চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর চার দফা প্রস্তাব মানতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০১ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে চারটি প্রস্তাব উত্থাপন করে সমস্যার যুক্তিসংগত সমাধানে ব্যর্থতার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে যে দূরদর্শীতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তা খুবই তাৎপর্যবহ। তিনি বলেছেন রোহিঙ্গা সংকটের এখনই সমাধান না হলে শুধু বাংলাদেশ নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। সারাবিশে^ই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ কারণে তিনি রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ এবং বিশ^নেতাদের উচিত হবে একটি নিরাপদ বিশে^র স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং আহবানকে আমলে নিয়ে রোহিঙ্গা সংকটের সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ সমাধানে এগিয়ে আসা।

রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৪তম অধিবেশনে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দফা প্রস্তাবের মধ্যে আছে- ১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আত্মীকরণ। ২. বৈষম্যমূলক আইন ও রীতি বিলোপ করে রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি। ৩. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান। ৪. রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ বিবেচনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বর্তমানে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে, যা দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিকে থেকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শরণার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থান শুধু টেকনাফ-কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে না, সামগ্রিকভাবে এ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এক বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জেনোসাইডের শিকার রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অসহায় মানুষদের মানবিক কারণেই আশ্রয় দিয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিপন্ন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দানের জন্যে বাংলাদেশের প্রতি আহবান জানিয়েছিল। একইসঙ্গে দ্রুত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনেরও আশ^াস দিয়েছিল। কিন্তু এখনও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের নাগরিকমর্যাদায় ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করলেও নানা অজুহাতে সে চুক্তিও বাস্তবায়ন করছে না। চীন, ভারত, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এ ব্যাপারে বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা পালন না করায় মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তরিকতার প্রমাণ দিচ্ছে না। ফলে রোহিঙ্গা সংকট এখন এক বড় ‘টাইম বোমা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। আনান কমিশনের সুপারিশের আলোকে দ্রুত রোহিঙ্গা সংকট নিরসন না হলে তা শুধু বাংলাদেশের নয়; ভারত, চীন এবং মিয়ানমারসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের জন্যেও চরম মাথাব্যাথার কারণ হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাস থেকে ব্যাপক হারে এ দেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পর থেকেই বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে আন্তর্জাতিক পরিম-লে সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়ে আসছে। জাতিসংঘের পাশাপাশি বিশে^র শক্তিমান দেশগুলোর প্রতিও রোহিঙ্গা সমস্যার যুক্তিপূর্ণ সমাধানে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে। কিন্তু কারো কাছ থেকে জোরালো ভূমিকা দৃশ্যমান হয়নি। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমনকি মিয়ানমারের শর্ত মেনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেশটির সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হলেও মিয়ানমার সেই চুক্তি রক্ষা করেনি। এতে রোহিঙ্গা সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্খা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সংকট সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেশকৃত চার দফা সুপারিশ আমলে নিয়ে রোহিঙ্গাদের সমনাগরিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলোর দ্রুত সুনিষ্পত্তি করা। একইসঙ্গে কোনো ধরনের কালক্ষেপণ ছাড়াই সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখা। আমাদের বিশ^াস, জাতিসংঘসহ পুরোবিশ্ব মানবিকবোধে উজ্জীবিত হয়ে নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই পুনর্বাসনে সোচ্চারকণ্ঠ হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা জাতিসংঘ ও বিশ^নেতাদের কার্যকর ভূমিকা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট