চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে জাতীয় গ্রিডে সৌরবিদ্যুৎ

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১৯ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎশক্তি জীবনীশক্তির মতোই গুরুত্ববহ। বিদ্যুৎ আছে তো জীবন গতিশীল আছে; বিদ্যুৎ নেই জীবন যেনো গতিহীন হয়ে পড়লো। বিদ্যুতের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, স্বচ্ছন্দ ও শান্তিময় জীবন যাপন, বিনোদন সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়ে। বিদ্যুতের অভাবে উন্নয়নের গতিও থেমে যায়। যার কারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার জীবন আর উন্নয়নের চাকাকে গতিশীল রাখতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদামতো নির্বিঘœ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নির্বাচনী ইশতিহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী এই দলটি ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে জনরায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর সর্বপ্রথম বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে গ্রহণ করে বহুমাত্রিক কর্মসূচি। ফলে স্বল্পসময়েই দেশ বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে সক্ষম হয়। এখন নানা ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে দিনদিন। সরকার বিদ্যুতের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটাতে নিচ্ছে একের পর এক পদক্ষেপ। সর্বশেষ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো গত বধুবার। এটি আমাদের জন্যে আশা জাগানিয়া সুসংবাদ নিশ্চয়ই।

সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা নিয়ে দেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইতে, যেখানে আজ থেকে ৬০ বছর আগে, ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রমত্ত কর্ণফুলি নদীতে বাঁধ দিয়ে দেশের প্রথম এবং একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করা দেশের প্রথম সৌর প্যানেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দাপ্তরিক নাম ‘কাপ্তাই ৭.৪ মেগাওয়াট সোলার পিডি গ্রিড কানেকটেড বিদ্যুৎকেন্দ্র’। এখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে সারাদেশে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করার সময় বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বিশেষ অঞ্চল এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। দুর্গম এ অঞ্চলটি নিয়ে সরকারের আলাদা কর্মপরিকল্পনা আছে। বিদ্যুৎ নিয়েও আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো গ্রাম অন্ধকারে থাকবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁঁছে দেয়া হবে। তাঁর মতে, দুই দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ ছিল, যেটা ১৯৭৬-৭৭ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সরকার গঠন করার পর পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার শান্তিচুক্তি করে। চুক্তির পর পার্বত্য এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কারণে আর্থসামাজিক উন্নয়ন আরো বাড়বে। এ বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার বহির্প্রকাশ ঘটেছে। উন্নয়নের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণেও দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে একের পর এক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তিনি রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর জীবনমান উন্নয়নেও নিয়েছেন নানামাত্রিক পদক্ষেপ। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের ফলে শিক্ষাদীক্ষা, চাকরি, চিকিৎসাসেবা সব ক্ষেত্রেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অনেক এগিয়ে গেছে। সেখানকার জনগোষ্ঠীগুলোর জীবনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সন্দেহ নেই। তবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-কে গতিশীল রাখতে ও টেকসই সুফল ভোগ করতে চাইলে শান্তি ও সৌহার্দ্যময় পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। সরকারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে সৃষ্টি করতে হবে সম্মিলিত জনপ্রতিরোধ।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে বিশ্ব। এরই সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলি জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গায় ২৩ একর জায়গার ওপর সৌরশক্তির সাহায্যে সরকারিভাবে দেশের প্রথম সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। সরকারের লক্ষ হচ্ছে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিদ্যুতের মোট উৎপাদনের ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে উৎপাদনের। এ প্রকল্পের প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ টাকা ৪৮ পয়সা। আগামী দু’বছর চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেডটিই করপোরেশন এটির দেখভালের দায়িত্বে থাকবে। এরপর তা কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রাঙামাটি, কাপ্তাই ও লিচুবাগান পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের পর আরও দুই-তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জমা থাকে। যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের। সরকারের এসব উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে বিদ্যুতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে। তবে পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি উদ্যোগকেও উৎসাহিত করা দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট