চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কঠোর পদক্ষেপ চাই

৩১ আগস্ট, ২০১৯ | ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আবার আরেকটি ধাক্কা খেলো বাংলাদেশ। চীনকে সাথে নিয়ে বেশ তোড়জোড় করে নামলেও এবারও একটি রোহিঙ্গা পরিবারকেও মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে রাজি করাতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। যদিও প্রায় তিনশটি রোহিঙ্গা পরিবার এবার সাক্ষাৎকার দিয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলের কাছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি পরিবারকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে প্রতীকীভাবে প্রক্রিয়াটি শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী ছিল সংশিষ্ট পক্ষ। এ জন্যে তিনটি ট্রাক ও একটি বাসও প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিলো সীমান্তে। কিন্তু একজন শরণার্থীকেও রাজি করানো যায়নি দিনশেষে। রোহিঙ্গারা বলেছেন, নাগরিকত্বসহ চারটি দাবির পূর্ণ নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তারা ফিরবেন না। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বিকেলে চীন ও মায়ানমারের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন তারা জোর করে কোন পরিবারকে ফেরৎ পাঠাতে চান না। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এবার বেশ ঝাঁজালো প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গেছে। তিনি বলেছেন রোহিঙ্গারা যদি মনে করে তারা এভাবে বাংলাদেশে আরামে দিনাতিপাত করবে তাহলে তারা ভুল করছে।কারণ সরকার ইতোমধ্যে তাদের পেছনে আড়াই হাজার কোটি তাকা ব্যয় করে ফেলেছে এবং এই খ্যাতে ব্যয়ের বিষয়ে সরকারের আর কোন চিন্তাভাবনা নেই। তার পরবর্তী কথাটী আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ তিনি মনে করেন দাতারাও আর বেশিদিন এই বিপুল জনগোষ্ঠীর ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হবে না।

বাংলাদেশ থেকে বরাবর এ বিষয়ে সহিষ্ণু আচরণ করা হলেও এবার কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি এ অচলাবস্থার জন্যে মিয়ানমারের অনীহাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন শরণার্থীরা না যাওয়ার পেছনে যে আস্থার সংকটের কথা বলছে সেটার জন্যে মিয়ানমার দায়ী। অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে মিয়ানমারের কোর্টে সরাসরি বল ঠেলে দেয়া হলেও মিয়ানমার এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি।বরং আজ টেকনাফে সাংবাদিকরা বারবার এই অবস্থায় মিয়ানমার কেন আস্থার জায়গাটি নিয়ে কাজ করছে না এ নিয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধিকে প্রশ্ন করলেও তিনি নিশ্চুপ থেকেছেন।

পরিতাপের বিষয় ছিলো যে, তারা এ বিষয়ে বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী ভারতকেও একেবারেই পাশে পায়নি। বরং ভারত একে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশকে আশার আলো জোগাচ্ছে এই সপ্তাহেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সফর। যেখানে তিনি সরাসরি না হলেও আভাসে ইংগিতে বলেছেন যে ভারত শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বাংলাদেশের জন্যে ভারতের এই সমর্থন খুবই জরুরি। সরকার রোহিঙ্গাদের অতিদ্রুত ভাসানচরে স্থানান্তর করতে চায়। এবং যেসব এনজিও প্রত্যাবাসনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখার বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে।

চট্টগ্রামের মতো বাণিজ্যিক ও পর্যটনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে অস্থিতিশীলতা ও জঙ্গিবাদের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে এবং সংরক্ষিত বনভূমিকে রক্ষা করতে এছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলাও নেই।

আব্দুলাহ সাদমান জামী
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট