চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

থেমে নেই বখাটেপনা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সামাজিক অনুশাসন না থাকার পরিণতি কী হতে পারে, তা আমরা এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি। গ্যাং কালচারের বিপজ্জনক বিস্তৃতি ঘটার পাশাপাশি বখাটেপনার ব্যাধিকেও ছড়িয়ে দিয়েছে দেশব্যাপী। বখাটেরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তাদের পাশবিক শিকারে পরিণত হচ্ছে অসহায় কিশোরী, তরুণী, বিশেষত মেয়ে শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও গৃহবধূরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে বখাটেরা একের পর এক ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ ও দমনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে প্রশাসন। দিনকয়েক আগে পিরোজপুরের ভা-ারিয়ায় বখাটের উৎপাত সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে রূপা নামের এক স্কুলছাত্রী। বখাটেদের উৎপাত সইতে না পেরে এভাবে আরো অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এবং লজ্জার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যদি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতো এবং বখাটেসন্ত্রাসীরা দলে আশ্রয়-প্রশ্রয় না পেতো তাহলে কি এমন পাশবিক ঘটনার রাশ টানা কঠিন হতো?

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নানা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে বখাটেপনা। বখাটেপনা নামের এই যৌনসন্ত্রাস থেকে রক্ষা পেতে অনেক মেয়েই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে মা-বাবা-অভিভাবক তথা শিক্ষককেও। কোনো একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর প্রতিবাদ হয়, মানববন্ধন হয়, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি উঠে। পত্রপত্রিকায়ও প্রচুর লেখালেখি হয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে প্রভাবশালীদের প্রশ্রয়ে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। কিছুদিন পর সব চাপা পড়ে যায়। আবার আগের চেহারায় ফিরে আসে বখাটেরা। এতে শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন হচ্ছে না। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও রহস্যজনক। ফলে সামাজিক এই ব্যাধিটি থেকে কোনোভাবেই মুক্তি মিলছে না। দ্রুত বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। বখাটেরা হয়ে উঠছে অপ্রতিরোধ্য। শেষ পর্যন্ত বখাটেপনায় অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে রূপারা। উল্লেখ্য, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং অপকর্মে আশকারা পেতে পেতে অপরাধীদের চিন্তাভাবনা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, ঘৃণিত কাজ করাকে তারা নিজেদের অধিকার হিসেবে গণ্য করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন অপরাধের সাথে ক্ষমতার রাজনীতিরও সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে। এ অপকাজে বাধা দিতে গিয়ে নীতিবান মানুষরা বখাটেদের বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন। ফলে, সাধারণ মানুষ অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসছে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সমাজ থেকে ন্যায়নীতির চেতনা ও সৎসাহস বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কোনো সভ্য ও সুস্থ সমাজে এমন চিত্র কাম্য হতে পারে না।

বখাটেসন্ত্রাসীদের উৎপাতে অসংখ্য মেয়ের আত্মহননের পাশাপাশি বহু মেয়ে-শিক্ষার্থীর লেখাপড়া চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু বখাটেরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ধারাবাহিকভাবে অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। আবার মামলা ও তদন্তের দুর্বলতার কারণে অনেক আসামি শাস্তি থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। এই চিত্রের চির অবসান ঘটাতে হবে দেশ ও জনস্বার্থে। এই বর্বরদের ঠেকাতে এখনই সর্বশক্তি প্রয়োগ না করলে একসময় জাতিকে এর চরম খেসারত দিতে হবে। রূপার স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা মেধাবী শিক্ষার্থী রূপার করুণ মৃত্যুর জন্যে দায়ী বখাটেদের কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। আমরাও মনে করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বখাটেপনা নামক ব্যাধির মূলোৎপাটনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। বখাটের উৎপাতে যেন আর কোনো মেয়ের জীবন বিপন্ন না হয়, সে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট