চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ধূমপানে বিষপান

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ

সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধূমপান মৃত্যুর কারণ, রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, ধূমপান ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণ, ধূমপান মৃত্যু ঘটায়, ধূমপান ক্যান্সারের কারণ, ধূমপান গর্ভের সন্তানের ক্ষতিরকারণসহ ধূমপানের সকল ক্ষতির সতর্কীকরণ বাণী। একসময় শুধুমাত্র ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এটি লেখা থাকলেও দিনে দিনে ধূমপানের চূড়ান্ত পরিণতির বিষয়ে প্যাকেটের গায়ে লেখা শুরু হলেও দিন দিন ধূমপায়ীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বাড়ছে। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত বাঙ্গালী হিন্দু-মুসলিমসহ সকল ধর্মের উঠতি তরুণরা ধূমপান করতো লুকিয়ে লুকিয়ে এবং বন্ধুদের আড্ডায়। সে সময়ে তরুণ ধূমপায়ীরা পরিবারের বড়-ছোট

সদস্যসহ পাড়া প্রতিবেশীর মুরব্বীদের সামনেও ধূমপান করতে ভয় পেতো লজ্জায়, তাদের সম্মানে কিংবা পরিবারে নালিশ জানানোর ভয়ে। বন্ধুদের আড্ডায় কেউ ধূমপান না করলেও তার প্রতি সম্মান বজায় রেখে ধূমপান করতো অন্যরা। সে সকল তরুণরা এক সময় মধ্যবয়সে পৌঁছালেও পুরনো ভয় ও সম্মানের জায়গাটা বজায় রেখে ধূমপানে সতর্কতা অবলম্বনকারীর সংখ্যাটা এখনো অনেক বেশি। এখন সময় পাল্টেছে, একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও, এখন তরুণ-তরুণীরা আধুনিকতার পেছনে ছুটছে, ধূমপান করা স্মার্টনেস মনে করছে। বাসার মধ্যে নিজের থাকার রুমে, পথেঘাটে যে কোন জায়গাতেই প্রকাশ্যে ধূমপান করছে, বহু তরুণীকেও ধূমপান করতে দেখা যায়। ধূমপান এখন এতটাই স্মার্টনেসে পরিণত হয়েছে যে, অনেকেই ধূমপান করাবস্থায় ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পোস্ট করছে। বন্ধুদের আড্ডায় কেউ ধূমপান না করলে তাকে আনস্মার্ট, সেকেলে ও খ্যাত বলে আখ্যায়িত করা হয়। অবশ্য পান সেবনে অন্য কারো ক্ষতি হয় না, কিন্তু সিগারেটের ধোয়া পাশে থাকা মানুষজনের জন্য সমান ক্ষতিকর, যার কারণেই ধূমপানকে ভিন্ন চোখে দেখা হয়। ধূমপানের বিষয়ে একথা বলাবাহুল্য যে, সিগারেট সেবন আমাদের সমাজে মন্দ কাজ মনে হলেও পান খাওয়াকে স্বাভাবিক বিষয় মনে করা হয়, অথচ ক্ষতির দিক দিয়ে সিগারেটের চেয়েও ভয়াবহ ক্ষতিকর হলো পান খাওয়ার আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো, একজন তরুণ প্রকাশ্যে সবার সাথে মিশে পান খেতে পারলেও ধূমপান করা খারাপ দৃষ্টিতেই দেখা হয় অথচ ধূমপান ও পান খাওয়া দুটোই মারাত্মক ক্ষতির কারণ। সরকার প্রকাশ্যে ধূমপান নিষেধ ও জরিমানার বিধান করে আইন করলেও তার বাস্তবায়ন নেই। প্রকাশ্যে ধূমপায়ীকে ৩০০ টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও কমছে না ধূমপায়ীর সংখ্যা, সেই সাথে প্রত্যেক কোম্পানীর সিগারেটের গায়ে ভয়াবহ ক্ষতিকর বাণী লেখা থাকাসহ সিগারেটের দাম বিগত দশকের তুলনায় দুই থেকে দ্বিগুণ বাড়লেও কমছে না ধূমপায়ীর সংখ্যা বরং বর্তমানে ধূমপান স্মার্টনেস মনে করাসহ আধুনিকতার দোহাই মুরব্বী না মানা, তাদের সম্মান না করা ধূমপানের সামাজিক রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে

ধূমপানকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। বিদ্যমান আইনে ১৮ বছর বয়সী কারো কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষেধ হলেও কোন বিক্রেতাই মানছে না আইন, বর্তমানে অনুর্ধ্ব ১৮ বয়সীরা ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে বেশি। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এর ৪(১) ধারা মতে পাবলিক পরিবহন বা পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে ধূমপায়ীকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ধূমপান করতে দিলে প্রতিষ্ঠানকে/প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ৫০০ টাকা জরিমানা, ৬(ক)-(১) ধারা মতে ১৮ এর নিচে বয়স্ক কারো কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করলে ৫০০০ টাকা জরিমানা, ৮(১) ধারা মতে পাবলিক পরিবহন/প্লেসে ধূমপানবিরোধী সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদর্শন না করলে ১০০০ টাকা জরিমানার বিধান রাখলেও ধূমপায়ী কিংবা বিক্রয়কারীসহ বহু পাবলিক পরিবহনই মানছে না নিয়ম। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত সিগারেটের দাম অনেক কম থাকলেও তখন ধূমপায়ীদের অধিকাংশজনই ধূমপানের পূর্বে নানা প্রকার সতর্কতা ও সামাজিকতা, পারিবারিক মূল্যবোধের কথা ভাবলেও বর্তমানে সিগারেটের দাম তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়াসহ ধূমপানের ভয়াবহতা সম্পর্কে সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকার পরও কমছে না ধূমপায়ীর সংখ্যা, উল্টো পাবলিক প্লেসসহ বড় ছোট সকলের সামনে অবাধ ধূমপান আশংকাজনক বাড়ছে, লেখাপড়া করা কিংবা না করা বহু কোমলমতি শিশুদের হাতেও সিগারেট দেখা যাচ্ছে, কেউ নিষেধ কিংবা ভয়াবহতা সম্পর্কে বলতে গেলেও নিষেধ না শুনাসহ লংকাকান্ড বাধিয়ে দেয় অনেকে, যা কাম্য নয়। ধূমপায়ীদের অধিকাংশজন শুধুই সখের বশে কিংবা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে, স্মার্টনেস মনে করে কিংবা কেউ কেউ চিন্তা দূর করতে ধূমপান করলেও ধূমপানে ভয়াবহ ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার নেই, উল্টো ধূমপানের মাধ্যমে অনেক সময় নষ্ট হয় ভ্রাতৃত্ববোধ, নষ্ট হয় সামাজিকতা, নষ্ট হয় সম্মানের জায়গাটা, যা দিন দিন বাড়ছেই, বর্তমান বহু তরুণ শুধুমাত্র সিগারেট সংক্রান্ত বিষয়েও মারামারি লিপ্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যায় মিডিয়াতে। বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ, ধূমপানের ভয়াবহতা সম্পর্কে উপলব্ধি, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি খেয়াল রাখার মাধ্যমেই কমতে পারে ধূমপান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট