চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

বর্ধিষ্ণু চট্টগ্রামের জন্য নতুন কালুরঘাট সেতু জরুরি

মো. হুমায়ুন করিম চৌধুরী হেলাল

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ

ভূ-জ্যামিতির নিয়তিতে বাধা হাজার বছরের শাশ্বত সমাজ সংস্কৃতি কৃষ্টি আচার আচরণে সমৃদ্ধ এক জনপদ সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে নান্দনিক স্থিতিতে প্রবাহমান নদী খাল, বিস্তৃত বিলঝিল, সারি সারি সবুজ পাহাড়-টিলা মিলে মিশে নিভৃত এক সমতলে আর শত মনিষী পীর আউলিয়া সাধু-সন্ন্যাসীর স্মৃতিধন্য কর্ণফুলী বিধৌত বোয়ালখালী। তবে অহনিশি এক নাগরিক বিড়ম্বনা সমেত যাতায়াত কষ্টের সাথে নিত্য বসবাস এই জনপদের জনগণের। এই প্রেক্ষাপটে জীর্ণ কালুরঘাট সেতুর পাশে একটি নতুন সেতু খুব দরকার।

আজকে প্রগতি আর সমৃদ্ধির সোনালী সোপানের সাথে তাল মিলিয়ে যখন এগিয়ে চলছে স্বদেশ, তখন অবাক হই, হই বিস্মিত, আবার কেনো এই সুসময়ে শুনি গগনবিদারী চিৎকার বিক্ষুব্ধ শ্লোগানে প্রকম্পিত রাজপথ। চিন্তার বিস্তারে বার বার ব্যাবচ্ছেদ হয়, সম্ভবনা, সংকট সংশয়ের যোযিত যোজনে আজকের প্রেক্ষাপটে একটা আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন কালুরঘাট সেতু জরুরি।
ইংরেজ আমলে নানা চিন্তার ফসল ছিল ঐতিহ্যের স্মারক জীর্ণ কালুরঘাট সেতু (প্রথম কর্ণফুলী সেতু)। ১৯৩০ সালে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ কালুরঘাট সেতুটি জরাজীর্ণ অবস্থায় আজও দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। সেতুটির ব্যবহার এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলা চলে। কিন্তু তারপরও অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ সেতুর উপর দিয়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে মানুষ যাতায়াত করছে, চলছে সময় ধরে সূচী ভুক্ত দোহাজারী আর শহরগামী ট্রেনগুলো, ভারী যানবাহন আর প্রাণ হাতে নিয়ে পারাপার হয় হাজারো মানুষ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শহরের সাথে বোয়াখালীর একমাত্র সংযোগসেতু হচ্ছে এই চরম ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি। ২০০১ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর নতুনভাবে কালুরঘাট রেল এবং সড়ক সেতু নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকবার জরিপ হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে রিপোর্ট আর তার ফলশ্রুতিতে নমুনা নকশা সমন্বিত প্রকল্প বিন্যাস বিবরণী। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৬৩.২৭৮১ কোটি টাকা। যার মধ্যে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব কোরিয়া ৭৮৩.৪৯৩১ কোটি টাকা প্রদানে সম্মত হয়েছে। যে টাকা প্রদান করতে হবে ৪০ বছরে ০.০১% সরল সুদে। প্রকল্প নকশা অনুযায়ী সেতুর নির্মাণ মেয়াদকাল হচ্ছে

জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখনো সেতুর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি।

প্রসঙ্গত, নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মিত হলে শুধু বোয়ালখালীর জনগণই উপকৃত হবে না, সারা বাংলাদেশই উপকৃত হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের যে মাস্টারপ্ল্যান, তা যদি ফলপ্রসূ ও যথাযথভাবে সম্পন্ন করা যায়, তাহলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের অপার সম্ভবনা ও পর্যটনবাণিজ্যের সুযোগ বহুমাত্রিকভাবে কাজে লাগানো যাবে। যা কক্সবাজারকে পরিণত করবে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত পর্যটনক্ষেত্রে। কিন্তু নতুন কালুরঘাট সেতু ছাড়া সে লক্ষ অর্জন সম্ভব হবে না।

যদি পর্যটনশিল্পের বিকাশ আর প্রকৃতিগতভাবে গড়ে উঠা একটা পর্যটনস্থানের কথা ভাবি, তাহলে হালদা-কর্ণফুলীর মিলনস্থল আর আধুনিক নান্দনিক ভাবনার নতুন কালুরঘাট সেতু হবে উত্তর-দক্ষিণ জেলার বাসিন্দাদের, একই সঙ্গে দেশ-বিদেশের প্রকৃতিজ সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটকদের সৌন্দর্য পর্যবেক্ষণের অন্যতম আদর্শ তীর্থ। দেশীয় শিল্পের বিকাশ এবং দেশীয় রাজস্ব সম্ভারকে সমৃদ্ধ করতেও এ সেতু ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম শহর এখন প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে। বিশাল এক জনস্রােত কর্মসংস্থানসহ নানার প্রয়োজনে শহরে আসে। কিন্তু বিশাল এই জনস্রােতের আবাসন চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়।

ফলে শহর এখন কর্ণফুলীর অন্যপ্রান্ত এমনকি অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। আবার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোও এখন নদীর ওপাড়, এমনকি অনেক দূরে গড়ে উঠছে। এ অবস্থায় নতুন কর্ণফুলী সেতু নির্মিত হলে একদিকে শহরে জনসংখ্যার চাপ কমে যাবে। অনেক দূর থেকেও মানুষ সহজেই কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করতে পারবে। অন্যদিকে মানুষের খরচও কমে যাবে।
সবারই জানা যমুনা সেতু হওয়ার পরে বৃহত্তর সিরাজগঞ্জ, বগুরাসহ উত্তরবঙ্গে শিল্প-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটেছে। বর্তমানে নির্মীয়মান পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হলে পুরো দক্ষিণাঞ্চল উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে এগিয়ে যাবে। তেমনি আধুনিক প্রযুক্তিগতভাবে পরিকল্পিত নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা গেলে বৃহত্তর বোয়ালখালী এবং পটিয়াসহ বিভিন্ন সম্ভাবনাময় এলাকায়ও শিল্পবিপ্লব ঘটবে।

এতে বেকারত্ব দূরীকরণসহ নানা ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল আসবে। সমৃদ্ধ হবে জাতীয় অর্থনীতি। আরো নানা কারণে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ সময়ের দাবি। সঙ্গে এ কথাও মাথায় রাখা দরকার, দৈব-দুর্ঘটনায় যদি রেলগাড়ীসমেত নদীবক্ষে বর্তমানের ঝরাজীর্ণ সেতুটি ভেঙে পড়ে কিংবা চলমান গাড়ীর বহরসহ সেতুটি কর্ণফুলীর বুকে আচড়ে পড়ে তাহলে তার পরিণাম ভয়াবহ হবে। এমন পরিণাম নিশ্চয়ই কেই আশা করে না।আমরা সব যুক্তি বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আশা করি বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের হতাশ করবেন না।

লেখক : পিএইচডি গবেষক (যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট