চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

শাহ্সুফি মমতাজ আলী জাহাঁগিরি

সোহেল মুহাম্মদ ফখরুদ-দীন

১১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

উপমহাদেশে তরিকায়ে জাহাঁগিরিয়ার একটি প্রভাব রয়েছে। এই তরিকায় ইসলাম ধর্মের সঠিক বাণী প্রচার প্রসারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সঠিক ও শুদ্ধ পথে পরিচালিত করছে। জাহাঁগিরিয়া তরিকার প্রধান পথপ্রদর্শক শেখুল আরেফিন হযরত মৌলানা শাহ্সুফি মুখলেছুর রহমান জাহাঁগিরি (রহ.)। তাঁর পরে এই তরিকাকে প্রসারে ভূমিকা রাখেন ফখরুল আরেফিন হযরত শাহ্সুফি শেখ আবদুল হাই জাহাঁগিরি (রহ.), হযরত শাহ্সুফি সৈয়্যদ মাওলানা আমজাদ আলী জাহাঁগিরি (রহ.), হযরত শাহ্সুফি মুফতি সৈয়্যদ মাওলানা মমতাজ আলী জাহাঁগিরি (রহ.), হযরত শাহ্সুফি মাওলানা মোহাম্মদ আলী জাহাঁগিরি মমতাজি (মু.জি.আ)সহ দেশবিদেশের অনেক জ্ঞানী ও গুণী তরিকতের খেলাফতপ্রাপ্ত বিজ্ঞ আলেম ও অলিগণ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, বার্মা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাহাঁগিরিয়া তরিকতের অনুসারী পীর মাশায়েখ, মুরিদ, অনুসারী রয়েছে। সুফিবাদ জীবনের শুদ্ধ পবিত্র ধর্মচর্চায় শাহ্সুফি মুফতি সৈয়্যদ মমতাজ আলী জাহাঁগিরিয়া (রহ.) এর অবদান অপরিসীম। পবিত্র ইসলামকে সঠিক পরিশুদ্ধ ও নিষ্ঠার সাথে পালনের অন্যতম মূলমন্ত্রই হচ্ছে সুফিবাদ। সুফিবাদ আরবী তাসাউফ থেকে এসেছে। তাসাউফের মূল বিষয় হলো- তাসফিয়াহ্ বা পরিচ্ছন্নতা।

শাহসুফি মমতাজ আলী জাহাঁগিরি (রহ.) ছিলেন মানুষ ও মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। তিনি আল্লাহ ও প্রিয় রাসূল (সা.) এর দেখানো পথেই মানুষকে শান্তির জন্য আহ্বান করেছেন সারাজীবন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানুষকে আহ্ববান করে ইহকাল ও পরকালের মুক্তির নির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর মতো আদর্শবান সুফিতাত্ত্বিক ও সুফিবাদ জ্ঞানসম্পন্ন বুজুর্গ বর্তমান সময়ে বিরল। তিনি ১৯১৩ সালে পটিয়া উপজেলায় (বর্তমান চন্দনাইশ) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন জগৎবিখ্যাত সুফি, কুতুবে আলম হযরত শাহসুফি আমজাদ আলী জাহাঁগিরি (রা.) এবং মাতা বেগম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। তাঁর পিতা হযরত শাহসূফী আমজাদ আলী জাহাঁগিরি (রহ.) ছিলেন স্বীয় প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম ও প্রখ্যাত কামেল বুজুর্গ। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তরিকা, তরিকায়ে জাহাঁগিরিয়ার সাতকানিয়া মির্জাখীল দরবারে জাহাঁগিরির সাজ্জাদানশীন গৌছে আলম বা খেতাবে আলমে, হযরত ফখরুল আরেফিন শেখ আবদুল হাই জাহাঁগীর শাহ (রহ.) এর মুরিদ এবং অন্যতম প্রধান খলিফা। ১৯৩৯ সালে তার ওফাতের পূর্ব পর্যন্ত তিনি দরবারে জাহাঁগিরিয়া পরিচালনা করেছিলেন। আরবী ভাষায় মমতাজ শব্দটির অর্থ মনোনীত বা নির্বাচিত। হযরত মমতাজ আলী (রহ.) প্রথমে কাঞ্চননগর শাহসুফি দরবার শরীফে নিজ গৃহে পিতার কাছে শিক্ষা শুরু করেন। বাড়ির প্রাথমিক শিক্ষা শেষে চট্টগ্রাম শহরের দারুল হাদিস নামক একটি মাদ্রাসায় সুফি আহসান উল্লাহ নামক নামজাদা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পড়ালেখা করেন। পড়ে সীতাকুন্ড আলীয়া মাদ্রাসা কয়েক বছর, অতপর সন্দ্বীপ জাহাঁগিরিয়া মাদ্রাসায় হযরত মাওলানা হাবীবুল্লাহ শাহ (রহ.) এর সংস্পর্শে লেখাপড়া করেন। তিনি কুরআন শরীফ, হাদিস শরীফ, তফসীর, ফিকাহ ও উসুলে ফিকাহ, ইলমে কালাম, ইলমে বালাগাত ও মানতিক বিষয়ে সনদ লাভ করেন। এরপর তিনি অতিরিক্ত বরকত লাভের উদ্দেশ্যে তৎকালীন সময়ে ভারতের প্রসিদ্ধ আলেম ও সুফি সাধক হযরত আল্লামা নঈম উদ্দিন মুর্দাবাদীর সান্নিধ্য লাভ করেন। তিনি মুর্দাবাদীর হাতে সিহাহ সিত্তার হাদিসগুলো যথাক্রমে- বোখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, নাসায়ী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ এবং তিরমিজী শরীফের ওপর বুৎপত্তি অর্জনের সনদ লাভ করেন।

এরপর বাংলাদেশে চলে আসেন। বাড়ীতে অবস্থানকালে একরাত্রে তিনি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে হযরত আল্লামা আজিজুল হক শেরে বাংলা (রহ.) এর নিকটে তাফসীরে জালালাইন শরীফের পাঠ গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হযরত আমজাদ আলী (রহ.) তাঁকে খেলাফত প্রদান করেন। এরপর থেকে তিনি জাহাঁগিরিয়া শাহসুফি দরবার শরীফের শান মান রক্ষা করে পবিত্র মুর্শিদের বাণী এবং কোরআন হাদিসের শিক্ষাই হাজার হাজার মুরিদকে ইহকাল ও পরকালের শিক্ষা দিয়ে আলোকিত জীবনের অধিকারী করে তোলেন। সমগ্র বাংলাদেশে শাহসুফি দরবার শরীফে চারশতাধিক খানাকা শরীফ রয়েছে। হযরত শাহসুফি মাওলানা মমতাজ আলী জাহাঁগিরি (রহ.) এর লিখিত একটি ঐতিহাসিক কিতাব রয়েছে। কিতাবটির নাম “মমতাজুল ফতওয়া”। মহান এই সাধক পুরুষ ২০১০ সালে মোতাবেক ১৪৩১ হিজরীর ১০ সফর মহান আল্লাহর তালায়ার সাথে মিলনের উদ্দেশ্যে পার্থিব জগৎ ত্যাগ করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট