশিল্প ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। মালয়েশিয়া, দুবাইসহ পৃথিবীর বহু দেশেই পর্যটনশিল্প জাতীয় অর্থনীতির প্রধান সহায়ক খাত হিসেবে কাজ করছে। পর্যটকদের বিমোহিত করার মতো বাংলাদেশেও আছে অনেক পর্যটনস্থান। কিন্তু সুচিন্তিত পদক্ষেপের অভাবে আমরা পর্যটনশিল্পকে কর্মসংস্থান ও জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান খাতে পরিণত করতে পারিনি এখনো। অথচ পর্যটনশিল্পের বিকাশে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ থাকলে পর্যটনখাতকে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ করা যেতো। তবে সে সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সুপরিকল্পনা, দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে দেশের পর্যটনশিল্প উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। সরকার অগ্রাধিকার খাত গণ্য করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ পর্যটকদের স্বর্গভূমি বিবেচিত হবে।

পর্যটন একটি শ্রমঘন শিল্প যা এবারের পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্যে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ভবিষ্যতের উন্নয়নে, কাজের সুযোগ পর্যটনে’। কর্মসংস্থান ও টেকসই উন্নয়নে পর্যটনকে কাজে লাগাতেই এবার এমন প্রতিপাদ্য গ্রহণ করা হয়। বিশ্বঅর্থনীতিতে ক্রমবর্ধিষ্ণু সেবাখাতগুলোর মধ্যে পর্যটন অন্যতম। কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। পর্যটনশিল্পের কাক্সিক্ষত উন্নয়নের মাধ্যমে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। সরকার ইতোমধ্যে পর্যটনকে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র করার লক্ষে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে সুচারু বাস্তবায়নের অভাবে কাক্সিক্ষত ফল আসছে না। পর্যটনব্যবসায়ীদের সংগঠন টোয়াব-এর হিসাব অনুযায়ী, বছরে ৫০ থেকে ৬০ লাখ লোক দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বেরিয়ে পরেন। বছরপাঁচেক আগেও যা ছিল ২৫ থেকে ৩০ লাখ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত ‘দ্য ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কমপিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯’ এ দেখা যাচ্ছে পর্যটনশিল্পে ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম। এর আগে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৫তম। সে হিসাবে বাংলাদেশ দুই বছরে এগিয়েছে পাঁচ ধাপ। পর্যটক আকর্ষণে একটি দেশ কতটা নিরাপদ, অবকাঠামো সুবিধা কেমন, বিমানবন্দর কতটা উন্নত, আবাসন ব্যবস্থার মান কেমন, বন্দরসুবিধা, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অবস্থান, এরকম ১৪টি সূচকের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। মূলত ব্যবসায় ও পর্যটনে নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তির প্রস্তুতি, বন্দর অবকাঠামোর উন্নতিতে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়েছে। বাকি সুযোগ-সুবিধার আরো উন্নতি করতে হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচ ধাপ উন্নতি হলেও বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে শুধু পাকিস্তানের ওপরে অবস্থান করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরের মান বৃদ্ধি করা, আবাসন ব্যবস্থার উন্নতি করাসহ ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির বিষয়গুলো পর্যটক আকর্ষণ উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে পর্যটন প্রতিযোগিতার সূচকে আরো উন্নতি হবে।

পর্যটন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণের মাধ্যমে সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, সভ্যতা, ঐতিহ্য ও জীবনবোধ সমৃদ্ধ হয়। বাংলাদেশ পর্যটনের অফুরান সম্ভাবনার একটি দেশ। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আমাদের আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, পুরাকীর্তিসহ অসংখ্য পর্যটন আকর্ষণ। বলতে গেলে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য হয়ে ওঠার সব উপাদানই রয়েছে বাংলাদেশের।

সুচিন্তিত পদক্ষেপ থাকলে সহজেই এদেশে পর্যটনখাত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমরা মনে করি, আর নির্লিপ্ত না থেকে পর্যটনখাতের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তৎপর হওয়া উচিত। বিশ্বময় একুশশতককে পর্যটনশিল্পের স্বর্ণসম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে পর্যটনকে জাতীয় আয়ের প্রধান খাত হিসেবে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশও সুচিন্তিত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে পারে। মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের শিক্ষিত যুবকদের একটি বড় অংশই বেকার। পর্যটনখাতের বিকাশ ঘটলে তাদের অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কারণ এই শিল্পের বিকাশের সাথে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের মাধ্যমে পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনয়নের পথও সুগম করে দেয় পর্যটনখাত। বিনোদনসহ অন্যান্য অনেক বিষয়ও এর সাথে সম্পৃক্ত। পর্যটনকে একটি সুস্থ বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলা গেলে তা জাতীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠবে। আমরা আশা করতে চাই, এবারের পর্যটনমৌসুমকে কেন্দ্র করে পর্যটনখাতকে দেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক খাত হিসেবে গড়ে তোলার সুচিন্তিত যাত্রা শুরু হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট