চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

অরক্ষিত ফ্লাইওভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিন

৩১ আগস্ট, ২০১৯ | ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

যানজট নিরসন, সাচ্ছন্দে যান ও জন চলাচলসহ নানা উদ্দেশ্যে ৪৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন। ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের জুনে। নগরবাসীর আশা ছিল, ফ্লাইওভারটির নিরাপদ ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা, চুরি ও ছিনতাই ঘটনা প্রতিরোধ, ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞাসহ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ ব্যাপারে কোনো জনকাক্সিক্ষত পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর হয়নি এখনো। ফলে ফ্লাইওভারটি নগরবাসীর আশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। হরহামেশা দুর্ঘটনা এবং ছিনতাইয়ের কবলে পড়ছে ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীরা। এমনকি সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়কবাতি, রেলিং ও পানির পাইপসহ বিভিন্ন সরঞ্জামও চুরি হয়ে যাচ্ছে। সন্দেহ নেই, ফ্লাইওভারটির এই ন্যাক্কারজনক চিত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির দিকটিই স্পষ্ট করছে।

দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের ডিভাইডার থেকে লাইট চুরি করছে মাদকাসক্ত পথশিশুরা। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক লাইট চুরি হয়ে গেছে। অপরদিকে সড়ক আলোকায়নে ফ্লাইওভারের গার্ডারে স্থাপনকৃত লাইটগুলোও জ¦লছে না। আলোর অভাবে ঘটছে ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম। লাইট না জ¦লার কারণ সম্পর্কে ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, সড়কের সৌন্দর্য বাড়াতেই ফ্লাইওভারের নিচে ডিভাইডারের মধ্যে বাগান করা হয়েছে। বাগানে বিভিন্ন রঙের প্রায় এক হাজার বাতি লাগানো হয়েছে। ইদানিং কিছু মাদকাসক্ত পথশিশু এসব লাইট চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব লাইট পাহাড়া দেয়া সম্ভব না। এ ঘটনায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। চোরের দল শুধু লাইট নয়, ফ্লাইওভারের রেলিং ও পানির পাইপও চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আছে লাইট না থাকায় ডিভাইডারের যে অংশে অন্ধকার থাকে সেখানে একদিকে যেমন সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে মাদকাসক্ত পথশিশুরা বিভিন্ন অপকর্ম করে। ফ্লাইওভারের নিচে বাগানেও রাতদিন চলে মাদকাসক্ত ও ছিনতাইকারীদের আড্ডা। তারা সুযোগ বুঝে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধকর্ম করে।

ইদানিং দুর্ঘটনাও বেড়ে গেছে ফ্লাইওভারে। ঘটছে প্রাণহানিও। সঠিক রক্ষণাবেক্ষনের অভাব, ওভারটেকিং প্রবণতা, যুক্তিসঙ্গত গতিরোধক, ট্রাফিক সাইন, ডিভাইডার ও নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকা এবং অবাধে অধিক গতির ভারী যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণেই মূলত দুর্ঘটনা ঘটছে। ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে মালভর্তি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মতো যান চলাচলের ওপর শুরুতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পরে তাতে তেমন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি। ফলে ভারী যানগুলো সহজ পথ হিসেবে নির্দ্বিধায় বেছে নেয় ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভারকে নিরাপদ করতে দক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পরিকল্পিত কর্মসূচি, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিñিদ্র নিরাপত্তা ও নজরদারীর ব্যবস্থা করার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে ফ্লাইওভারগুলোয় সে ধরনের উদ্যোগের বড়ই অভাব। ফলে ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনা, চুরি-ছিনতাইসহ নানা ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সুষ্ঠু পরিচালন উদ্যোগের অভাবে কদমতলী ফ্লাইওভারে লেগে থাকে নিত্য যানজট। সেখানে মালবোঝাই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের সারি নিত্য দৃষ্টিগোচর হয়। আবার নগরীর ফ্লাইওভারগুলোতে যানবাহন উঠানামার পথও প্রশস্ত এবং নিরাপত্তাবেষ্টনি যুক্ত নয়। নেই ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থাও। ফলে উঠানামার পথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

আমরা মনে করি, নগরীর ফ্লাইওভারগুলোতে দুর্ঘটনা, চুরি, ছিনতাইসহ নানা ঘটনা অরক্ষিত চিত্রকেই নির্দেশ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এসব বিষয় না এড়িয়ে আমলে নেয়া এবং গলদগুলো চিহ্নিত করে সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব ফ্লাইওভার দুর্ঘটনার উৎসে পরিণত হবে বা ছিনতাই, মাদকসেবনসহ নানা অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে, তা কখনো নাগরিক কাম্য হতে পারে না। আমরা এ বিষয়ে কোনো ধরনের খামখেয়ালি দেখতে চাই না। পলিশবক্স স্থাপন, ট্রাফিকব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, পর্যাপ্ত আলোকায়ন এবং অপরাধীদের আনাগোনা বন্ধে কঠোর কর্মসূচিসহ নানামাত্রিক পদক্ষেপ দেখতে চাই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট