চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০১৯

১০ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

‘আসুন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতন হই’ প্রতিপাদ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচিতে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস’। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি, সামাজিক-রাজনৈতিক নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বৈষম্য, যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া, লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে যথাযথ মূল্যায়ণ না হওয়া কিংবা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব কর্মপরিবেশ না থাকা প্রভৃতি কারণে দুশ্চিন্তা এবং বিষণœতা গ্রাস করছে মানুষকে। পরিণামে দেশে মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধহীন অসুস্থ সমাজ ও রাজনীতিই এর মূর কারণ। এ অবস্থা প্রতিরোধে সচেতনতা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

মানসিক রোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ অসংক্রামক ব্যাধি। আমাদের দেশে মানসিক রোগের কারণে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানসিক সমস্যার কারণে কর্মদক্ষতা হ্রাস পায় এবং সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হয়। সুস্থ্য ও শিক্ষিত জাতিই পারে দেশকে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির মহাসড়ক ধরে দ্রুত এগিয়ে নিতে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে সুস্থ্য ও শিক্ষিত জাতি গড়া সম্ভব নয়। মানসিকভাবে অসুস্থ কেউ পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে না। উল্টো বোঝা হয়ে থাকে। একজন মানসিক রোগীর কারণে একটা পরিবারও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে। কিন্তু বর্তমানে নগরায়ন, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, বংশগতি ও অন্যান্য শরীরবৃত্তিক এবং মনোসামাজিক কারণে মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশে। এই চিত্র উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা বিঘিœত করছে। তাই দেশকে কাক্সিক্ষত গতিতে এগিয়ে নিতে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৬ দশমিক ১ ভাগ লোক মানসিক রোগে আক্রান্ত। অন্যদিকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুকিশোরদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৪ ভাগই মানসিক রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এছাড়া এই বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩ দশমিক ৮ ভাগ মানসিক প্রতিবন্ধী, ২ ভাগ শিশু মৃগীরোগে আক্রান্ত এবং শূন্য দশমিক ৮ ভাগ শিশু মাদকাসক্ত। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৫ ভাগই বুঝতে পারেন না যে তারা মানসিক রোগী। বুঝতে পারলেও তারা মানসিক চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হন না। এর প্রধান কারণ অসচেতনতা, লজ্জা বা অনীহা। কারণ, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ মানসিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটা সংকোচের বলে মনে করেন। এমনকি তারা অন্যদের কাছে বলতে পর্যন্ত লজ্জা পান। অন্যদিকে দেশে মানসিক রোগীর বিপরীতে চিকিৎসকের সংখ্যা একবারেই অপ্রতুল। প্রতি এক লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসক একজনেরও কম। এমনকি এই খাতের চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয় স্বাস্থ্যবাজেটের শূন্য দশমিক ৪৪ শতংশ।

নিশ্চয়ই মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক রোগীদের চিকিৎসা, ঔষধ-পথ্য এবং অধিকারের এই চিত্র সুখকর নয়। এই চিত্রের ইতিবাচক

বদলে মনোযোগ দিতে হবে জাতির এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ এবং নীতি-নৈতিকতার চর্চার ক্ষেত্রকে অবাধ করতে হবে। বখাটেপনার মূলোৎপাটন করতে হবে। দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। সুস্থ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সুস্থ রাজনীতি চর্চা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশে সুচিন্তিত উদ্যোগ থাকতে হবে। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে যেমন সচেতন করতে হবে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রকে পালন করতে হবে জনকাক্সিক্ষত দায়িত্ব। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে শারীরিক ও মানসিক রোগের সুচিকিসা। এ জন্যে দরকার মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব আইন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দেশকে দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। দেশ এখন সারাবিশে^র কাছে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’। চলমান উন্নয়নকে টেকসই করতে মানসিক স্বাস্থ্যসহ সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার মাধ্যমে একটি সুস্থ্য জাতিম গড়ার বিকল্প নেই। মনে রাখা দরকার, স্বাস্থ্য একটি সমন্বিত বিষয় এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য অপরিহার্য। তাই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবার এবং সমাজের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট