চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে চসিক’র ধূমপানবিরোধী উদ্যোগ

৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

ধূমপান অন্যান্য মাদকদ্রব্যের মতোই একটি অতি মারাত্মক ড্রাগবিশেষ হলেও বাংলাদেশে এই ক্ষতিকর দ্রব্যটির প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণপ্রজন্ম নানাভাবে ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে প্রতি বছর ধূমপায়ীর সংখ্যা ১.১ ভাগ হ্রাস পেলেও বিপরীতে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিড়ি-সিগারেট কোম্পানীগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিজ্ঞাপনের প্রভাব ও সামাজিক সহযোগিতায় ২.১ শতাংশ হারে প্রতি বছর বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অন্যতম ‘ধূমপায়ী দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ধূমপান ও ধূমপায়ীর এই চিত্র নিঃসন্দেহে চরম উদ্বেগকর। এটি স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় নয় শুধু, টেকসই উন্নয়ন এবং ভিশন ’২১ ও ভিশন ’৪১ বাস্তবায়নেও অন্যতম প্রধান অন্তরায়। এ অবস্থায় নগরীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ তামাকসেবন বন্ধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তা অবশ্যই প্রশংসা ও ধন্যবাদার্হ।

দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, বুধবার সব তামাকজাতদ্রব্য বিক্রেতা ও পৃষ্ঠপোষকদের উদ্দেশে চসিক মেয়রের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে কোনো প্রকার তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয় বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালানো যাবে না। ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ খ্রিস্টাব্দের সংশোধনীসহ) এর বিধানমতে এসব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল/জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চসিকের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। যদি উদ্যোগটি আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে অন্তত আমাদের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ‘ধূমপানে বিষপান’ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। তামাকজাত দ্রব্য সহজলভ্য না হলে শিশু-কিশোর-তরুণ ধূমপানে আসক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে না। এতে স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ার পথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস, ক্যাব ও ইলমা এক প্রকল্পের আওতায় গতবছরের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর এবং ৬-৯ অক্টোবর পর্যন্ত নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়চিত্রের ওপর একটি জরিপ চালায়। জরিপের তথ্যমতে, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ১০০ গজের মধ্যে তামাকপণ্য বিক্রি হয় এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮৮৫টি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৩৬টি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষে তামাক বিক্রয়কেন্দ্র থাকায় শিক্ষার্থীরা সহজেই ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে শিক্ষার্থী ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক হারে। আবার প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীরা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ ও সমাজশৃঙ্খলা নষ্ট করছে। তারা অধূমপায়ীদেরও স্বাস্থ্যহানির কারণ হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত এক জরিপে তা স্পষ্ট হয়েছে। প্রসঙ্গত, ধূমপানের নির্গত ধোঁয়ায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার রাসায়নিক উপাদান আবিষ্কৃত হয়েছে। তন্মধ্যে নিকোটিন, পাইরিডিন, নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ ক্ষারসমূহ, আইসোপ্রিন, উদ্বায়ী অম্ল, টার, ফেননসমৃদ্ধ সামগ্রী, কার্বণ-মনোক্সাইড ফারফরাল, অ্যাকরোলিন, পোলোনিয়াম২১০ নিকেল ইত্যাদি প্রধান। ধূমপানের মাধ্যমে এসব বিষ ধূমপায়ীর শরীরে প্রবেশ করে। আবার ‘ধূমপান বিষপান’-এই সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ সত্ত্বেও যারা ধূমপান করছে শুধু যে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, ধূমপায়ীদের অবাধ ধূমপান অধূমপায়ীদেরও মৃত্যু ডেকে আনছে। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় দেখা গেছে, অধূমপায়ীদের অসুস্থতা এবং মৃত্যুর একটি বড় কারণ পরোক্ষ ধূমপান। পরীক্ষায় দেখা গেছে, একজন অধূমপায়ীর ফুসফুস একজন ধূমপায়ীর ফুসফুসের মতোই সমান কালো ও রোগাক্রান্ত।
সংগতকারণে দেশের জনগণকে সুস্থ রাখতে ধূমপানের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। চসিক মেয়র অন্তত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকজাত পণ্য বিক্রি বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। উদ্যোগটির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা সহজেই ধূমপানে আসক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে না। তবে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে মনোযোগ থাকে না। ফলে কাক্সিক্ষত ফলও আসে না। পলিথিনবিরোধী উদ্যোগটি এর জ্বলন্ত উদাহরণ। আমরা আশা করতে চাই, চসিকের ধূমপানবিরোধী উদ্যোগটি শেষ পর্যন্ত আন্তরিকতার অভাবে ভেস্তে যাবে না। শুধু তাই নয়, এ পথ ধরে সমগ্র মহানগরীকেই একটা পর্যায়ে ধূমপানমুক্ত করা হবে। তবে কাঙিক্ষত ফল পেতে চাইলে নিষেধাজ্ঞার কঠোর বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির বলিষ্ঠ কমসূচিও থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট