চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আমেরিকা-ইরান উত্তেজনা

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ কাল থেকে ই ইরান এবং আমেরিকর মধ্যে বৈরীভাব বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে আমেরিকার অভিযোগ অনেক দিনের। আমেরিকা সবসময়ই বলে আসছে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্যই ইউরোনিয়াম মজুদ করছে এবং পারমাণবিক প্রকল্প চালু রেখেছে যদিও ইরান সবসময়ই আমেরিকার দাবি প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। সাম্প্রতিক একটি ঘটনা দুদেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

বর্তমান সংকটের অবতারণ হয় ৫ মে ২০১৯। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ঘোষণা দেন যে, ইরানের পক্ষ থেকে হুমকি ও আক্রমণাত্মক আচরণের ইঙ্গিতে সাড়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চণে যুদ্ধ বিমান বহনকারী তরী ও বোমারু উড়োজাহাজ নিয়োগ করেছে এরকম সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য হিসেবে তিনি বলেন, ইরানের প্রতি পরিষ্কার বার্তা পৌঁছে দেয়া যে, আমেরিকর স্বার্থে কিংবা তার মিত্রদের ওপর যে কোনো আক্রমণে প্রতি উত্তরে সব শক্তি দিয়ে সাড়া দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান আমেরিকানদের ওপর আক্রমণ করতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্য ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে এসেছে বলে প্রশাসন দাবি করে। ইরান এর মধ্যে নিজের মিত্র ও ছায়া মিত্রদেরও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

একই সঙ্গে নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচির কিছু কার্যক্রম আবারও শুরু করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও এর অর্থ এই নয় যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। দু দেশের মধ্যে এ ধরনের কথা কাটাকাটি ওয়াশিংটন এবং তেহরানের মধ্যে সংঘাত শুরু হলো বলে অনেকেই মনে করছেন। অন্যদিকে যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন ইরানের ওপর চটেছেন সে গোয়েন্দা তথ্য নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। গত ৮ মে ইরানি রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন যে, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রসমূহ যদি ইরানের আর্থিক সমস্যা নিরসনে প্রতিশ্রুত পদক্ষেপ আগামি ৬০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করে তাহলে ইরান চুক্তির কয়েকটি বিষয়ে নিজস্ব চিন্তা প্রয়োগ করবে।

পানিপথ বিশ^ময় গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা কারণ বিশে^র এক তৃতীয়াংশ প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিশে^ উৎপাদিত তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়েই বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। আর এই অঞ্চলেই ইরানের সমুদ্র তরীর টহল সবচেয়ে বেশি। চারটি ট্যাংকারের দুটি ছিল সৌদি আরবের আর একটি ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের। এই দু দেশই ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বি দেশ। আর এই দুুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ট মিত্র। চতুর্থ ট্যাংকারটির মালিক নরওয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও আরো কয়েকটি দেশের ভাষ্যমতে ইরানের কয়েকটি সংগঠনই ট্যাংকারগুলো আক্রমণ করে। ইরান অবশ্য বার বার দাবি করলেও এই আক্রমণে তাদের কোনো হাত নেই কিন্তু একদিন পরেই ইয়েমেনে ইরানের সমর্থন প্রাপ্ত হুতি বাহিনী একটি সৌদি মালিকানাধীন তেলের পাইপ লাইনে আক্রমণ করে। আর ইরানের এক জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতা ইরাকের মিলিশিয়া বাহিনীদের যুদ্ধল জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন। এজন্যই যুক্তরাষ্ট্র তার ইবরিল ও বাগদাদের দূতাবাস থেকে কিছু কমকর্তাকে প্রত্যাহার করে নেয়। একই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন মধ্য প্রাচ্যে অ্যান্টি মিসাইল অস্ত্র মোতায়েন করে। এরপর হরমুজ সমুদ্র পথের আবারো তেলবহনকারী ট্যাংকারে আক্রমণ ঘটে। সর্বশেষ ইরানি সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোন ভূপাতিত করলে বর্তমানে আমেরিকা-ইরান সংকট বিপদজনক পর্যায়ে চলে যায়, এখন প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ইরান সম্পর্ক কোন দিকে যাচ্ছে। এ দুটি দেশ তাদের সংকট থেকে উত্তোরণ ঘটাতে পারবে তো? বিশে^র প্রায় সব মানুষই কোনো দেশের সাথে যুদ্ধ চায় না। সভ্য পৃথিবীতে মানুষ নিরাপদে তাদের দেশে বসবাস করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান তাদের সংখট থেকে উত্তোরনের জন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এ বিষয়টি কূটনৈতিক পর্যায়ে সমাধান হলে দু দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে পথ চলতে সুবিধা হবে।

আর ইরানের উচিত হবে হরমুজ সমুদ্রপথে বিশেষ নজর রাখা কারণ এই সমুদ্র পথে তাদের নজরদারি বেশির কারণেই কোনো ঘটনা ঘটলেই তাদেরকে দায়ি করা হয়। আমরা প্রত্যাশা করছি ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমান বিরাজমান সংকট দ্রুত কেটে যাবে।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট