চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

গডফাদারদেরও ধরতে হবে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অভিযান

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র লীগ ও যুবলীগের বিপথগামী এবং সমাজশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে যে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন তা সাধুবাদযোগ্য। তিনি মাদক এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পর সব ধরনের বিপথগামী দুর্বিনীতদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিজ দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র লীগ এবং যুবলীগের মধ্য দিয়ে তিনি বিপথগামীদের প্রতিরোধ এবং শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। দলমত নির্বিশেষে সবক্ষেত্রেই তাঁর এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের সমর্থন পাচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রকৃত অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ়তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
ছাত্র লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিস্কারের পর যুবলীগের চিহ্নিত দুর্বিনীতদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যেই যুবলীগের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। একে একে অন্য বিপথগামীদেরও ধরা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, কারো কোনো নালিশ শুনতে চাই না। ছাত্রলীগকে ধরেছি। যুবলীগকে ধরেছি। একে একে সব ধরব। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, সমাজের অসঙ্গতি এখন দূর করবোই। জানি, এগুলো কঠিন কাজ। তারপরও দেশ ও জনস্বার্থে, জননিরাপত্তা, সমাজশৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সে কঠিন কাজ সম্পন্ন করবোই। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, দলের নাম ভাঙ্গিয়ে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করার অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন অশুভশক্তির বিদ্যমান আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এ পদক্ষেপ খুবই সময়োপযোগী এবং রাষ্ট্রের অভিভাবকসুলভ বলতে হবে। এ উদ্যোগে কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। দলমত নির্বিশেষে সবার উচিত হবে এ মহতি উদ্যোগ যাতে অভিষ্ট লক্ষ অর্জন করতে পারে সে জন্যে সব ধরনের সমর্থন প্রদান করা।

গণমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে তার পরিচালনাধীন একটি অবৈধ ক্যাসিনোসহ বেশ কয়েকটি ক্যাসিনোয় অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। কয়েকজন তরুণীসহ আটক করা হয় ১৪২ জনকে। নানা অভিযোগের ভিত্তিতে খালেদের বাসায়ও অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই বাসা থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র, দুটি মেয়াদোত্তীর্ণ অস্ত্র, নগদ ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ ডলার ও ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। বাসায় র‌্যাব সদস্যরা একটি টরচার সেলেরও সন্ধান পেয়েছেন। সেখানে লোহার শিকল ও নির্যাতন করার বিভিন্ন সরঞ্জামের পাশাপাশি মেঝে ও দেয়ালে রক্তের দাগও পাওয়া গেছে। চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইলিংসহ অনেক কাজেই টরচার সেলটিকে ব্যবহার করা বলে ধারনা করা হচ্ছে। খালেদের পর নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকা এফডিআরের নথি, অস্ত্র, মাদকসহ গ্রেফতার হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম। শামীমের কাছ থেকে অত্যাধুনিক একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং তার সাত দেহরক্ষীর কাছ থেকে সাতটি শটগান ও কয়েক বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়েছে। খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জি কে শামীমকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয়। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে আরো কয়েকজনের নাম বেরিয়ে এসেছে। তাদের ধরতেও অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি বিমানবন্দরকেও অবহিত করা হয়েছে, সন্দেহভাজন এসব নাগরিক যেন দেশ ছাড়তে না পারেন।

আমরা মনে করি, দল ও অঙ্গসংগঠনের ভেতর থাকা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দেয়ার পর শুরু হওয়া এ অভিযান অভিনন্দনযোগ্য। দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া পদক্ষেপ জনমনে আশা জাগিয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাবের কারণে যারা এতদিন নিজেদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করতেন, তারা এখন প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে। এটি নিশ্চয়ই একটি আশা জাগানিয়া সুসংবাদ। দৃর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অভিযান জনমনে আশার সঞ্চার করেছে। তবে কাক্সিক্ষত ফল পেতে সারাদেশেই এ ধরনের অভিযান পরিচালিত হওয়া উচিত। একইসঙ্গে দুষ্কর্মের গডফাদারদেরও ধরতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যারা সহায়ক ভূমিকা রেখেছে তাদেরও খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কঠোর পদক্ষেপ নেয়া দরকার ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজারে সংকট সৃষ্টির অপনায়কদের বিরুদ্ধেও। দুর্বিনীতদের বিরুদ্ধে অভিযান দু-একটি ঘটনাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না-এমনটাই আশা করতে চাই আমরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট