চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ডিপ্রেশন বনাম স্বপ্ন জয়

আরিফ ইকবাল নুর

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্ত আমরা মুখোমুখি হই কঠিন বাস্তবতার। সব কাজ সঠিক সময়ে করে উঠেও অনেক সময় কাক্সিক্ষত সাফল্য অধরাই থেকে যায়। আমরা নিজেকে সফল হিসেবে দেখতেই ভালোবাসি। কিন্তু কোন কাজে যখন আমরা ব্যর্থ হয়, তখন আমাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করে। অনেকে ব্যর্থ হয়ে সুইসাইড করে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ডিপ্রেশনে পড়ে ড্রাগস নেই। যারা সফলতা অর্জন করেছে তাদের অনেকের কষ্ট ছিলো, জীবনের শুরুতেই বার বার হতাশ হয়েছিলো। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়নি নিজের মাঝে ডিপ্রেশনকেও স্থান দেয়নি। সুইসাইড করেনি। কারণ তারা জানত, ব্যর্থতা মানে নিচে পড়ে যাওয়া নয়। নিচে পড়ে যাওয়ার পর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা না করাই হল ব্যর্থতা। আব্রাহাম লিংকন আমাদেরকে শিখিয়েছেন কিভাবে ব্যর্থতাকে হার মানাতে হয়। তিনি ২৩ বছর বয়সে চাকুরী হারান এবং রাজনীতিতে পরাজিত হন। ২৪ বছর বয়সে ব্যবসায় ক্ষতি হয়। ২৬ বছর বয়সে হারান প্রিয়তমাকে। ২৭ বছর বয়সে অর নার্ভাস বেকডাউন হন। ২৯ বছর বয়সে স্পিকার পদে পরাজিত হন। ৩৪ বছর বয়সে কংগ্রেস প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যান। ৩৯ বছর বয়সে আবার কংগ্রেস প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যান। ৪০ বছর বয়সে ভূমি অফিসার পদে রিজেক্ট হন। ৪৫ বছর বয়সে সিনেট নির্বাচনে হেরে যান। ৪৭ বছর বয়সে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যান। ৪৯ বছর বয়সে আবারও সিনেট নির্বাচনে পরাজিত হন। অবশেষে ৫২ বছর বয়সে তিনি হন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তিনি ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত প্রেসিডেন্টদের একজন।

আবার অনেকে আর্থিক সমস্যার কারণে সবসময়ই ডিপ্রেশনে থাকে এবং বড় স্বপ্ন দেখার সাহজ করে না। অথচ যারা আজ পৃথিবীতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তাদেরও আর্থিক সমস্যা ছিল। কিন্তু আর্থিক সমস্যা তাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ৯ বছর বয়সের এক ছেলে খাবারের অভাবে মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলো, তারপর গ্রামের এক ভাইয়ের সহযোগিতায় দোকানে রুটি বানানোর কাজ পায়। তারপর পড়াশুনা। সেই ছেলেটির নাম আজ সবার মুখে মুখে। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। শ্যাম নাজোমা পেশায় ছিলো নাপিত। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে কিংবা সেলুনে চুল কাটতো। সে-ই হয়েছিলো কৃষ্ণ-আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলনের নেতা এবং স্বাধীন নামবিয়ার রাষ্ট্রপিতা ও প্রেসিডেন্ট। জন মেজর অভাবের তাড়ানায় কুলিগিরি করতো। একদিন বাসের কন্ডাক্টরের কাজের জন্য গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। যে যুবকটি অংকে পারদর্শী নয় বলে বাসের কন্ডাক্টর হতে পারেনি, পরবর্তীতে সে-ই হয় ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী।

আলবার্ট আইনস্টাইন পড়ালেখায় মারাত্মক দুর্বল ছিল। ক্লাসে শেষ বেঞ্চে বসে থাকত। সাত বছর বয়স পর্যন্ত রিডিং পড়তে অক্ষম ছিল। কোন কিছু মনে থাকত না। যাকে মানসিক প্রতিবন্ধি হিসেবে ধরে নিয়েছিল। সেই বালকটি পৃথিবীকে অবাক করেছে তার থিউরি অফ রিলিটিভিটি দিয়ে। নোবেলও জিতেছেন। টমাস আলভা এডিসন ক্লাস এর সবচেয়ে দুর্বল ছাত্র ছিলেন তিনি। তাকে স্কুল থেকে বহিস্কারও করা হয়েছিল। কিন্তু সে দুর্বল ছাত্রই পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন তার আবিষ্কার ইলেকট্রিক বাল্ব দিয়ে।

জিরো থেকে হিরো হওয়া উদাহরণ গুলো দেওয়ার কিছু কারণ আছে। প্রতিভা কম বেশি সবারই থাকে। এটা বিশেষ কোন ফ্যাক্ট না। ফ্যাক্ট হচ্ছে নিজের লক্ষ্য পূরণে তুমি কি করছো। আমরা সবাই একটা ভালো ব্র্যান্ড খুঁজি। কিন্তু নিজেদেরকে ব্র্যান্ড বানানোর চেষ্টা করি না। পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই একেকটা ব্র্যান্ড। সমস্যা হচ্ছে এটা বুঝতেই আমরা জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দেই।

সৌভাগ্য অথবা সফলতা নামের সোনার হরিণ করায়ত্ব করতে পরিশ্রমের পাশাপাশি এর সাথে যোগ করতে হবে সঠিক প্রচেষ্টা আর কিছু সাধারণ কৌশল। মনে রাখতে হবে কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়লে চলবে না, পুনরায় চেষ্টা করতে হবে।

সবসময় ইতিবাচক মানসিকতার অনুশীলন করে ইতিবাচক মানুষদের সাহচর্য বজায় রাখতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে হবে। অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস এবং নিজের দৃঢ়তাকে মজবুত ও অনুসরণ করতে পারলে নিশ্চিতভাবে পৌঁছে যেতে পারবে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে। কিন্তু ডিপ্রেশনকে জায়গা দেওয়া যাবে না। তুমিও দ্বিতীয় কোন আতিউর রহমান কিংবা আব্রাহাম লিংকন হবে না, তার কি বা নিশ্চায়তা আছে? তাই হতাশ না হয়ে লেগে থাক, স্বপ্ন জয় তোমারও হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট