চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

আসামে নাগরিক তালিকা : বাঙালি ও বাংলাদেশ

নাওজিশ মাহমুদ

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

আসামের নাগরিক তালিকা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা বাংলাদেশকে কতটুকু খেসারত দিতে হবে, তার হিসাব-নিকাশ নিয়ে এখন থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। যদিও ব্যাপারটি ভারতের আভ্যন্তরীণ সমস্যা। তবুও বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া বিরাট অংশ নাগরিক হিন্দু বাঙালি ও মুসলিম বাঙালি। মুসলমানেরা ১৯৪৭ সালের পূর্বেই আসামের বাসিন্দা। হিন্দুদের বিরাট অংশ ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পরে সিলেট এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য অংশ থেকে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতের জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ বিদেশ থেকে আগত এবং অভিবাসী। কেউ আগে এসেছে কেউ পরে এসেছে। আসামেরও বিরাট অংশ বিদেশ থেকে আগত। অহমীয়া জনগোষ্ঠীর সাথে বাঙালি জনগোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব বহু পুরনো। আবার ১৯৪৭ সালের পর বাঙালির মধ্যে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব নতুন করে শুরু। আসামে হিন্দিভাষী এবং ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগতরা বসবাস করলেও যেহেতু বৃহৎ অংশ বাঙালি ও অহমীয়া, তাই হিন্দু-মুসলিম এবং বাঙালি-অহমীয়া দ্বন্দ্বটা প্রকট হয়ে উঠেছে।

এই দ্বন্দ্ব সৃষ্টির মূলে আছে বৃটিশ শাসনের কলাকৌশলের কূটচাল। যখন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী থেকে পৃথক করে ১৮৭৪ সালে চীফ কমিশনারের অধীনে আসাম সৃষ্টি করে, তখন বাংলাভাষী সিলেট জেলা, কাছাড় জেলা, এবং রংপুর সংলগ্ন গোয়াল পাড়াকে আসামের সাথে সংযুক্ত করা হয়। তখন বর্তমান আসাম অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয় ছিল একই শাসানধীন। বিশাল ভূখন্ডে অন্যান্য জাতিসত্তার সাথে অহমীয়াদের দ্বন্দ্বে বাঙালি-অহমীয়া দ্বন্দ্ব চাপা পড়ে থাকে। সপ্তকন্যা খ্যাত এই সকল রাজ্য আলাদা হয়ে গেলে বাঙালি-অহমীয়া দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের পূর্বেই বিশেষ করে পূর্ব বাংলা থেকে আগত কৃষকেরা আসামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আবাদ করে আসামকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বিশাল ভূমিকা রাখে। এই বাঙালি কৃষকদের আগমণকে বৃটিশ সরকারও স্বাগত জানিয়েছে তাঁদের রাজস্বের স্বার্থে। আসামের চা রপ্তানীর সুবিধার্থে এবং চা-মালিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে আসামের জন্য একটি অর্থনৈতিক করিডোর সৃষ্টির পরিকল্পনা নেয়া হয়। আসামের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরকে সংযৃুক্ত করে রাজধানী স্থাপনের প্রাথমিক ধারণাপত্রও তৈরী হয়েছিল। লর্ড কার্জন বৃটিশ শাসন দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে, ক্রম-অগ্রসসমান বাংলার হিন্দু মধ্যবেত্তর ভবিষ্যৎ বিরোধীতা ঠেকাবার জন্য মুসলিম মধ্যবিত্ত উত্থানের সুযোগ করে দেয়ার মানসে বাংলাকে বিভক্ত করে ঢাকাকে রাজধানী করে মুসলিম ও বাঙলি প্রাধান্য পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করেন। এর বিরুদ্ধে কলকাতাকেন্দ্রীক বাঙালি মধ্যবিত্তের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী নিয়মতান্ত্রিক ও সশস্ত্র আন্দোলন এবং বিলেতী পণ্য বর্জনের অর্থনৈতিক আন্দোলনের ফলে বৃটিশরা পিছু হটে। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ বাতিল করে বৃহত্তর বাংলা পুনর্গঠন করে এবং কলকাতা থেকে দিল্লীতে ভারতের রাজধানীও স্থানান্তর করে। এই সময় বাংলাভাষী গোয়ালপাড়া, সিলেট (করিম গঞ্জসহ) কাছাড়সহ আরো কয়েকটি জেলা আসামের সাথে পুনরায় সংযুক্ত করে। বাংলাভাষী পুরুলিয়া বিহারের সাথে সংযুক্ত করে বাংলাকে রূপান্তর করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, হিন্দু প্রাধান্য খর্ব করা। হিন্দু মধ্যবিত্তকে শায়েস্তা করা। যার ফলে বাংলার তিন জন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, খাজা নাজিম উদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী পদ অলংকৃত করেন। কোন হিন্দু বাংলার প্রধানমন্ত্রী হতে ব্যর্থ হন। এ কারণেই হিন্দু মধ্যবিত্তরা ১৯৪৭ সালের বাংলা বিভাজনে তৎপর হয় এবং সফল হয়। বাঙালির দুর্ভাগ্য ভিন্নমাত্রা পায়। আরেকটি কাজ বৃটিশরা করেছে। সেটা হলো বাংলা থেকে পৃথক করে অহমীয়া ভাষাকে পৃষ্ঠপোষকতা দান। রবীন্দ্রনাথ দাবী করেছিলেন, অহমীয়া বাংলার উপভাষা। অহমীয় ভাষার সাথে বাংলার বর্ণমালা এবং ভাষারীতি প্রায় কাছাকছি। তবু অহমীয়া ভাষা আলাদা ভাষা হয়ে উঠে প্রধানত নৃতাত্ত্বিক ভিন্নতার কারণে। তার সাথে যোগ হয়েছে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ। অথচ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা অন্যান্য বাংলাভাষীর কাছে অনেক বেশী দুর্বোধ্য হওয়া সত্তেও আলাদা ভাষা হয়ে উঠে নি। ভারতে বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী সোচ্চার ছিল বাঙালিরা। তাই বাঙালিদের বিকাশের রাস্তা বন্ধ করার সকল পন্থাই অবলম্বন করে তারা। তারই খেসারত আজকে বাঙালিকে দিতে হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আসামের গোয়ালপাড়া ও সিলেট (করিমগঞ্জসহ) স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ব পাকিস্তানে সংযুক্ত হওয়ার কথা। সেই সাথে একটু চেষ্টা করলে ত্রিপুরা মনিপুর মিজোরামসহ অন্যান্য অঞ্চলও পূর্ব পাকিস্তানে আনা যেত। ১৯৪৭ সালের বিভাজনের সময় মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উদাসীনতা এবং অবহেলায় তাও সম্ভব হয়নি। বাঙলার মুসলিম লীগ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে অনেক কিছুই হারিয়েছে বাংলাদেশ।

ভারত বিভাজনের সময় মুসলিম সংখ্যগিরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হলেও ভারত সকল ধর্ম-বর্ণ-জাতির সমন্বয়ে একটি বহুজাতি রাষ্ট্র হিসেবে থেকে যায়। বর্তমানে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির উত্থানের মাধ্যমে ভারত তাঁর মূল স্বকীয়তা হারিয়ে হিন্দু ভারতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলস্বরূপ অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠী যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তেমনি ভারতে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় কয়েক শত বছর ধরে বাস করা এই নাগরিকরা ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে এবং অনিশ্চয়তাই ভূগছে। আসামে নাগরিক তালিকার মাধ্যমে ধর্মীয় দ্বন্দ্বের পাশাপাশি জাতিগত দ্বন্দ্বও সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ, ত্রিপুরা এবং পশ্চিম বঙ্গেও এর প্রতিক্রিয়া হবে অনেক গভীর এবং সুদূরপ্রসারী।

বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে পুরোধা ছিল পাঞ্জাব এবং বাংলা। বৃটিশ কর্তৃক ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের সাথে এই দুটি প্রদেশকে বিভাজনের ফলে হাজার হাজার মানবসন্তানের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। তবু পাঞ্জাবীদের তুলনায় বাঙালির মধ্যে জাতীয়তাবোধ বেশী থাকায় মৃত্যুর হার এবং স্থানান্তর তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে বাঙালি জাতি দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও পশ্চিম বঙ্গ- তিনটি রাজ্যে বাঙালি বিভক্ত হয়ে পড়ে। সেইসাথে বৃহত্তর অংশ পাকিস্তানে যুক্ত হয়। পশ্চিম বাংলা ও ত্রিপুরার বাঙালিারা একটি প্রদেশ শাসনের সুযোগ পেলেও, পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা পাকিস্তান কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেও আসামের বাঙালিরা সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রধানত অহমীয়াদের প্রতিপক্ষ হিসেবে বাঙালিকে টিকে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে, তেমনি নিজেরাই হিন্দু ও মুসলমান হিসেবে ধর্মীয়ভাবে বিভক্তি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কৃষিকর্মে নিয়োজিত মুসলমান কৃষকেরা ধর্মীয় নেতাদের প্রভাবে বাঙালি পরিচয়ে বদলে ভূমি এবং ভিটে রক্ষার করার স্বার্থে অহমীয়া পরিচয়ে আত্মরক্ষা করে। অর্থাৎ ভাষা ও জাতীয়তার চেয়ে ধর্ম পরিচয় প্রাধান্য পায়। এই কারণে বাঙালি একটি অভিন্ন সত্তা হিসেবে গড়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। ভাষার জন্য শহীদ হয়েও সকল হিন্দু-মুসলিম বাঙালি হয়ে উঠতে পারে নি। বাঙালির মধ্যে বিভাজনের সুযোগে, অহমীয়া বনাম বাঙালি ও হিন্দু বনাম মুসলিম দ্বন্দ্বে আসামে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি নিয়ামক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে।
ভারতবর্ষ এখন গুজারাটি পুঁজির চারণভূমি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই গুজরাটি প্রধানমন্ত্রী ও গুজরাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের শোষণ, শাসন এবং আধিপত্য ধরে রাখার প্রধান বাধা জ্ঞানবিজ্ঞান ও সাহিত্য-সংস্কৃতি অগ্রসর বাঙালি। এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিকে আয়ত্বে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। আসামে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে বিজেপিবিরোধী হিন্দু বাঙালি যাতে হুমকী হতে না পারে তাঁদের নাগরিক তালিকার বাইরে রেখে তাঁদের নির্বাচানী সুযোগ কাজে লাগাতে কী এই পরিকল্পনা?
আজকে আসামে নাগরিকত্ব নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তার উৎস অহমীয়াদের আন্দোলনের ফলে ১৫ আগস্ট ১৯৮৫ সালের অপরিণামদর্শী রাজীব গান্ধীর সাথে চুক্তি। যার শর্ত ছিল ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পরে যারা আসামে এসেছে তঁদেরকে ভারতে নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে না। তাঁর প্রেক্ষতে প্রথমত ৪০ লক্ষ বাঙালি নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হলেও সর্বশেষ ১৯ লক্ষ নাগরিক তালিকার বাইরে থেকে গেল। তাঁর মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু, ৭ লক্ষ মুসলিম। সরকারী মন্ত্রীদের ঘোষণা মোতাবেক সকল অমুসলিমদের ভারত হয়তো গ্রহণ করবে। প্রথমে বিতর্ক হলেও ধীরে ধীরে আত্মীকরণ করবে। যাতে তার পূর্বে মানসিকভাবে বিপর্যস্থ হয়ে তাঁদের স্বকীয়তা ও লড়াই করার শক্তি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু ৭ লাখ মুসলিম কোথায় যাবে? ১৯৭১ সালে পর কোন মুসলিম কেন ভারতে আশ্রয় নিবে এটার কোন যুক্তিসংগত কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। উল্টো বহু ভারতীয় বাংলাদেশে চাকুরী করে। তাঁদেরকে যাতে বের করে দেয়া না হয় সে জন্য চাপে ফেলার একটি কৌশল নয়তো? বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অধ্যুষিত রাষ্ট্র হলেও দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে কাউকে গ্রহণ করতে সে বাধ্য নয়। কারণ দ্বি-জাতি তত্ত্বকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের জন্ম। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গঠিত রাষ্ট্রে যে কোন বাঙালিকে গ্রহণে নৈতিক দায়বদ্ধতা আছে কিন্তু বাধ্যবাধকতা নেই। ১৯৭১ সালের পরে আশ্রয় নেয়া বহু হিন্দু বাঙালিকে তৎকালীন ভারত সরকার বিহার, ঝাড়খন্ড, কর্ণাটকে এবং উত্তরপ্রদেশে পুনর্বাসন করেছে। তাদের কি হবে? শুধু আসামের বেলায় এই আইন প্রযোজ্য হবে কেন? প্রণব মুখার্জি তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সাথে সর্বাত্মক সহযেগিতার ব্যাপারে দ্বিধায় ছিলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর সমস্ত বাংলাভাষী একটি রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নেয় কী না? প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনকে এই ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে হয়েছিল। এখন যেভাবে আসামের পরিস্থিতির মোড় নিচ্ছে, আসামের মন্ত্রীরা আসামে বাংলাভাষী মুসলিমদের গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করবেন বলে আগাম ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তাহলে কিসের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নিবে? যদি ১৯৪৭ সালের দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে নিতে হয় সেই ব্যাপারে বাংলদেশের কোন দায় নেই। বরঞ্চ আনুপাতিকহারে ভূমিসহ দিলে হয়তো বাংলাদেশ আপত্তি করবে না। সেটা নির্ভর করে ভারত সরকার, আসাম সরকার, ভূক্তভোগী এবং বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতার উপর। তবে যেভাবে নাগরিক তালিকার বিতর্কে আসামের ২০ লক্ষ বাঙালি নাগরিকত্বহীন হয়ে পড়লো তাঁর প্রতিক্রিয়ায় ত্রিপুরা পশ্চিম বঙ্গ, বরাক উপত্যকা এবং ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা নিয়ে যদি একটি রাজ্য্যের দাবীতে সোচ্চার হয় তাহলে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখেছেন? সকল বাংলাভাষীর একটি রাষ্ট্রের দাবী যদি উঠে তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে? অথবা যদি আসাম থেকে রোহিঙ্গাদের মত শরণার্থীর ঢল নামে তখন বাংলাদেশের পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব হবে?

এমনিতে কাশ্মীর নিয়ে চীন ও পাকিস্তানের সাথে ভারতে দ্বন্দ্ব এই অঞ্চল কিছুটা ঝুুঁকির মধ্যে আছে। রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশও ঝুঁকিতে আছে। তাঁর সাথে আসামের ধর্মীয় ও জাতিগত দ্বন্দ্বে এই অঞ্চলের বিদ্যমান শান্তি যদি বিঘিœত হয় এবং পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়, তা হলে এ অঞ্চলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, তার পূর্বেই প্রতিকারের ব্যবস্থা করা কি সমীচিন হবে না?

লেখক : রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট