চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

শরতের উৎসবে বাংলাদেশের রূপ

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সারাবছর এক এক ঋতু এক এক রূপ নিয়ে প্রকৃতিতে আবির্ভূত হয়। বর্ষার অশ্রুসজল চোখে বিদায় নেয় শ্রাবণ মাস। গ্রাম বাংলায় উৎসবের আমেজ নিয়ে যেন শরতের আগমন। ভাদ্র মাসে মিষ্টি আলোর স্পর্শ নিয়ে প্রকৃতির কানে কানে ঘোষণা দেয় শরতের আগমন বার্তা। নীল আকাশে শিমুল তুলোর মতো ভেসে চলে সাদা মেঘ, ফুলের শোভা আর শস্যের শ্যামলতায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে শরৎ। নদীতীরে সাদা কাশফুল, গাছে গাছে হাসনুহানা আর বিলের জলে নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে সাদা ও লাল শাপলার সমারোহ সব মিলিয়ে শরৎ যেন শুভ্রতার ঋতু। শরতের আগমনের বাংলার বন-উপবন, দোয়েল, কোয়েল, ময়নার কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। চারদিকে সজীব গাছপালার ওপর বয়ে যায় শেফালি ফুলের গন্ধভরা ফুরফুরে মিষ্টি হাওয়া। শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দূর্বাঘাসের ওপর চাদরের মত বিছিয়ে থাকে শিউলিফুল। আমন ধানের সবুজ চারার ওপর ঢেউ খেলে যায় উদাসী হাওয়া। ফসলের মাঠের একপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর তীরে কাশবনের সাদা কাশফুল কখনো হাতছানি দিয়ে ডাকে। কাশফুলের মনোরম দৃশ্য সত্যিই চোখ ফেরানো যায় না।

শরৎকালে রাতের বেলায় জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ। শরৎ মানেই গাছে পাকা তাল। সেই তাল দিয়ে তৈরি পিঠা, পায়েস। আর ক্ষেতে ক্ষেতে আমন ধানের বেড়ে ওঠা চারা। শরতের জ্যোৎস্নার মোহিত রূপ নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যায় না। শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে রূপময়। এই সৌন্দর্যের জন্য শরৎ কালকে ঋতু রাণী বলা হয়। মাঠভরা সোনার ধান দেখে কৃষকের মনে দানা বেঁধে ওঠে আসন্ন সুখের স্বপ্ন। শরৎকে নিয়ে কবিতা লেখেনি, এমন কবি বিরল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথসহ প্রতিটি কবির হৃদয় শরতের আগমনী দোলায় আন্দোলিত হয়েছে। আশ্বিন মাসে কাশের গুচ্ছ, শিউলির ঘ্রাণ আর আকাশের সাদা মেঘের ভেলা সব কিছুই যেন দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শরতেই উদযাপিত হয়। তাই একে বলা হয় শারদীয় উৎসব। ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি ও আরতিতে মুখরিত হয় পাড়া-মহল্লা ও গ্রাম। শরৎ বাঙালির উৎসবের বার্তাবহ এবং সফলতার নিপুণ কারিগর। শরৎ বাংলাদেশকে উৎসবের আনন্দে হাসিয়ে এবং বিসর্জনের বেদনায় কাঁদিয়ে বিদায় নেয়।

শ্রীধর দত্ত
চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট