চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দরকার সবার দায়িত্বশীলতা পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলন

৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ

পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের প্রত্যান্ত এলাকায়। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এখন পরিবেশ দূষণ রোধে সর্বত্র সোচ্চার। এসব কারণে এখন সাধারণ মানুষ পরিবেশ বিষয়ে পূর্বাপেক্ষা সচেতন হয়েছেন। কিন্তু পরিবেশ দূষণকারীদের কাছে তারা অসহায়। আবার পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সরকারের দায়িত্বশীলরাও নানা কারণে যথাযথ ভূমিকা রাখেন না সবসময়। ফলে পরিবেশ দূষণ রোধ যে মাত্রায় হওয়ার কথা সে মাত্রায় হচ্ছে না। পরিবেশ দূষণে যেসব দ্রব্য প্রধান ভূমিকা রাখে সেসবের ব্যবহার বন্ধেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। পরিণামে জনজীবন ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত হতে পারছে না। এ ধরনের চিত্র কারো কাম্য হতে পারে না।

পরিবেশ দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের জন্যে হুমকিপূর্ণ হওয়ায় সরকার পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে বছরকয়েক আগে। প্রথম প্রথম বছরদুয়েক এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলেও পরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতার কারণে ক্রমশ শিথিল হয়ে যায়। নজরদারীর অভাব এবং নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় পুনরায় পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন এবং ব্যবহার শুরু হয়ে যায় প্রকাশ্যে। এখন তা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার ও উৎপাদন বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্লিপ্ত ভূমিকার সুযোগে বাজারে নতুন চেহারায় ফিরে এসেছে পরিবেশ দূষণকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ। এখন শহর-নগর-গ্রাম সর্বত্রই প্রকাশ্যে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। ব্যবহারে বাধা নেই বলে চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে নতুন নতুন ডিজাইনে গোপনে উৎপাদনও বেড়েছে। পলিথিনের উপর্যুপরি ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ জনস্বাস্থ্যের জন্যে চরম ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার এবং বাজারজাতকরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আইনটির কঠোর প্রয়োগ কোনো তৎপরতাই দেখাচ্ছে না।
পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অজ্ঞ বলেই তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য হওয়ার কারণে দিন দিন পলিথিনের ব্যবহার সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিনের ব্যাগ এমন একটি বস্তু যার দ্বারা দেশের প্রতিটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিটি পরিবার যেমন প্রতিমাসে আর্থিকভাবে অনেকখানিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি পরিত্যক্ত পলিথিন অপচনশীল বিধায় শহরে-গ্রামে সকল এলাকায় তার ক্ষতিকর প্রভাব রেখে যায়। পলিথিনের কারণে শহরে নালা-নর্দমার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, অকেজো হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নষ্ট করে দেয় কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের উৎপাদনযোগ্য জমিসমূহের উর্বরাশক্তি। পরিত্যক্ত পলিথিন মাটিতে বীজের শিকড় প্রসারিত হতে বাধা সৃষ্টি করে। মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে দেয় না। ফলে, কোনভাবে গাছ বেঁচে থাকলেও তাতে ফল ধরে না। ফল ধরলেও তা হয় নি¤œমানের। তাছাড়া ব্যবহৃত পলিথিন আগুনে পোড়াতে হলেও বিপদ। এতে যে ধোঁয়া উৎপাদন হয় তা পরিবেশের ক্ষতি করে। পলিথিন পোড়ানোর ফলে বিষাক্ত গ্যাস কার্বন-মনোক্রাইড বেড়ে যাওয়ায় মানুষের শরীরে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। যে এলাকায় মাটির গভীরে পলিথিন আছে সেখানে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করলে ধসে পড়ার আশংকা থাকে না। ফলে নি¤œমাত্রার ভূমিকম্পেও পলিথিনমিশ্রিত মাটির উপর নির্মিত দালান-কোটা ধসে পড়ে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত হয়। তাছাড়া আরো অনেকভাবে পলিথিনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে জনজীবনে।

পলিথিনের এমন সর্বগ্রাসী থাবা থেকে পরিবেশ এবং সাধারণ মানুষকে রক্ষার নিমিত্তে ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ থেকে সারা বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যাগসহ যাবতীয় পলিথিন সামগ্রী নিষিদ্ধ করে তৎকালীন সরকার। সরকার সুশীল সমাজ এবং পরিবেশবিজ্ঞানীদের দাবির মুখে দেশে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার এবং বাজারজাতকরণের উপর বিধিনিষেধ কার্যকর করে। সরকার সে সময় পলিথিন শপিং ব্যাগের পরিবর্তে নবউদ্ভাবিত পাটের ব্যাগের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তুলতেও বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছিল। এতে প্রচুর সাড়াও মিলেছিল। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, পলিথিনের বিরুদ্ধে এই উদ্যোগ এখন আর অব্যাহত নেই। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি থেকে সরকার ঢিলে নীতি অনুসরণ করায় এক শ্রেণির মুনাফাশিকারী চক্র ফের তাদের অপতৎপরতা শুরু করে দেয়। ফলে, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ আবার বাজার সয়লাব হয়ে যায়। এখন চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় দেশের সচেতন মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

আমরা মনে করি, জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং দেশের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা সরকারের একটি প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই দায়িত্বের অংশ হিসেবে জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে সরকার সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্যে সারাদেশে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের উপর যেমন অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে, তেমনি পলিথিনসহ জনস্বাস্থ্যের জন্যে অতীব ক্ষতিকর বিভিন্ন বর্জ্যরে বিরুদ্ধেও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট