চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সংস্কার কাজে দীর্ঘসূত্রতার অবসান হোক পোর্ট কানেক্টিং রোডে ভোগান্তি

২৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একটি হচ্ছে পোর্ট কানেকটিং রোড। যা পিসি রোড নামেই পরিচিত। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সারাদেশের যোগাযোগের প্রধান সংযোগসড়ক মূলত এটিই। এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরে হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভারসহ নানা হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচল করে। বুঝাই যাচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিতে সড়কটির গুরুত্ব কতটুকু। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সড়কটির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না সংস্কার কাজের দায়িত্ব নেয়া ঠিকাদাররা। বছরের পর বছর গড়িয়েও তারা এতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির ন্যূনতম সংস্কার কাজও শেষ করতে পারলেন না নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। কেনো এমনটি হচ্ছে? এটা কি ইচ্ছাকৃত খামখেয়ালি, নাকি অদক্ষতা? নাকি অন্য কিছু? এ জন্যে কি তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে?

সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনায় ও জনভোগান্তি দূর করতে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে উন্নয়নকাজ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজের জন্য সড়কটিকে চারটি লটে ভাগ করা হয়। এরমধ্যে নিমতলা থেকে আনন্দীপুর পর্যন্ত দুই লটে ১০০ কোটি টাকার ৩৬৫০ মিটার সড়কের কাজ করছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত তারা একপাশের ৩০০০ মিটার কার্পেটিং সম্পন্ন করেছে মাত্র। অপর অংশে ম্যাকাডম এবং ড্রেন নির্মাণ করা হলেও সড়কের সংস্কার কাজের অগ্রগতি তেমন হয়নি। বাকি দুই লটের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। আনন্দী বাজার থেকে সাগরিকা মাজার পর্যন্ত ১৪৫০ মিটার সড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজের দরপত্রশেষে সম্প্রতি কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ লট সাগরিকা মাজার হতে অলংকার পর্যন্ত ৭৫০ মিটার সড়কের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দুই লটের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত মে মাসে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় আগস্টের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেই বাড়ানো মেয়াদও শেষ হচ্ছে কাল। কিন্তু এখনো অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। সিটি মেয়র বলেছেন, এই সড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজে ঠিকাদারের কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষ করে সেবাখাতের লাইনগুলো সরাতে বেশ সময় লেগেছে। যেহেতু ব্যস্ত সড়ক তাই পুরো সড়ক বন্ধ করে কাজ করা যায়নি। সিটি মেয়রের যুক্তি মেনে নিলেও বলা যায়, ঠিকাদারের দক্ষতা ও আন্তরিকতা থাকলে, একইসঙ্গে যথাসময়ে কাজ শেষ করার তাগাদা ও চাপ থাকলে এমনটি হতো না। অভিযোগ আছে, ভাল প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে অদক্ষ ব্যক্তি কাজ নিয়েছে। অভিযোগটি সত্য হলে তা মারাত্মক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। সত্য প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

পূর্বকোণের প্রতিবেদন বলছে, পিসি রোড দিয়ে চলাচলাকারীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। কোনো কোনো এলাকায় সড়ক চরম রূপ ধারন করেছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন ও যানবাহন চলাচল। শিক্ষার্থী, কর্মমুখী ও ব্যস্ত মানুষজনের প্রতিদিনকার দুর্ভোগ পৌঁছে যাচ্ছে অবর্ণনীয় পর্যায়ে। ভাঙাচোরা ও খানাখন্দময় সড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় নানা দুর্ঘটনা। সড়কের মাঝে সৃষ্ট গর্তে পড়ে যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে গাড়ি বিকল হওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। কার্পেটিং করা অংশ দিয়ে দুই দিকের গাড়ি ঝুঁকিপূর্ণভাবে আসা-যাওয়া করছে। বিশেষ করে বন্দর থেকে বের হওয়া কন্টেইনারবাহী প্রাইমমুভার এবং কাভার্ডভ্যান একটি অপরটিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণভাবে ক্রস করে। ছয় কিলোমিটার সড়ক পার হতে লেগে যায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সহসা এ সমস্যা নিরসনের সম্ভবনাও ক্ষীণ। অবস্থাদৃষ্টে অনুমেয় জন ও যানের এই দুর্ভোগ চলবে আরো বহুদিন। পিসি রোডের ন্যায় এক্সেস রোডের অবস্থাও কাহিল। সেখানে বড় পুল থেকে বাদামতলী মোড় পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ভোগান্তির পাশাপাশি সড়কজুড়েই লুকিয়ে আছে দুর্ঘটনা নানা ফাঁদ। বৃষ্টির সময় কাদায় ভরে যায় সড়ক; সে কাদায় নষ্ট হয় পথচারীর পরিধেয় বস্ত্র। আবার রোদে সে কাদা ধুলির ধোঁয়ার রূপ নেয়। ধুলোয়-ধূসর হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। শ্বাস-প্রশ্বাসে সে ধুলি ফুসফুসে ঢুকে জন্ম দিচ্ছে নানা জটিল ব্যাধির। জনভোগান্তির পাশাপাশি লাটে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্যও। এলাকাবাসীর পিছু ছাড়ছে না নানা দুর্ঘটনাও।
দক্ষ ও পেশাদার ঠিকাদারদের কাজ দিলে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান থাকলে নিশ্চয়ই এমনটি হতো না। আমরা চাই, নানা অজুহাতে দায় এড়ানোর চেষ্টা না করে এই চিত্রের আশু অবসানে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেয়া হোক। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে জনগণকে মুক্তি দেয়া হোক চরম দুর্ভোগ ও নানামাত্রিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে। একইসঙ্গে কাজের মানের বিষয়েও যথাযথ নজরদারী ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট