চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে কয়েক দিন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আশফা খানম হেলেন

৪ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

এভাবে অত্যন্ত কড়াকড়ি শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে বিদেশীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। যা আন্তর্জাতিকভাবে খুবই সমাদৃত হয়। উল্লেখ্য প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হওয়ায় সিঙ্গাপুরের স্থিতিশীল পরিবেশ এ সুযোগকে কাজে লাগায়। তাছাড়া সিঙ্গাপুরের যথার্থ স্থান ছিল পোর্ট স্থাপনের জন্য এবং তা স্থাপন করে। ফলে ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে সিঙ্গাপুরের এক চতুর্থাংশ উৎপাদনশীল ফার্মগুলোর বিদেশী বিনিয়োগে বা যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান বিনিয়োগকারী দেশ ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান। বিদেশী বিনিয়োগে সিঙ্গাপুরের জিডিপি দ্রুত বাড়তে থাকে। অত:পর সরকার দেশটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরী, টেকনিক্যাল শিক্ষা, পেট্রোক্যামিকেল, ইলেকট্রনিক্স, আইসিটি একের পর এক প্রভৃতিতে সমৃদ্ধি সাধনে তৎপর হয় এবং সকলের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। আজকের আধুনিক সিঙ্গাপুর একটি আল্ট্রা ইন্ড্রাস্ট্রিলাইজড সমাজ এবং এর পোর্ট ট্রান্সশিপম্যান্ট পৃথিবীর দ্বিতীয় ব্যস্ততম। এর আগে আছে শুধু সাংহাই পোর্ট। প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়ন পর্যটক এদেশ ভ্রমণে আসে। সুইস ব্যাংকে ট্যাক্স আরোপ করায় বর্তমানে সিঙ্গাপুরের ব্যাংকগুলোকে সুইস ক্লায়েন্টরা নিরাপদ মনে করে। বর্তমানে সেখানে মানুষের গড় আয়ু ৮৩.৭৫ বছর যা পৃথিবীতে গড় আয়ুুর তৃতীয়তম। দুর্নীতিমুক্ত, কড়া আইন শৃংখলা ব্যবস্থার কারণে একে পুলিশীরাষ্ট্র বলা হলেও বর্তমানে পৃথিবীতে সর্বোত্তম পরিবেশ বান্ধব নিরাপদ বসবাসের বাসস্থান হিসেবে সিঙ্গাপুরকে পরিগণিত করা হয়। দেশটি ভ্রমণের পূর্বে এমন চমকপ্রদ ইতিহাস জেনে আমরা পুলকিত হলাম এবং এ দেশকে জানবার ও নিজ চোখে এর উন্নয়ন কর্মকা- দেখার আগ্রহ অনেকগুণ বেড়ে গেলো। যথারীতি ১১ এপ্রিল ২০১৯ আমাদের যাত্রা শুরু হয়। আমরা আল্লাহর অশেষ রহমতে যথাসময়ে সিঙ্গাপুর চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছি। তখন রাত প্রায় ২টা। আমরা নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে ইমিগ্রেশন সমাপ্ত করে এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে আমাদের গাইডের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। যথাসময়ে গাইড এসে আমাদেরকে নিয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। যাত্রাপথে আলো ঝলমলে সিঙ্গাপুরের নাইট সিটি আমরা উপভোগ করতে থাকি। আমাদের গাইড জানায় এদেশে কখন লোডশেডিং হয়েছে তা তার মনে নেই। সে জন্মসূত্রে সিঙ্গাপুরী। তার বাবা ভারতীয় ছিল। তখন যে রাতের শেষ ভাগ ছিল তা বুঝার উপায় নেই। বিশাল উচুঁ উচুঁ দালান। কিন্তু প্রত্যেকটির মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্ব বিদ্যমান। ফ্লাইওভার বা ফুটওভার ব্রীজ যেদিকে দৃষ্টি যায় ফুলে ফুলে ভরা। বিশাল দালানগুলোর প্রতিটি বেলকনিতে গাছের সমাহার। কোথাও কোন বিলবোর্ড নজরে আসেনি। এ যেন সবুজ প্রকৃতির মাঝে বিশাল বিশাল ইমারত সজ্জিত। সম্পূর্ণ দেশটি সি সি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত।

তাই কোথাও অনিয়ম বা বিশৃংখলার সুযোগ নেই। অবশেষে আমরা ঘন্টাখানেকের মধ্যে হোটেলে পৌঁছি। সেরাংপুন রোডে (মোস্তফা সেন্টারের বিপরীতে) অবস্থিত ঈষধৎবসড়হঃ ঐড়ঃবষ ঝরহমধঢ়ড়ৎব এ আমাদের জন্য পূর্ব থেকেই ২টি বুকিং ছিল। অল্প সময়ে ফজরের ওয়াক্ত হয়। আমরা সালাত আদায় করে এমন সুন্দর দেশে আমাদের যাত্রা সুখময় ও নিরাপদ হবার জন্য পরম করুণাময়ের কাছে দোয়া করে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিই। সাজানো গুছানো ছবির মতো সিঙ্গাপুর শহর। দেখে যে কোন বিদেশীর মন জুড়িয়ে যাবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে সাথে সবুজায়নের প্রতি তাদের মনযোগ দেখে অবাক হয়েছি। যে দিকেই তাকাই দালান কোঠা, পার্ক, আঙ্গিনা, ফুটপাত, সর্বত্রই সবুজে সবুজে পত্র-পল্লবে ভরা। আজ আমাদের ‘সিঙ্গাপুর নাইট সাফারী’ ভ্রমণের শিডিউল। ইতোপূর্বে আমার সন্তানদের বাবার মুখে নাইট সাফারীর অনেক বর্ণনা শুনে তা দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। ছেলে-মেয়েরাও তাই। সকাল ৯টার মধ্যে হোটেলে ব্রেকফাস্টের শেষ সময়। চলবে
লেখক : শিক্ষাবিদ, নারী উন্নয়নকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট