চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

নিউমোনিয়ার প্রকার ও প্রতিকার

অধ্যক্ষ ডা. রতন কুমার নাথ

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ফুস ফুস প্রদাহ কেই আমরা সাধার ণত নিউমোনিয়া বলে থাকি। ফুসফুস তন্তুর তরুণ প্রদাহ হয়। এ রোগে এটা দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। একটি লোবার নিউমোনিয়া অন্যটি লোবিউলার নিউমোনিয়া। একে আবার বঙ্কোনিউমোনিয়াও বলে। লোবার নিউমোনিয়ায় ফুসফুসের একটি খ- (খঙইঊ) প্রবাহযুক্ত হয়। কিন্তু লোবিউলার নিউমোনিয়ায় ফুসফুসের লোবিউল আক্রান্ত হয়। এতে ফুসফুসের বায়ুনালীগুলিও প্রবাহিত হয়। প্রাথমিক নিউমোনিয়ায় প্রায়ই ফুসফুসের খ-ে প্রবাহ হয়। কিন্তু নিউমোনিয়ায় স্ট্রেপটোকক্কাস নামক জীবাণুই প্রদাহের কারণ। এছাড়া আরও নানাবিধ জীবাণু হতে এ রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ রোগে সাধারণত চারটি অবস্থা পর পর দেখা দেয়। ১।রক্তাধিক্য : এটা প্রাথমিক অবস্থা এতে আক্রান্ত ফুসফুসের লোব রক্তপূর্ণ, ভারী এবং শক্ত হয়ে যায়। সাধারণত এটা এ অবস্থা ২/৩ দিন ও স্থায়ী হয়ে থাকে। ২। কনসোলিডেশান : প্রথমে অবস্থার পর এটা দ্বিতীয় অবস্থা। এ অবস্থায় আক্রান্ত ফুসফুসটি আয়তন খুব বেড়ে যায়। ভারী নিরেট ও ভঙ্গুর হয়। এ অবস্থাটাকে রেড হেপাটাইজেশান বলে। এ অবস্থা ১০ থেকে ১২ দিন স্থায়ী হয়।

৩। গ্রে-হেপাটাইজেশান : রোগ ক্রমশ অগ্রসর হয়ে তৃতীয় অবস্থায় আসে। এ অবস্থায় আক্রান্ত ফুসফুসটির রঙ ক্রমশ ধূসর হয়ে ভারী ও নিরেট এবং ফুসফুস থেকে যে রস বের হয় তা ক্রমশ পুঁজে পরিণত হয়। এ অবস্থা বেশীদিন থাকলে ফুসফুসের কোন কোন অংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থা খুবই সাংঘাতিক। অধিকাংশ রোগী এ অবস্থায় মারা যায়। ৪। শোষণ বা জবংড়ষঁঃরড়হ : রোগী তৃতীয় অবস্থা কোন রূপে কাটিয়ে উঠতে পারলে এ অবস্থায় বা চতুর্থ অবস্থায় আসে। একে প্রকৃতপক্ষে আরোগ্য অবস্থা বলা চলে। এ সময় রোগীর জ¦র কমে আসে, আক্রান্ত ফুসফুস হতে নিঃসৃত রস শোষিত হয় এবং বাকিটা কাঁশির সাথে বেরিয়ে যায়। এ অবস্থাটাকে শোষণ কাজ খুব সফলতার সাথে সম্পন্ন করা যায়।
প্রায়ক্ষেত্রেই হঠাৎ ঠা-ালেগে রোগীর সর্দি, কাশি, জ¦র শুরু হয়। ঠা-াভাব এবং কাঁপুনি ভাবই খুব প্রবল দেখা যায়। এ সময় শিশুদের আক্ষেপ-ও হতে পারে। সেসময় বমিও থাকে। সঙ্গে ভীষণ মাথাব্যথা এবং বুক ব্যথা হবে। প্রথম থেকেই কাশি থাকবে। জ¦র খুব বাড়তে থাকবে। এবং ১০৩০ থেকে ১০৫০ পর্যন্ত বাড়তে পারে। জ¦র সহজে ছাড়ে না। ১ম ৭দিন জ¦র লেগেই থাকে। মুখম-ল লাল হবে, দৃষ্টানি ও অস্থিরতা থাকবে। শ^াস প্রশ^াসের পরিবর্তন খুব দ্রুত হবে। প্রতি নাড়ির গতি একশ দশের বেশী হলে খুবই সাবধান হতে হবে। নাড়ির গতি এর চাইতে বাড়লে অর্থাৎ ১২০ এর দিকে গেলে হঠাৎ রোগী মারা যেতে পারে। রোগের প্রথমেই শ্লেষ্মা অনেক সময় বের হয় না।

জিব শুকনো ও বাদামি রঙের মত হয়। প্রস্রাব কমে গিয়ে গাঢ় রক্ত বিশিষ্ট হয়, তাতে ক্লোরাইডনামে রাসায়নিক পদার্থ কমে যায়।
নিউমোনিয়া রোগীর রক্তে শে^তকণিকা খুব বেশী বেড়ে যায়। জ¦রের সাথে প্রায়ই প্রলাপ থাকে। ৭/৮ দিন পর জ¦র হঠাৎ নেমে গিয়ে রোগী ভীষণ অবসন্ন হয়ে পড়ে। এটা অত্যন্ত সংকট কাল ৩/৪ ঘণ্টার মধ্যে জ¦র হঠাৎ নেমে গিয়ে ৯৬০, বা ৯৭০ নেমে যেতে পারে। সংকটকালের ন্যায় নিউমোনিয়ায় একটি কথা চলতি আছে যেটা হচ্ছে লাইসিস বা রোগের ক্রমশ হ্রাসপ্রাপ্তি। বঙ্কোনিউমোনিয়ায় জ¦র অনেক সময় ৫ দিনে কোন কোন ক্ষেত্রে ৭ দিন বা ৯ দিন লাগতে পারে।
রোগ সারলেই নিউমোনিয়ায় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল এ ধারণা করা ভুল। কারণ নিউমোনিয়ার পরবর্তী বহু উপস্থিত হতে পারে। যেমন ক) বিলম্বিত গাত্রতাপ বা উঊখঅণঊউ ঋঊঠঊজ হতে পারে। খ) প্লরিসি দেখা দিতে পারে গ) ভ্রাম্যমাণ নিউমোনিয়ার মত যা অনেক সময় ফুসফুসের একটি লোব ছেড়ে অন্য লোবে বিস্তার লাভ করে। ঘ) রক্তদূষণ বা সেপটিনিমিয়া দেখা দিতে পারে। ঙ) পেরিকারডাইটিস এর মত উপশম দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ বক্ষে পুঁজ হয়ে এ উপসর্গটি উপস্থিত হয়। এতে হৃদপি-ের শব্দ ক্ষীণ হয়ে ডান প্রকোষ্ঠের প্রসারণ, শ^াসকষ্টসহ নীলবর্ণ হয়ে অবশেষে রোগী হার্টফেল করতে পারে। চ) নিউমো টাইফয়েড এর মত অনেক সময় হতে পারে। দুর্বলতা, প্রলাপ, উদরাময় হয়ে জিব শুকিয়ে যায়। এসব সন্ধিক্ষণের অবস্থায় বিপদের সম্ভাবনা বেশী থাকে। এবং আরোগ্য হতে দেরী হয়। ছ) চর্মরোগের মত হয়ে মধ্যকর্ণ আক্রান্ত হতে পারে। কানে পুঁজ হতে পারে এবং কানের পুঁজ ভাল হলেই জ¦র কমতে থাকে। এছাড়াও জ) মস্তিষ্কের ঝিল্লিপ্রদাহ ঝ) অন্ত্রাবরক ঝিল্লিপ্রদাহ ও ঞ) অস্থিসন্ধিপ্রদাহ ও হতে পারে।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট