চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

গর্ভাবস্থায় মায়েদের ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা

ডা. নার্গিস রোজেলা

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২০ পূর্বাহ্ণ

গর্ভাবস্থায় মায়েদের ডায়াবেটিস হওয়া মানে আতংকের বিষয় যেটাকে আমরা জিডিএম বলি। সহজে গর্ভবতী মেয়েরা মেনে নিতে পারে না যে, রোগীর ডায়াবেটিস হতে পারে অর্থাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া। আসলে গর্ভবতী রোগীর জন্য ডায়াবেটিস তেমন কিছুই নয়, যদি না গর্ভবতী মায়েরা শৃংখলা নিয়ম মেনে চলেন। তবে এটা ধ্রুব সত্য স্বাভাবিক গর্ভবতী মায়েদের চেয়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের জীবন কাঠামো একটু ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। ডায়াবেটিসের কারণে মা ও বাচ্চার বিভিন্ন ধরণের জটিলতা দেখা দেয়, যেটা আমরা সহজেই সমাধান করতে পারি ইনসুলিন ইনজেকশন এর মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে।
অনেক গর্ভবতী মহিলা ইনসুলিনের কথা শুনে ভয় পায় এবং চিকিৎসা নিতে চায় না। এটা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। ইনসুলিনের দ্বারা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে এবং মায়েদের মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনে।

এতে মা ও শিশু দু’জনেই নিরাপদে থাকে। এক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের একটু ঘন ঘন চেক আপে আসতে হবে শুধু জটিলতাগুলো এড়ানোর জন্য। এক কথায়, ইনসুলিনের ব্যবহার মায়ের মৃত্যুহার অনেকাংশে কমিয়ে এনেছে, পাশাপাশি শিশুমৃত্যুর হারও কমছে। অনেক গর্ভবতী মা ও পরিবারের ধারণা ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাভাবিক ডেলিভারী হয় না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে ও গর্ভাবস্থায় অন্যান্য অসুবিধা যেমন- উচ্চরক্তচাপ, পজিশান স্বাভাবিক থাকলে সিজার হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

ডেলিভারীর সময় যতই ঘনিয়ে আসে ততই শরীরে ইনসুলিনের চাহিদা বেড়ে যায়। তদ্রুপ ইনসসুলিনের চাহিদা কমেও যায় ডেলিভারীর পর। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগটি বেড়ে যায়, যদি তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী না চলে ও ওষুধ সেবন না করে, ইনসুলিন ঠিকমতো না দেয়। দেখা গেছে ৯০% মহিলাদের জিডিএম হয়। এসময় মায়েদের জটিলতা যেমন- গর্ভপাত, সময়ের আগে প্রসব ব্যথা, বাচ্চার ওজন বেড়ে যাওয়া, ডেলিভারীর পর রক্তক্ষরণ, ইনফেকশন ইত্যাদি। স্বাভাবিক গর্ভবতী মায়েদের তুলনায় জিডিএম মায়েদের অসুবিধা বেশী হয় ও এদের মরবিডিটি হয় ৫৯%। আবার দেখা গেছে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত ও নিয়মিত ইনসুলিন, ওষুধ ও নিয়ম মেনে না চলার জন্য গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন জটিলতার কারণে ৫০% গর্ভবতী ডায়াবেটিক মহিলার ডেলিভারী হয় সিজারিয়ানের মাধ্যমে। নিয়মিত চেক আপ ও ইনসুলিন ইনজেকশন দ্বারা কিছুটা স্বাভাবিক ডেলিভারীর পর্যায়ে ফেলা যেতো। এর পাশাপাশি একজন পুষ্টিবিদের দ্বারা ডায়াবেটিসের খাদ্যতালিকার ব্যাপারে জ্ঞান রাখা জরুরি। তবেই তো আমরা একজন সুস্থ মা ও সুস্থ বাচ্চা আশা করতে পারি। গর্ভাবস্থায় অন্যান্য পরীক্ষার মতো ডায়াবেটিস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

মনে রাখতে হবে, যদি ডায়াবেটিস মহিলা রোগী মা হতে চায়,
তাহলে গর্ভকালীন সময়ের আগে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ও রোগী যদি গর্ভধারণ করতে চায় তাদের এইচবিএওয়ানসি ৭ এর নীচে হতে হবে। সর্বোপরি ৩ জন যেমন- ডায়াবেটোলজিস্ট, অবসটেট্রিশিয়ান ও ডায়েটিশিয়ান দ্বারা সুস্থ সন্তান ও নিরাপদ ডেলিভারী সম্ভব জটিলতা ছাড়াই।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান (গাইনী), চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল; প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট