চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

লাখো শিশুর কণ্ঠে ধরিত্রী রক্ষার ডাক পরিবেশ বাঁচাতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ

ধরিত্রী রক্ষার দাবিতে বিশ^ব্যাপী স্কুলশিক্ষার্থীদের সমাবেশসহ নানামাত্রিক কর্মসূচি পালনের বিষয়টি নিশ্চয়ই পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে একটি ইতিবাচক দিক। এতে মানুষের বাস-উপযোগী নিরাপদ বিশ^ গড়ার আন্দোলন নতুন রূপ পাবে, সন্দেহ নেই। দেখা যাচ্ছে পরিবেশ বাঁচানোর দাবি নিয়ে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশসহ সারাবিশে^ই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব এবং তা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধের প্রতিবাদে র‌্যালি, আলোচনা পর্ব ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়। র‌্যালি শেষে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় শপথ নেয় শিক্ষার্থীরা। সুস্থ-সুন্দর পরিবেশ সুরক্ষার দাবিতে স্কুলশিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন আশা জাগানিয়া সুসংবাদ বলতে হবে।

সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে, ‘পরিবেশ বাঁচাও’ আন্দোলনে শামিল হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসাকর্মীরাও। কারণ জলবায়ু সংকটের সঙ্গে স্বাস্থ্য সমস্যাও জড়িত। তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে শুরু করে বন্যা, খাদ্যস্বল্পতা এবং বিপর্যয়কর ঘূর্ণিঝড় সবকিছুরই প্রভাব পড়ে জনস্বাস্থ্যে এবং এ পরিস্থিতি দিন দিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, সুইডেনের গ্রের্টা থুনবের্গ নামের ১৫ বছর বয়সের এক স্কুলছাত্রী বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এ আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানিয়ে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর দ্য ক্লাইমেট’ লিখিত একটি প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতি শুক্রবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পরে এই আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কথা বলতে শুরু করেন গ্রেটা। এর নামকরণ করেন ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’। স্কুলের আগে পরিবেশ এই মূলনীতি নিয়ে শুরু হওয়া এ আন্দোলন নানা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপ্তি লাভ করেছে এখন। শুক্রবার বিশ্বব্যাপী ১৫০টি দেশের শিক্ষার্থীরা স্কুল ছেড়ে পরিবেশের জন্য রাজপথে নেমে আসে। ২০৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পরিবেশ কার্বন দূষণ মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে তারা। এর আগে মার্চে বিশ্বের একশ’টিরও বেশি দেশের বিভিন্ন শহরে এ আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিল স্কুলশিক্ষার্থীরা। এবারের আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে আরও ব্যাপক পরিসরে। সিডনি থেকে সিউল, ম্যানিলা থেকে মুম্বাইয়ে শিশু-কিশোররা পরিবেশ বাঁচানোর দাবি নিয়ে স্কুল ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে মিছিল করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি নিয়ে বাংলাদেশের শিশুরাও সোচ্চার হয়েছে। শুক্রবার জাতীয় সংসদের পাশে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ আন্দোলনে অংশ নেয়। ধনী দেশগুলোর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মক-ের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু ও পরিবেশগত নানা বৈরী আচরণ দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাব রোধ করতে না পারলে পৃথিবী বাসযোগ্য থাকবে না। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে চালু করা যায় সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।

একটি বাসযোগ্য পরিবেশবান্ধব পৃথিবী গড়তে শিশুদের এই আন্দোলন দিনদিন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি সব শ্রেণির, সব পেশার মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়টি খুবই ইতিবাচক বলতে হবে। এতে একদিকে প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় বিশ^ব্যাপী জনসচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা বাড়বে, অন্যদিকে ক্রমাগত চাপ বাড়বে দূষণকারীদের ওপর। বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে চাপর বাড়বে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ক্ষতিপূরণ লাভের দাবিও জোরালো হবে। সংগতকারণে সবার উচিত স্কুলশিক্ষার্থীদের সূচিত এই আন্দোলনে শামিল হয়ে পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা। মনে রাখা দরকার, এটা নির্দিষ্ট কোনো প্রজন্মের কাজ নয়। এটা আমাদের পুরো মানবজাতির দায়িত্ব।

অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে আমাদেরকে অবশ্যই পরিবেশবিনাশী অপকর্ম বন্ধে সোচ্চার হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা। পাশাপাশি কর্মসূচি নিতে হবে ব্যাপক বনায়নেরও। জ্বালানিসহ নানা প্রয়োজনে যেভাবে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে তা রোধে কার্যকর পদক্ষেপের পাশাপাশি সংরক্ষিত বনাঞ্চল সৃষ্টিসহ মসজিদ-মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডা, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ির প্রাঙ্গণ ও রাস্তা, ময়দান, মাঠের আশেপাশে ব্যাপকভিত্তিতে গাছলাগানো ও সংরক্ষণ এবং পরিচর্যার ব্যবস্থাভিত্তিক কর্মসূচি নিতে হবে। একইসঙ্গে যারা পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হতে হবে। তবেই হয়তো আমরা রক্ষা পাবো এই মাত্রাতিরিক্ত তাপদাহ এবং আবহাওয়ার বিপর্যয়ের প্রভাব থেকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট