চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ডেঙ্গু এখনো আতঙ্ক নাগরিক সচেতনতা জরুরি

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগের পর ডেঙ্গুপরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ডেঙ্গু এখনো আতঙ্ক হিসেবেই রয়ে গেছে। এখনো ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপ্টেম্বর তো বটেই, অক্টোবরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে জোরালো। এ অবস্থায় মশার বংশবিস্তার রোধে বহুমাত্রিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

উল্লেখ্য, ডেঙ্গু এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস ইজিপ্টি নামে এক ধরনের মশা এ ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে। ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা শরীরে কামড় দেয়ার পর রক্তের মনোসাইটে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জীবাণু বংশবিস্তার করে। প্রবহমান রক্তের মাধ্যমে জীবাণু হার্ট, লাং, লিভার ও কিডনিতে প্রবেশ করে অধিক হারে বংশবিস্তার করে এসব গুরুত্বপূর্ণ কোষের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোষঝিল্লিতে আক্রমণ করে প্রদাহের সৃষ্টি করে। কিডনির মূত্র উৎপাদনের কার্যকারিতা হ্্রাস পায় এবং লিভার অকার্যকর হয়। তবে যথাসময়ে শণাক্ত ও যথাযথ চিকিৎসা হলে ডেঙ্গুতে ক্ষতি কম হয়। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এবার ডেঙ্গু ধরন পাল্টেছে। ফলে শণাক্তকরণও কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম লক্ষণ ছিল শরীরে র‌্যাশ থাকা। কিন্তু চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে র‌্যাশ দেখা যাচ্ছে না। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষায় শনাক্ত হলে রোগী কিংবা তার স্বজনকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বলে জানানো হয়, কিন্তু কোন টাইপের, সেটি শনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে। এতে রোগীর চিকিৎসাবঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগীদের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার, ফুসফুস ও হার্ট আক্রান্ত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অকার্যকরও হয়ে পড়েছে। এটি উদ্বেগকর। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করতে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নিতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গুর নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণাও দরকার, যাতে শণাক্তকরণ ও সুচিকিৎসা সহজ হয়। চার ধরনের সেরোটাইপ ডেঙ্গুর (ডিইএনভি-১, ডিইএনভি-২, ডিইএনভি-৩ এবং ডিইএনভি-৪) মধ্যে কোনটির প্রকোপ দেশে বেশি কিংবা কোনটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি।

প্রসঙ্গত, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস ইজিপ্টাই প্রজাতির মশা নালা-নর্দমার নোংরা পানিতে নয়, স্বচ্ছ পানিতে বংশবিস্তার করে। সাধারণত বাড়ির আশপাশে ফেলে রাখা পরিত্যক্ত জিনিস এবং ঘরের ভেতরে জমিয়ে রাখা পানিতেই এদের বংশবিস্তার বেশি হয়। এ অবস্থায় নগরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদারের পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে শহরবাসীকে সচেতন করার বলিষ্ঠ কর্মসূচির বিকল্প নেই। চসিক কর্মীদের পক্ষে ঘরের ভেতরে ঢুকে গৃহ পরিষ্কার ও লার্ভানাশক ছিটানো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং নগরবাসীকে নিজ থেকেই সচেতন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকেও পালন করতে হবে দায়িত্বশীল ভূমিকা। সবাই যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার হলে অবশ্যই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাফল্য আসবে। যত্রতত্র পরিত্যক্ত জিনিসপত্র ফেলে না রেখে, ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে নিজ নিজ ঘরে মশার বংশবিস্তার রোধে সাধারণ মানুষ কার্যকর ভূমিকা রাখলে মশার বিস্তার সহজেই রোধ হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ঙ্গেুর প্রকোপ অনেক বেশি। এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সামনের দিনগুলোতে এমন আরো অনেক বিপদ আসতে পারে বিশ^বাসীর জন্য। পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হলে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ পানি ও কীটপতঙ্গবাহী অনেক রোগই মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞানীদের এই বক্তব্যকে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। আমাদের উচিত, বিজ্ঞানীদের দাবিকে আমলে নিয়ে এখনই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে মনোযোগ দেয়া।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট