চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বুয়েট ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন

৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

ভিন্ন মতের কারণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যার বিষয়টি খুবই উদ্বেগকর। এই হত্যাকা- দেশের ভাবমূর্তিই শুধু ক্ষুণœ করেনি, আইনের শাসনের প্রতিও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে সুশাসনের ভিতকে মজবুত করতে যেখানে দুর্বিনীতদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন এবং চলমান রেখেছেন, সেখানে কতিপয় ছাত্রলীগ নামধারী ভিন্ন মত পোষণের কারণে একজন শিক্ষার্থীকে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় হত্যা করবে, তা মেনে নেয়া যায় না। একটি সভ্য দেশে তা কল্পনাতীত। দিনকয়েক ধরে শুদ্ধি অভিযানে সরকারের প্রতি যে জনআস্থা তৈরি হয়েছে কিছু ছাত্রলীগ নামধারীর এমন পশুত্বমূলক কর্মকা-ে তাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এ হত্যাকা- জনগণকে ভুল বার্তা দেবে, সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যা করা হয় মূলত ফেসবুকে দেয়া কয়েকটি স্ট্যাটাসের কারণেই। সহপাঠীদের অভিযোগ, আবরারের কয়েকটি স্ট্যাটাসের কারণে ক্ষুব্ধ হয় বড় ভাইয়েরা। আর সেকারণেই রোববার সাড়ে ৭ টার দিকে কয়েকজন বড়ভাই আবরারকে ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নেয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদসহ পাশবিক নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে আবরার মারা যায়। বড় ভাইয়েরা প্রায়শই এভাবে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে নিয়ে গিয়ে মারধোর করার অভিযোগও করেছেন তারা। বুয়েটের মতো বিশ^খ্যাত উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘৃণিত কা- দীর্ঘদিন ধরে কীভাবে ঘটে তা বোধগম্য নয়। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আবরার হত্যাকা-কে অন্যখাতে প্রবাহিত করার জন্যে তাকে ‘শিবিরের ক্যাডার’ বানানোর চেষ্টাও হয়েছে। উল্লেখ্য, আবরার সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক কয়েকটি চুক্তির সমালোচনা করেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ সমালোচনার কারণেই পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে আবরার ফাহাদকে। আবার যারা তাঁকে মেরেছেন তারা বাইরের কেউ নন, তাঁরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা-সহপাঠী। আবার তাঁরা সবাই ছাত্রলীগ নামধারী। কতটুকু অমানুষ হলে একজন সহপাঠীকে এভাবে হত্যা করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ভিন্নমত পোষণ কিংবা ‘শিবির’ করার কারণে কাউকে হত্যা করার অধিকার কি কারো আছে? কেউ অপরাধ করলে আইন আছে, আদালত আছে। আইন-আদালতই সবকিছু যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা করবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তথাকথিত ছাত্রলীগ নামধারী বড়ভাইয়েরা তা না করে মতের ভিন্নতার কারণে একজন সম্ভাবনাময় মেধাবী ছাত্রকে চরম নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে হত্যা করলো। এমন অপরাধ কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল। সরকারের উচিত হবে, এমন কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ নেয়া, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা; যাতে ভবিষ্যতে অন্য কেউ এমন পৈশাচিক কা- আর না করতে পারে। মনে রাখা দরকার, এমন পাষ-রা জনশত্রুই নয় শুধু, দলেরও শত্রু। এরা সুবিধাসন্ধানী, এদের দ্বারাই দল কলঙ্কিত হয়, জন-আস্থা হারায়। প্রয়োজনে এরা দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। তাই শুদ্ধি অভিযানে এদেরই প্রথম ও প্রধান টার্গেট করা উচিত।
উল্লেখ্য, বাধাহীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। এই অধিকারের চর্চা গণতন্ত্র ও সুশাসনকে মজবুত করে। স্বৈরাচারের পথ রুদ্ধ করে, জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ পরিচালনার পথকে মসৃণ করে। উন্নয়নকে টেকসই করে। ফলে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংবিধানে স্বীকৃতি দিয়ে তা রক্ষার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবসময় এই নাগরিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তা রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু লোকের কারণে মত প্রকাশের এই সাংবিধানিক অধিকারের দলন হচ্ছে নানাভাবে, নানা সময়ে। ভিন্ন মত পোষণের কারণে হত্যার পথও বেছে নেয়া হচ্ছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ আবরার হত্যাকা-। ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে এমন চিত্র মেনে নেয়া যায় না। সরকারের উচিত হবে এমন বর্বর চিত্রের অবসানে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দ্রুত আবরারের খুনীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, যাতে আগামিতে কেউ আইন হাতে নেয়ার চেষ্টা না করে, ভিন্নমতের কারণে কাউকে পাশবিক কায়দায় হত্যার শিকার না হতে হয়। আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা এবং আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগের নামে ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সবধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করাসহ সাত দফা দাবি পেশ করেছে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যৌক্তিকতা বিচারে শিক্ষার্থীদের এসব দাবিও আমলে নেয়া দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট