চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিন

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষার সব আইনি কাঠামো বিদ্যমান আছে বাংলাদেশে। সংবিধানে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারের বিষয়টিও যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনসচেতনতার অভাব, সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালিপনা এবং বিভিন্ন সরকারি বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে দিন দিন। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের এই চিত্র কোনো মতেই আমাদের জন্যে শুভকর নয়। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। পরিণামে মানব-অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
বাংলাদেশের বনগুলো জীববৈচিত্র্যের আধার। পশুপাখি, কীট-পতঙ্গের অনুকূল নানা গাছপালা এবং লতাগুল্মে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বনগুলো। কিন্তু দিন দিন নানাভাবেই ধ্বংস করা হচ্ছে দেশের বনভূমিগুলো। একদিকে কাঠ চোররা বনরক্ষকদের ম্যানেজ করে কিংবা গোপনে বনের গাছ কেটে বনভূমি ধ্বংস করে দিচ্ছে, অন্যদিকে বনবিভাগ প্রাকৃতিক বন কেটে দ্রুত বাড়ে এমন জাতের আগ্রাসী প্রজাতির গাছ রোপন করছে। বনকে জীববৈচিত্র্য রক্ষার জায়গা হিসেবে না দেখে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

বনের গাছ নিধনের পাশাপাশি সাগর-জলের লবণাক্ততা বৃদ্ধিও জীববৈচিত্র্যের জন্যে হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে সুন্দরবন এলাকায় লবণাক্ততা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কিন্তু এ সমস্যা লাঘবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্তু এখন সুন্দরবনের পাশে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে। দেশের অন্যান্য বনাঞ্চলও নানাভাবে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। এতে জীববৈচিত্র্য পড়ছে মহাহুমকিতে। বনভূমি ধ্বংসের সাথে সাথে জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পাল্লা দিয়ে।

জীববৈচিত্র্যের জন্যে বনভূমির সাথে জলাভূমিও অপরিহার্য। কিন্তু ভূমিদস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি জলাভূমি ধ্বংস করে দিচ্ছে। বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তনসহ নানা কারণে পানি সম্পদের পরিমাণ পূর্বাপেক্ষা কমে গেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট পানিসম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার। এর ৭৫ শতাংশ আসে যৌথ নদীগুলো থেকে, ২০ শতাংশ আসে বৃষ্টি থেকে। ২ শতাংশ আসে ভূগর্ভ থেকে। কিন্তু আমাদের প্রয়োজনীয় পানির ৭৫ শতাংশই ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়। এতে একদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে আর্সেনিকসহ নানা ক্ষতিকর বস্তু পাওয়া যাচ্ছে পানিতে। এসব পানি জীববৈচিত্র্যের জন্যে অনুকূল নয়।

এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু সুপেয় পানির আধার জলাভূমি ধ্বংস ও নদীগুলোর দখল প্রতিযোগিতা চলছে সমান তালে। সরকারি জলাভূমিগুলো ইজারা দেওয়ায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে সেগুলোতে মাছের চাষ করা হচ্ছে। সামান্য কিছু টাকার জন্যে জলাভূমিকেন্দ্রিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে। আবার পানিসম্পদের একটি বিরাট অংশ ফসল উৎপাদনে খরচ হয়ে যায়। পশু-পাখিসহ নানা বন্যপ্রাণীর জন্যে তেমন অবশিষ্ট থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে পাঁচ হাজার লিটার পানির দরকার হয়। ফলে কৃষিখাতেই আমাদের বিপুল পরিমাণে পানির দরকার হয়। জীববৈচিত্র্যের জন্যে পানি রাখতে হলে আমাদের এমন সব জাতের ফসল উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে কম পানি দরকার হয়।

জীববৈচিত্র্যে রক্ষার বিষয়টি যেহেতু আমাদের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত, সেহেতু এ বিষয়ে খামখেয়ালির সুযোগ নেই। বনভূমি, জলাভূমি, পানি প্রভৃতির সুরক্ষা জীববৈচিত্র্যের স্বার্থে অপরিহার্য। এ বিষয়ে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ও আনতে হবে। সরকারের পাশাপাশি আমাদের নিজেদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। মনে রাখা দরকার, নিরাপদ জীবনের জন্যে জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিকল্প নেই।

আজকের নির্বাচিত চিঠি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট