চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এডিস মশার বিস্তার রোধে করণীয়

মো. আবদুর রহিম

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের প্রথম ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। প্রথমে জ্বরটি ঢাকায় একসঙ্গে অনেকের হয়েছিল বলে এই নাম হয়ে যায় ‘ঢাকা ফিভার’। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটি ডেঙ্গু জ্বর বলে শনাক্ত করেন। সে-সময় রোগটি ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যেই দেখা যেত। কিন্তু মাত্র কয়েক মাস রোগটি থাকত আর এবারের মতো এত ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েনি বলে আলোচনা ততটা হতো না। পরবর্তীতে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় রোগটির বিস্তার ঘটতে দেখা যায়। প্রথম দিকে সাধারণ জ্বরের মতো করে এর চিকিৎসা করা হতো, যেহেতু চিকিৎসকরা বুঝতে পারছিলেন না এটি ডেঙ্গু রোগ। তবে পরবর্তীতে রোগটি শনাক্ত করার পর চিকিৎসা পদ্ধতিও নির্ণয় করা হয়। কিন্তু এবার যত ব্যাপকভাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে, এর আগে আর তেমনটা দেখা যায়।

ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার দেহে সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে, যে কারণে এটি টাইগার মশা বলা হয়। এ জাতীয় মশা মাঝারি আকারের হয়ে থাকে এবং এর অ্যান্টেনা বা শুঙ্গটি কিছুটা লোমেশ দেখতে হয়। এডিস মশার অ্যান্টেনায় অনেকটা দাড়ির মতো থাকে। পুরুষ মশার অ্যান্টেনা স্ত্রী মশার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি লোমশ দেখতে হয়। দেহের ডোরাকাটা দাগ এবং অ্যান্টেনা দাগ দেখে এডিস মশা চেনা সম্ভব।

শুধুমাত্র দিনের আলো থাকাকালীন সময়েই এডিস মশা কামড়ায়। তবে কামড়ানোর হার সবচেয়ে বেশি থাকে সূর্যোদয়ের পর দু-তিন ঘণ্টা এবং সূর্যাস্তের আগের কয়েক ঘণ্টা। রাতে এডিস মশা কামড়ায় না। তবে এডিস মশা কামড়ালে যে মানুষের ডেঙ্গুজ্বর হবেই, বিষয়টি এমন নয়। পরিবেশে উপস্থিত ভাইরাস এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হলে সেই মশার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এডিস মশা ভাইরাস সংক্রমিত থাকা অবস্থায় মানুষকে কামড়ালে সুস্থ মানুষের ডেঙ্গু হতে পারে। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির শরীর থেকে এডিস মশার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমন হওয়ার পরও ঐ মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া কী : ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত জ্বর, যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। সাধারণ চিকিৎসাতেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া জ্বর সেরে যায়, তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক হতে পারে। এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি রোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

উপসর্গ : হঠাৎ করেই বেশ জ্বর হয় ( ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হয়। গিটগুলো ফুলে ওঠে। কখনো কখনো শক্ত হয়ে গিয়ে খুবই অস্বস্থিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে এবং ব্যাথায় শরীর বেঁকে যায়। জ্বরের সাথে সাধারণত হাতে ও পায়ে র‌্যাশ ওঠে। মুখমন্ডল, হাত ও পায়ের তালুতেও হতে পারে। মাথাব্যাথা, মাথাঘোরা, বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া, অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠে, মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত ১/২ সপ্তাহের মধ্যে রোগে সুস্থ বোধ করতে পারে। তবে প্রথম থেকে সচেতন না হলে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ করণীয় : ঘর-বাড়ি এবং আশেপাশে যেকোন পাত্র বা জায়গায় জমে থাকা পানি ৩ দিন পরপর ফেলে দিলে এডিস মশার লার্ভা মরে যাবে। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ঘঁসে পরিস্কার করতে হবে। ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, নারিকেলের মালা, কন্টেইনার, মটকা, ব্যাটারী শেল, পলিথিন/চিপসের প্যাকেট ইত্যাদিতে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে।

অপ্রয়োজনীয়/পরিত্যক্ত পানির পাত্র ধ্বংস অথবা উল্টে রাখতে হবে, যাতে পানি না জমে। দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু মশা শরীরের খোলা জায়গায় কামড় দেয়, তাই যতদূর, সম্ভব শরীর পোশাকে আবৃত থাকে এমন পোশাক পরা উচিত। সম্ভব হলে জানালা এবং দরজায় মশা প্রতিরোধ নেট লাগান, যাতে ঘরে/বাড়িতে মশা প্রবেশ করতে না পারে। প্রয়োজনে শরীরের অনাবৃত স্থানে মশা নিবারক ক্রিম/লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে (মখুমন্ডল ব্যতিত)। বর্ষার সময় এ রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই এ সময় অধিক সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বাড়ির আঙ্গিনা, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত এলাকায় এডিস মশা জন্ম নিতে পারে এমন সব স্থান পরিচ্ছন্ন রাখুন। আসুন, ভয়াবহ এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য আমরা সবাই সচেতন হই।

লেখক : স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট