চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়

অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ রতন কুমার নাথ

১০ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ

ম্যালি গন্যান্ট টিউমার এর নামই ক্যানসার। কিন্তু ঠিক কি কারণে ক্যানসার হয় তা শুধু হোমিও প্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্র কেন কোনও চিকিৎসা বিজ্ঞানই আজ পর্যন্ত বলতে পারেনি। তবে আমরা মনে করি ক্যানসার হওয়ার নেপথ্য কারণ ইরিটেশন। শরীরের কোনও একটা জায়গায় ক্রমাগত ইরিটেশন তৈরী হতে হতে সেখানে ক্যানসার হয়। যারা বলেছেন ক্যানসারের কারণ এক ধরনের ভাইরাস, তাঁরাও সেই ‘ইরিটেশন’ তত্ত্বকেও স্বীকার করেছেন। সেই ইরিটেশন তৈরী করছে ভাইরাস।

হোমিওপ্যাথিতে সব ধরনের ক্যানসারেরই চিকিৎসা আছে। কোনও চিকিৎসাশাস্ত্রই আজ পর্যন্ত ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময়ের প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি। তাই আমরাও দাবি করছিনা ক্যানসার সম্পূর্ণ সারিয়ে দেব। তাই ‘কিওর রেট’ দেওয়া সম্ভব নয়। রোগীর বেঁচে থাকার মেয়াদ খানিকটা বাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। এবং সেই জীবনকালটুকু যতটা সম্ভব যন্ত্রণাহীণভাবে কাটানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু সমসা হল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম পর্যায়ে কেউ হোমিপ্যোথিক ডাক্তারের কাছে আসেনা। বায়পসি করে ক্যানসার ধরা পড়ার পর রেডিওথেরাপি করাবে, অপারেশন করাবে। সব যখন ব্যর্থ হবে তখন এলোপ্যাথিক ডাক্তার বলবেন কেমোথেরাপি করতে। তখনই লোকে ভয় পেয়ে যায়। শরীরে টকসিন ঢোকাবার ভয়। বুঝতে পারে রোগে না মরলেও ঔষধে মারা পড়বে। তখন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তরের কাছে আসে। অনেকে আবার কেমোথেরাপি করেও ব্যর্থ হওয়ার পর আসে। রোগীর তখন শেষ অবস্থা। ঠিক এই অবস্থায় ক্যানসার আক্রান্তের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন হোমিওপ্যাথ। রোগের সঙ্গে লড়াইটা তখন কঠিন। তবু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক বহু রোগীকেই দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখে। কমিয়ে দেয় যন্ত্রণা। ক্যানসারের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথদের একমাত্র অস্ত্র নানা রকম ঔষুধ। কিন্তু এইসব ওষুধ সম্পর্কে কিছু বলতে ঘোর আপত্তি আছে। কারণ বললে চিকিৎসা বিভ্রাট ঘটতে পারে। আজকাল লোকে নিজের চিকিৎসা নিজেই করার চেষ্টা করছে। এমন কি ক্যানসারের চিকিৎসাও।

আমরা ঔষধের নাম বলে দিলাম আর লোকে সেগুলো বাজার থেকে কিনে খেতে লাগল, এটা ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়। কারণ হোমিওপ্যাথিতে একই রোগের ঔষুধ এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। একজন শীতকাতুরে লোকের জন্য একরকম ঔষুধ, একজন গরমকাতুরে লোকের জন অন্যরকম। যে চিনি খেতে ভালবাসে তার জন্য এক ঔষুধ, যে বেশী লবণ খায় তার জন্য অন্য ঔষুধ। একজন মোটা মানুষকে যে ঔষুধ দেব সেই ঔষুধ একজন হালকা পাতলা মানুষকে দেব না। তাছাড়া রোগের লোকেশন, সেন্সেশন’ এর ভিন্নতারও উপরও ঔষুধ ভিন্ন হয়। দেখতে হবে যন্ত্রণাটি কোথায় ছড়াচ্ছে। সেই অনুযায়ীও ঔষুধ দিতে হয়। তাছাড়া ক্যানসারের জ¦ালা যদি ঠা-া দিলে কমে তাহলে একরকম ঔষুধ, যদি গরম দিলে কমে তবে অন্যরকম ঔষুধ। অর্থাৎ হোমিওপ্যাথিতে সবার জন্য এক ফর্মুলা নয়। এর মধ্যে থেকেই আমরা রোগী ভেদে আলাদা আলাদা ঔষুধ দিই। যেমন রেক্টাল ক্যানসারে ভাল কাজ করে ‘রুটা’। স্তনের ক্যানসারে খুব ভাল কাজ করে ফাইটোলক্কা কিংবা এস্টেরিয়াস রুবেন্স। এছাড়া স্তন ক্যানসারের জন্য আছে ‘ব্লোমিয়াম’, কোনিয়াম ম্যাকুলেটাম ইত্যাদি। পেটে ক্যানসার হলে সম্পূর্ণ আলাদা ঔষুধ। আবার পেটের জায়গা ভেদেও ঔষুধ ভিন্ন ভিন্ন।

যেমন পাকস্থলীর ক্যানসারের জন্য ‘কন্ডুরাঙ্গো’, ইসোফেগাসের ক্যানসারের জন্য ‘থুজা’, এলুমিনা। স্পিনয়েড বোন্ অর্থাৎ নাকের হাড়ে ক্যানসার হলে কাজে লাগে সিমফাইটাম’। দাঁতের গোড়ায় ক্যানসার হলে ‘হেকলালাভা’ লক্ষণ ভেদে ফ্লুরিক এসিড ভাল কাজ করে। মাথার ক্যানসারে ‘থুজা’, জেলসিমিয়াম ভাল ফল দেয়। রক্তের নানা রকম ক্যানসারে কাজে লাগে ‘বেঞ্জিনাম’। রক্তের ক্যানসার যদি বংশগত হয়, কানসিনোসিন খুব কাজ দেয়। এই ঔষুধটা ক্যানসার কোষ থেকেই তৈরী হয়। মনে রাখতে হবে চিকিসককে দেখিয়ে তার পরামর্শ মতোই ঔষুধ খেতে হবে। হোমিপ্যোথি কখনও এক কোট সবাইকে পরায় না।

ি অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ, সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসিন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট