চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বেত্রাঘাতে চোখ গেল শিক্ষার্থীর শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

যুগচাহিদার প্রেক্ষাপটে বিশে^র দেশে দেশে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পাঠদানপদ্ধতি। পাঠকে আনন্দদায়ক করতে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ। বন্ধ করা হচ্ছে সব ধরনের নির্যাতন। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। আনন্দদায়ক পরিবেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপের একটি হচ্ছে দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পরিপত্র জারি। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট সরকার একটি পরিপত্র জারি করে। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবধরনের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে উচ্চ আদালতও। শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তির বিরুদ্ধে আছে প্রবল জনমতও। কিন্তু তারপরও থেমে নেই শিক্ষার্থীনির্যাতন। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায়ই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ঠুনকো কারণেও কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর পাশবিক কায়দায় নির্যাতন করে থাকেন। শিক্ষকের প্রহারে শিক্ষার্থীর পঙ্গুত্ব বরণের খবরও আছে, আছে মৃত্যু বরণের খবরও। যা অমানবিকতা ও বর্বরতার শামিল। গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ ধরনের একটি খবরে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকের ছুড়ে দেয়া বেতের আঘাতে একটি চোখ হারিয়েছে এক ছাত্রী। বিষয়টি শিক্ষার্থী নির্যাতনের ভয়াবহতাকে স্পষ্ট করছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীদের সঙ্গে গল্পগুজব করার অপরাধে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর দিকে বেত ছুড়ে মারেন শিক্ষক। বেত গিয়ে আঘাত করে ছাত্রীর বাঁ চোখে। এতে চোখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলে ছাত্রীকে নেয়া হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। চোখটি শেষ পর্যন্ত অপারেশন করে তুলে ফেলতে হয়েছে। ঘটনার পর গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। হয়তো অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে অপরাধীর শাস্তি হবে। তবে শিশুটি যে শৈশবেই একটি চোখ হারাল স্থায়ীভাবে, তার প্রতিকার কী? অভিভাবক ও স্বজনদেরই বা কী সান্ত¡না! শিক্ষক যদি আইন ও নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে এমন নির্মম কা-ের অবতারণা হতো না। শিশুটিকেও স্থায়ীভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতে পরিণত হতে হতো না। একজন শিশুশিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের এমন পাশবিক আচরণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে অন্যরা এমন গর্হিত অপরাধকা-ে কখনো প্রবৃত্ত না হন।

উল্লেখ্য, শুধু যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নয়, সারাদেশেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায়ই শিক্ষার্থীনির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। সাধারণত গুরুতর না হলে শিক্ষার্থীনির্যাতনের খবর সংবাদমাধ্যমে আসে না। নানাভাবে চাপা দেয়া হয়। অপরাধীর শাস্তি হয় না দৃষ্টান্তমূলক। ফলে পাশবিক চরিত্রের অনেক শিক্ষকই নানাভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালায়। শিক্ষক কর্তৃক যৌননিপীড়নের খবরও দেখা যায় পত্রপত্রিকায়। এরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। তারা একদিকে শিক্ষকসমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, অন্যদিকে কলুষিত করছে শিক্ষার পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার নেপথ্যে এদের ভূমিকাও কম নয়। তাই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এ পাষ-দের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। একইসঙ্গে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সুচিন্তিত উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু, সুন্দর ও ভয়হীন পরিবেশ ছাড়া শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ অসম্ভব। তবে এজন্যে শিক্ষকদের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন সবার আগে জরুরি। এ ব্যাপারে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট