চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

‘কিশোর গ্যাং’ একটি হুমকি

আজহার মাহমুদ

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

কিশো র গ্যাং শব্দটি আমাদের সমাজে খুব বেশি দিনের নয়। এটি মূলত কিশোরদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার একটি প্রবণতা। গ্যাং বলতে আমরা জানি একাধিক জনের একটি দল, যা বর্তমানে নেতিবাচক কর্মকান্ডকে নির্দেশ করে। কিশোর গ্যাং অনেকটা সে রকম। এসব গ্যাং তৈরি হয় বিপথে যাওয়া কিশোরদের মাধ্যমে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব কিশোররা নিজেদের কার্যকলাপ শেয়ার করে। এসব কিশোরদের মধ্যে এ সময় হিরোইজম তৈরি হয়। রাতে স্পীডে মোটরসাইকেল রেস, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, ছিনতাই বা চাঁদাবাজিও এদের অন্যতম কাজ। এরপর একসময় মাদকবাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে এসব কিশোররা। এছাড়া এক এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে অন্য এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সব সময়ই দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। দ্বন্দ্ব থেকে প্রায়ই হুমকি-ধামকি ও শারীরিক আঘাতের মতো ঘটনা ঘটে থাকে। প্রকাশ্যে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েই একদল আরেক দলের ওপর হামলা চালায়। এতে খুন-খারাপির মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। সম্মানিত ও বয়োজ্যেষ্ঠদের তাদের কাছে কোন মূল্যই নেই, তাদের কোনো তোয়াক্কাই করে না এসব কিশোর গ্যাং। এদের পরনে বেশিরভাগ টি-শার্ট, চোখে সানগ্লাস। চুলে নিত্যনতুন অভিনব স্টাইল। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানে। গান গায় উচ্চৈস্বরে। পর্দার আড়ালের গ্যাং লিডার বড় ভাইরূপী গডফাদাররা এদের ‘দেখভাল’ করে। বড় ভাইরা তাদের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে এদের ব্যবহার করে।
অথচ যেখানে এই বয়সে কিশোরদের চোখে থাকার কথা দেশকে ভালবাসার স্বপ্ন, নিজেকে যোগ্যতর করে গড়ে তোলার স্বপ্ন সেই কিশোরদের চোখে আজ হিংসার আগুন। তাদের হাতে কলমের পরিবর্তে চাপাতি, রামদা, ছুরিসহ বিভিন্ন অস্ত্র। তাদের মুখে মাদকের নেশা। তাদের কাজ ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জমিদখল, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ এমনকি হত্যা।
পত্রপত্রিকায় বা টেলিভিশনে এদের গ্রেফতারের খবর মাঝে মধ্যেই দেখতে পাচ্ছি। আশঙ্কার বিষয় হলো এই ধরনের চক্র ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের মাথাব্যথার কারণ এখানেই। এসব কিশোররা সমাজ নির্মাণের কারিগর হতে পারত। অথচ আজ তাদের আচরণ বা তাদের চলন দেখলে মনে প্রশ্ন জাগে আমাদের এ কিশোর প্রজন্ম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। যদিও কয়েকটি গ্রুপ বা কয়েকজন কিশোর কিশোরী নিয়ে সামগ্রিক বিচার করা ঠিক না তবে এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে যে একসময় আমাদের বড় সংকটে পড়তে হবে না তার নিশ্চয়তা নেই।

দেখলে মনে হয় এরা অপার শান্তি পায়। তাদের এই বোধ কেন হলো। কোন নিঃসঙ্গতার জালে পড়ে এসব পথে তরুণরা পা বাড় চ্ছে সেটাও ভাববার বিষয়। শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর। তাদের এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যেখানে এসব ছেলেদের হাতে থাকার কথা বই। এদের কালচার হবে একাডেমিক। রাস্তায় কুপিয়ে মানুষ মারতে এদের হাত কাঁপে না। অথচ ওদের হাতেই দেশের ভবিষ্যত গড়ার দায়িত্ব ছিল।

তবে এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা বেশিরভাগ, ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারের সন্তান যারা ছোটবেলা থেকেই একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শৈশবকালীন সময় পার করেছে, পথশিশু যারা সমাজে সর্বদাই অবহেলিত এবং আনন্দের কোন উপলক্ষ পায়নি এবং সেই সব কিশোর যারা প্রযুক্তিকে নেতিবাচক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দারিদ্রতা, খেলাধুলার অভাব, পারিবারিক মনিটরিং এর অভাবে ছেলেরা এই বিপথে হাটছে। তাই এটা নিয়ে রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে। কিশোর গ্যাংয়ের কারণে সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। পিতামাতাগণ সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন চিন্তিত। এই বুঝি সন্তান কোন দলের সাথে জড়িয়ে গেল।

তবে পিতা-মাতা ও অভিভাবকরা চাইলেই নিজেদের সন্তানকে এসব থেকে দূরে রাখতে পারেন। এজন্য অবশ্যই নিজের কিশোর বয়সের সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলাভাবে মিশতে হবে। বুঝতে হবে সন্তান কি চায়! অবশ্যই সন্তানের সব অন্যায্য চাহিদা পূরণ নয় বরং যেটা দরকারি সেটাকেই পূরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে কিশোরগণ আমাদেরই দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার। এদের সুপথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সকলের।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট