চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আসামের বিতর্কিত নাগরিকপঞ্জি

আবদুল্লাহ আল মাউন

৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

মাত্র এক মাস আগে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরীদের বিশেষ মর্যাদা রহিত করা হলে সমগ্র ভারত তথা বিশ্বজুড়ে মারাত্মক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। কাশ্মীর পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ভারত পাকিস্তানের মাঝে একাধিকবার সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং উভয় দেশের সেনাবাহিনীর একাধিক সৈনিক নিহত হয়। বাংলাদেশেও কাশ্মীরের মুসলমানদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে যখন সমগ্র বিশ্ব উত্তাল ঠিক তখনই প্রকাশ করা হয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের জাতীয় নাগরিকপুঞ্জি (এনআরসি)।
প্রথমে আসামের ৪১ লাখ নাগরিকের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়লেও চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায় বাদপড়াদের সংখ্যা এখন ১৯ লাখ। এই বাদপড়া ১৯ লাখ নাগরিকের মাঝে এখন সর্বদা আতংক বিরাজ করছে এই ভেবে যে, তাদেরকে এখন আদালতের শরণাপন্ন হয়ে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এহেন কথা প্রমাণ করতে হবে যে তার প্রকৃত আসামের নাগরিক। যদি আদালতের মাধ্যমে কোনো নাগরিক তথ্যপ্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদেরকে বিদেশী হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে এবং রাষ্ট্রীয় নানান সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে। কিন্তু বিদেশী হিসেবে আখ্যায়িত হলে তাদের ভাগ্যে কি ঘটবে তা ভারত সরকার এখনো স্পষ্ট করেনি। এমন পরিস্থিতিতে আসামের বাদপড়া নাগরিকদের মাঝে সর্বদা আতংক বিরাজ করছে এবং তাদের ভাগ্যের আকাশে ক্রমশই অশান্তির কালো মেঘ জমা হচ্ছে।

চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে আসামের মূখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল অবশ্য জানান যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়বে তারা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালসে (এফটি) আবেদন করতে হবে। নাগরিকত্ব প্রমাণে আদালতের শরণাপন্ন হতে হলে একজন নাগরিককে প্রায় ৪১ হাজারেরও বেশি রুপি খরচ করতে হবে। এত বড় খরচের অংশ অনেক নাগরিকই বহন করতে অক্ষম বলে জানা যায়। এমতবস্থায় এসব অক্ষম নাগরিকরা কিভাবে আইনি সহায়তা পাবেন তাও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয় নি। পুরো ভারতজুড়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে এই এনআরসি নিয়ে। অসন্তুষ রয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপির মাঝেও। আসামের ক্ষমতাসীন বিজেপি বলছে তাদের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত অনেক ভোটারই বাদ পড়েছে নাগরিকপঞ্জি থেকে।
ফরেইন ট্রাইব্যুনালে কোনো নাগরিক নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হলে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবেন, সেখানেও ব্যর্থ হলে সুপ্রিমকোর্টেও যেতে পারবেন। সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই কেবল তাদের বিদেশী বলা হবে এবং ডিটেনশন ক্যাম্পে (ডি-ক্যাম্প) পাঠানো হবে। বর্তমানে আসামে এমন শিবিরের সংখ্যা ছয়টি। তাতে বন্দী রয়েছেন প্রায় এক হাজার। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, তিন বছরের বেশি কাউকে এভাবে বন্দী রাখা যাবে না। আরও ১০টি ডি-ক্যাম্প খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যসরকার। ভারতের প্রখ্যাত কলাম লেখক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় এই ডি-ক্যাম্প নিয়ে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন- কত লোক তাতে আঁটবে? খুব বেশি হলে ৫০ হাজার? বাকিরা যাবেন কোথায়? থাকবেন কোথায়? খাবেন কী? খাওয়াবে কে? কোনো প্রশ্নেরই উত্তর নেই কারও কাছে। এমন শত শত উত্তরবীহীন প্রশ্নের উত্তর কেবল আসামের নাগরিকদের মাঝে নয়, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের নাগরিকদের মাঝেও আলোচনা হচ্ছে। কি ঘটতে যাচ্ছে আসামের ভাগ্যে।

আসামের এমন উদ্ধত পরিস্থিতে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের একটি রাজ্যে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়লে তার প্রভাব সহজেই বাংলাদেশে পড়বে বলে ধারণা। তারা চাইবেন যে কোনো ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে। আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আরও বেড়ে গেছে এই কারণে যে সোমবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসাম রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন-বাংলাদেশকে বলবো এবং আহ্বান জানাবো এনআরসি থেকে বাদ পড়া লোকদের ফিরিয়ে নিতে।

রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে নিশ্চয় বাংলাদেশকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি আগাম কোনো সতর্কতা নেওয়া না হয় এবং এই ব্যাপারে জনমত ঘটন করতে দেশ ব্যর্থ হয় তাহলে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা পরিস্থিতির মত আরেকটি ভয়াবহ পরিস্থিতি ঘটবে। যা আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তাকে বিঘিœত করবে ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট