চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্মৃতিতে অমলিন প্রিয় চাচা ইউসুফ চৌধুরী

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টল দরদী আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী একটি বিশাল মহিরূহ। তাঁকে আমি চাচা সম্বোধন করতাম। আজ থেকে বার বছর আগে আমরা এই মহান মানুষটিকে হারিয়েছি চিরদিনের জন্য। কালের আবর্তনে আমরা মৃত মানুষদের প্রায়শ ভুলে যাই। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ স্মৃতির আয়নায় জাগরুক থাকেন সবসময়। তেমনি একজন মানুষ ইউসুফ চৌধুরী। নিরহংকার, নিভৃতচারী আর প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন তিনি। এই বিশাল হৃদয়ের মানুষটি আর আমাদের কাছে কোনদিন ফিরে আসবেন না। নবী ও রাসূল হযরত মোহাম্মদ (স.) এর প্রিয় দশ হাজার সাহাবীর কবরগাহ জান্নাতুল বাক্বিতে তিনি শুয়ে আছেন। ক’জনের ভাগ্যে জুটে এই দুর্লভ সৌভাগ্য। নির্মোহ আবেগে, গরীব-দুঃখী মানুষের তরে খুব বেশি কাছাকাছি গিয়েছিলেন তিনি। নির্ভেজাল এই সাদা মনের মানুষটি সকলের খুবই প্রিয় ও শ্রদ্ধাস্পদ ছিলেন।

হাজার হাজার সাহাবীর স্মৃতিধন্য জান্নাতুল বাক্বিতে তাঁর দাফন হওয়া প্রমাণ করে একজন ভালো মানুষ হিসেবে দুনিয়ায় যে নেক আমল তিনি করেছেন তার পুরস্কার মহান আল্লাহ্তায়ালা দুনিয়াতেই তাঁকে প্রদান করেছেন। ‘কোনো প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরবে না, (আল্লাহতায়ালার কাছে সবার) দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট, যে ব্যক্তি পার্থিব পুরস্কারের প্রত্যাশা করে আমি তাকে (এ দুনিয়াতেই) তার কিছু অংশ দান করি, আর যে ব্যক্তি আখেরাতের পুরস্কারের ইচ্ছা পোষণ করবে, আমি তাকে সে (পাওনা) থেকেই এর প্রতিফল দান করবো এবং অচিরেই আমি কৃতজ্ঞদের প্রতিফল দান করবো’- সূরা আল্-ইমরান আয়াত- ১৪৫।
চাচার সাথে আমার হৃদ্যতা ছিল। পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠালগ্নে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেয়ার পর ধীরে ধীরে তা আরো বেড়ে যায়। চারটি বছর আমি এই দায়িত্বে ছিলাম। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চাচার সাথে সম্পর্কের এতটুকু চিড় ধরেনি। চাচার সাথে আরো ঘনিষ্টতা বেড়েছে রাউজানের হলদিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম এহছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল এর পৃষ্ঠপোষকতায় ও রাউজান ক্লাবের উদ্যোগে একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করতে গিয়ে। ৩৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এতে অংশ নেন। সেদিন রাউজান ক্লাবের কার্যক্রম ওনার নজর কাড়ে। এরপর আমাদের প্রতিষ্ঠানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমাদের প্রতিটি জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি জননন্দিত দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে।

রাউজান ক্লাব ভবন নির্মাণে তাঁর অকৃত্রিম সহযোগিতা আমাদেরকে ঋণী করে রেখেছে। চিকিৎসা পেশার ফাঁকে ফাঁকে চাচা ইউসুফ চৌধুরীর নাছিরাবাদস্থ অফিসে হাল্কা আড্ডা দেওয়ার স্মৃতি আজ খুবই মনে পড়ছে। রাউজান ক্লাব ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই গুণীব্যক্তিকে পেয়ে রাউজান ক্লাব পরিবার ভীষণ আবেগে উদ্বেলিত হয়েছিল তখন। তিনি সবসময় দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। চট্টগ্রামের উন্নয়নে ছিলেন সোচ্চারকণ্ঠ।
তাঁর অক্লান্ত চেষ্টায় চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভেটেরিনারি বিশ^বিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান। আরো নানা ক্ষেত্রে তাঁর অবদান রয়েছে। চট্টগ্রামের উন্নয়ন আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি গরীব-দুঃখী মানুষকে অকাতরে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। দৈনিক পূর্বকোণের মাধ্যমে তুলে ধরতেন এই অঞ্চলের উন্নয়নবঞ্চনার চিত্র। তুলে ধরতেন সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার চিত্র। তুলে ধরতেন অনিয়ম-শোষণ-বঞ্চনার চিত্র। আজ তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও তাঁর কর্ম এবং আদর্শ আমাদের পথ দেখাচ্ছে।

আইয়ুব মনোয়ারা ফাউন্ডেশন ও রাউজান ক্লাব তাঁর স্মরণসভা করেছিল চট্টগ্রাম ক্লাব চত্বরে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তৎকালীন উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ছিলেন প্রধান অতিথি। তিনি মরহুম ইউসুফ চৌধুরীকে সভ্যতার বরপুত্র হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। আমরা দীর্ঘ ১২ বছর পর এই মানুষটির প্রতিটি কর্ম, প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সাহসকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। আমরা তাঁর আদর্শকে ধারণ করে পথ চলতে পারলে নিজেরা যেমন সম্মানীত ও মর্যাদাবান হবো, তেমনি দেশ ও দশের কল্যাণে অবদান রেখে যেতে পারবো।

লেখক : সভাপতি, রাউজান ক্লাব, জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জেনারেল হাসপাতাল, রাঙ্গামাটি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট