চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিউরোসার্জন ড. আর পি সেনগুপ্ত ফতেয়াবাদের ভূমিপুত্র

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামকে যাঁরা বিশ্বপরিসরে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তাঁদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তো আছেনই, তিনি ছাড়াও আরো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। তিনি একজন চিকিৎসক- নিউরো সায়েন্টিস্ট, তাঁর নাম ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত। মজার ব্যাপার হলো-দু’জনই হাটহাজারীর সন্তান। ড. ইউনূস বাথুয়ার বাসিন্দা, ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত ফতেয়াবাদের ভূমিপুত্র। ড. ইউনূস ও ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত বহির্বিশ্বে চট্টগ্রামের ব্রান্ড অ্যামবাসাডর।
ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ গ্রামের নন্দীরহাটে ১৯৩৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রোহিনী রঞ্জন সেনগুপ্তও ছিলেন ডাক্তার-হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। গরীব ও অসহায মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করতেন তিনি। দরিদ্র গ্রামবাসীর কাছে চিকিৎসা সহজলভ্য করে তোলার জন্য তিনি হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন পৈত্রিক ভিটায়।

রোহিনীবাবুর তিন পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত ছিলেন তৃতীয়। জ্যেষ্ঠপুত্র ডা. বিজয়শ্রী সেনগুপ্ত, কনিষ্ঠপুত্র প্রকৌশলী রামকৃষ্ণসেন। তিনি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচডি করেছেন। রোহিনীবাবুর কন্যাদ্বয়ের নাম- শান্তি সেনগুপ্তা ও রাণী সেনগুপ্তা।
ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্তের মাতা শ্রীমতি মনিকু-লা সেনগুপ্তা ছিলেন সুগৃহিনী, শিক্ষিতা ও ধর্মানুরাগী। স্বামীর প্রতি কর্তব্য পালন, পুত্র কন্যা লালন পালন-এর পাশাপাশি নিয়মিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতেন।

ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্তের প্রাথমিক শিক্ষার হাতে খড়ি হয় ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে নন্দীরহাটের শৈলবালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর্থিক অসংগতির জন্য তিনি নিয়মিত স্কুলে যেতে পারতেন না। সহপাঠিদের কাছে গিয়ে জেনে নিতেন স্কুলে কি কি পড়িয়েছে। তাদের বই থেকে পাঠ্য বিষয় লিখে নিয়ে পড়া তৈরি করতেন। ১২-১৩ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন টিউশনি। ৪-৫ বছরের শিশুদের পড়াতেন টাকার বিনিময়ে। এভাবেই সামলেছেন নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ার খরচ। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থায়ী স্বীকৃতি প্রাপ্ত ফতেয়াবাদ আদর্শ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে স্কলারশীপ পেয়ে মেট্রিক এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে সরকারি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ছেলেবেলার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার উদ্যোগ নিলেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে সে সময়ের নিয়মানুযায়ী চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার মতো নম্বর তাঁর ছিল না। সময়টা ১৯৫৫ সাল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে গেলেন রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত কপর্দকহীন অবস্থায়। একমাত্র ভরসা দেশপ্রিয় জেএম সেনগুপ্তের স্ত্রী নেলী সেনগুপ্তের লেখা একটি চিঠি। আর কলকাতায় তাদের জমিদার হাউসে থাকার অনুমতি।

কিন্তু সময়টা ভাল ছিল না। নেলী সেনগুপ্ত যাঁর কাছে পাঠিয়েছিলেন, তাঁর অবস্থা রামপ্রসাদের চেয়ে কোনো অংশে ভাল ছিল না। এরপর শুরু হলো তার আসল জীবনসংগ্রাম। ড. সেনগুপ্তের নিজের কথায়, ‘আমি এক মেডিক্যাল কলেজ থেকে আরেক মেডিক্যাল কলেজে ছুটোছুটি শুরু করলাম। কোথাও কোনো আশার আলো দেখতে পেলাম না। প্রচ- হতাশায় আক্রান্ত হয়ে একদিন কলেজ স্কয়ারের পার্কে বসেছিলাম। পাশে বসেছিলেন এক ভদ্রলোক। তিনি নিজে থেকে আলাপ করলেন। আমি আমার কষ্ট ও হতাশার কথা বললাম তাকে। তিনি আমাকে আমহার্স্ট স্ট্রিটে সর্বাধিকারী হাউসে নিয়ে গেলেন এবং ড. কনকচন্দ্র সর্বাধিকারীর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। আমি অনেক কষ্টে অর্থোপডিক্স ড. সর্বাধিকারীর সঙ্গে দেখা করে আমার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বললাম। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, আমার পক্ষে সরকারী কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়। তবে তিনি আমাকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল বোর্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দিলেন। তাতে আমি টিকে গেলাম এবং ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেলাম। টাইমস অভ ইন্ডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ড. সেনগুপ্ত আরো বলেন, ‘জীবনটা ছিল আমার হালবিহীন নৌকোর মতো। ঘুরে বেড়িয়েছি এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে। তবে কখনো হতাশায় ভেঙে পড়িনি। মনের ভেতর সারাক্ষণ জাগরুক ছিল এই কথাটাই। না, আমাকে একজন ভাল ডাক্তার হতেই হবে। গ্রাজুয়েশন করার পর স্নাতকোত্তর পড়াশোনার সামর্র্থ্য ছিল না। ততদিনে শরণার্থী হিসেবে যে বৃত্তিটা পেতাম, তাও বন্ধ হয়ে গেছে।’

এই যখন অবস্থা, তখন হঠাৎ করে প্রেমে পড়লেন কপর্দকহীন বেকার আর পি সেনগুপ্ত। প্রেমিকা তাঁর এলাকারই মেয়ে; দক্ষিণ ফতেয়াবাদ চৌধুরী হাটের রজনীকান্ত পাল এর নাতনি নিরোদ বরণ পালের মেয়ে এবং প্রখ্যাত সেতার বাদক বাদল পালের ভগ্নি নন্দিতা পাল। শুধু প্রেমে পড়েই ক্ষান্ত হলেন না, গোপনে বিয়েটাও সেরে ফেললেন। এটাকে বলা যায় এক দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত। তবে কাজটাকে তার জীবনে করা সবচেয়ে সেরা কাজগুলোর একটি বলে মনে করেন তিনি। স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে রেখে ১৯৬১ সালে লন্ডনে পাড়ি জমালেন। ইন্টার্নশিপ শেষ করেননি, হাতে খুব অল্পই টাকাপয়সা। লন্ডনে যাওয়ার পর মাসখানেক এখানে ওখানে ঘুরলেন। খুব একটা সুবিধে করতে পারলেন না। শেষে ম্যানচেস্টারের বেরি জেনারেল হাসপাতালে একটা চাকরি পেলেন। একবছর পরে পেলেন ডাক্তার হিসেবে নিবন্ধন। এরপর বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শেষে নিউরোসার্জাারি বিভাগেই থিতু হলেন ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত।

চিকিৎসাশাস্ত্রের এই বিভাগটা দারুণভাবে আকর্ষণ করল তাকে। নিউরোসার্জনদের কাজ, রোগীদের জীবন-মরণ লড়াই, তাদের সুস্থ করে তোলার জন্যে চিকিৎসকদের আকুলতা, সবকিছুতেই একটা চ্যালেঞ্জিং অনুপ্রেরণা খুঁজে পেলেন। মানবশরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ অংশটার চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পেলেন।
কিন্তু যত সহজে চাওয়া যায়, পাওয়াটা তত সহজে হয় না। এ জন্যে লাগে সুষ্ঠু পরিকল্পনা, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ঐকান্তিকতা। ড. সেনগুপ্ত এই তিনটি জিনিসকে কাজে লাগালেন। চরম কঠিন সে দিনগুলোতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছেন তিনি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজে লেগে থাকতেন। কারণ ততদিনে সংসারে বাড়তি মুখ এসেছে। ছেলে এবং মেয়ে। তাদের ভরণপোষণও তো বাবাকেই করতে হবে। প্রতিটি পাই-পয়সা পর্যন্ত হিসেব করে খরচ করতেন। স্ত্রী-সন্তানকে ততদিনে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন।
১৯৭১ সালে এডিনবরা থেকে এফআরসিএস পাস করলেন ড. সেনগুপ্ত। এসময় তার স্ত্রী ভারতে ফিরে আসার জন্য অস্থির হয়ে পড়লেন। ড. সেনগুপ্ত নিজেও চাইছিলেন পেশাগত ক্যারিয়ারটা ভারতেই গড়ে তুলবেন। কিন্তু ভারতের কোথাও সুযোগ পাচ্ছিলেন না। যাহোক দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ১৯৭৩ সালে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে চাকরি পেলেন। তবে সেখানে কেবল মাথার ইনজুরি ছাড়া আর কোনো ধরনের চিকিৎসার সুযোগ ছিল না। কিন্তু ড. সেনগুপ্ত চাইছিলেন আরো সূক্ষ্ম ও বড় ধরনের কাজ করতে। কারণ এর আগে এর চেয়ে বড় কাজও তিনি করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলেন, ভারতে এর চেয়ে বড় কিছু পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি ফের ইংল্যান্ডে চলে যাওয়ার উদ্যোগ নিলেন। জানেন, কঠিন পরিশ্রম করে তাকে ওখানেই প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

কিন্তু সময়টা গত শতকের সত্তরের দশক। একজন ভারতীয় ডাক্তারের পক্ষে ইংল্যান্ডের স্থানীয় চিকিৎসকদের ভীড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করাটা সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। কিন্তু নিজের যোগ্যতা ও ঐকান্তিক ইচ্ছার ফল পেলেন ড. সেনগুপ্ত। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত নিউরোসার্জন ড. উইলিয়াম সুইটের কাছ থেকে ডাক পেলেন। মেস জেনারেল হাসপাতালে তার সঙ্গে কাজ করতে শুরু করলেন। কিন্তু কাজটাকে উপভোগ করতে পারছিলেন না ড. সেনগুপ্ত। শেষে নিউ ক্যাসলের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে যোগ দিলেন।
২০০২ সালে ৬৫ বছর বয়সে নিউক্যাসল হাসপাতাল থেকে অবসর নেন ড. সেনগুপ্ত। নিউক্যাসল হাসপাতাল তাদের অপারেশন থিয়েটারের নাম রাখে তার নামানুসারে ‘রবিন সেনগুপ্ত থিয়েটার’। এর মানে হলো সরকারী চাকরির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এরপরও তাকে চেয়েছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালে তিনি চূড়ান্তভাবে অবসর নেন।
একাডেমিক ক্যারিয়ার, সম্মান ও পুরস্কার : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৪ বছর বয়সে ১৯৬১ সালে এমবিবিএস পাস করলেন। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এফআরসিএস করলেন ১৯৬৭ সালে। তার দু’বছর পরে ১৯৬৯ সালে ইংল্যান্ড থেকে এফআরসিএস। ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন থেকে হলেন সিনিয়র রেসিডেন্ট। ১৯৭৬ সালে নিউরোলজিক্যাল সার্জাারি বিষয়ে ইংল্যান্ডের আরসিএস থেকে পূর্ণ প্রশিক্ষিত হিসেবে সনদপত্র লাভ করলেন। ১৯৭৭ সালে নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি থেকে এমএসসি, ২০০১ সালে ডারহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০০৯ সালে ভারতের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অভ সায়েন্স থেকে ফেলোশিপ করেন ড. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত। ২০১০ সালে তামিলনাড়–র ড. এমজিআর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ পেলেন।

শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে পেযেছেন অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার ড. আর পি সেনগুপ্ত। মেডিক্যাল ফর প্রফিসিয়েন্সি ইন বায়োকেমিস্ট্রি সম্মাননা পান ১৯৫৭ সালে, ১৯৫৮ সালে সার্টিফিকেট অভ অনার্স ইন সার্জারি লাভ। পেশাগত জীবনে ১৯৭৩ সালে পান ডেভিড ডিকসন গবেষণা পুরস্কার। এসবিএনএস ১৯৭৪ সালে তাকে কেইমস মেমোরিয়াল ট্রাভেলিং স্কলারশিপে ভূষিত করে। ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১৯৮৯ সালে। ১৯৯২ সালে পান এ মেরিট। ১৯৯৯ সালে ডাচ নিউরোসার্জিক্যাল সোসাইটি থেকে পান বেক পদক। ২০০০ সালে নিউরোসার্জিক্যাল সোসাইটি অভ ইন্ডিয়া তাঁকে নিউরোসার্জন অভ দ্য মিলেনিয়াম পদকে ভূষিত করে। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ও বি ই উপাধিতে ভূষিত করে।
বিশেষ যোগ্যতা : ড. সেনগুপ্ত ১৯৭০ সালে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে প্রফেসর জি ইয়াসারগিলের সঙ্গে মাইক্রোনিউরোসার্জারিতে বিশেষ কোর্স করেন। ১৯৭১ সালে হাল (ঐঁষষ) বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলজি বিভাগ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭৩ সালে দক্ষিণ আমেরিকার কিছু নিউরোসার্জিক্যাল সেন্টার পরিদর্শন করেন। লন্ডনের কুইনস স্কয়ারে সোসাইটি অভ ব্রিটিশ নিউরোসার্জিক্যাল সার্জনস-এর সভায় তিনি প্রথম স্যার হাফ কেয়ার্নস মেমোরিয়াল ট্রাভেলিং স্কলারশিপ লাভ করেন। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন নিউরোসার্জিক্যাল সেন্টারগুলোতে তিনি ইন্ট্রাক্রেনিয়াল অ্যানিউরিজম সার্জারিতে মাইক্রোস্কোপ অপারেশনের বিশেষ দিকগুলোর সঙ্গে পরিচিত হন।

১৯৭৪ সালে তিনি ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল এবং বোস্টনের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে নিউরোসার্জাারি বিভাগে ছয়মাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ লাভ করেন। সেখানে তিনি আমেরিকান নিউরোসার্জারি পদ্ধতি বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। ওখান থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসে তিনি সেখানে প্রথমবারের মতো রেডিওফ্রিকোয়েন্সি থার্মোকগুলেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। ১৯৮৫ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কটরমনের স্ত্রীর মস্তিষ্কে কঠিন অসুখ ধরা পড়ে। রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং প্রখ্যাত নিউরো সার্জেন ডা. রামমূর্তি পরামর্শ দেন এই অপারেশন একমাত্র একজনই সফলভাবে করতে পারবেন, তিনি হলেন ব্রিটেনপ্রবাসী চিকিৎসক ডা. রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত। ডা. সেনগুপ্ত অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেন সেই অপারেশন। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী।

২০০৫ সালে কলকাতা পৌরসভা ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় কলকাতার মল্লিকবাজারে প্রতিষ্ঠিত ১৫০ শয্যার ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স কলকাতা এখন প্রশ্নাতীতভাবে ভারতের অন্যতম সেরা নিউরোলজি সেন্টার। চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানটি প্রথমে ডা. সেনগুপ্তের একক উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল। বর্তমানে ভারত বাংলাদেশের রোগীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য নিউরো চিকিৎসার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এটি।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট