চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শিশুদের জন্য ভালোবাসা ও নৈতিক শিক্ষা জরুরি

২৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

প্রতিটি শিশুকে নিয়েই জন্মদাতা ও জন্মদাত্রীর আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন থাকে। শিশুটির জন্মের পর থেকেই স্বপ্নের জাল বুনতে থাকেন মা বাবা। সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় চাকুির, ব্যবসা জজ ও ব্যারিস্টার হবে। আর সাধারণ পরিবারের মা বাবার স্বপ্ন খুবই সীমিত আকারে। স্বপ্ন দেখতে কোন বাধা না থাকলেও সামর্থ্যরে দিকে চোখ বুলিয়ে স্বপ্নের পরিধিকে বড় করা সম্ভব হয় না। বড়জোর তাদের একটাই ভাবনা, ছেলে মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করবো, লেখাপড়া শেখাবো, যেন আমাদের বৃদ্ধ বয়সে আমাদের সেবা যত্ন করতে পারে, সংসারের হাল ধরতে পারে। প্রতিটি মা বাবার স্বপ্ন সত্যিই পূরণ হয়, তবে সব সন্তানেরা ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রচ- চাপে বই পুস্তকে ন্যায়-নীতির কথা পড়লেও এ বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অর্জন না করায় ও চর্চা করতে না পারায় লেখাপড়াটা ভালো করলেও নৈতিক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভবপর হয় না। বড় ছোট প্রতিটি পরিবারেই এ ধরণের নানান সমস্যা বিদ্যমান। মা বাবা যখন ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে স্বপ্ন পূরণের তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন তখনই দেখা দেয় বহুমুখী সমস্যা যাতে করে সৃষ্টি হয় সন্তান ও পিতা মাতার মধ্যে দূরত্ব। নৈতিক জ্ঞান অর্জন না করার কারণে পিতা মাতার সাথেও রূঢ় আচরণ করতে দ্বিধাবোধ করেন না সন্তানেরা। সন্তানকে প্রচুর পড়াশুনা করানোর পরেও মা বাবা/পরিবার শান্তিতে নেই এমন হাজার হাজার পরিবার আমাদের সমাজে বিদ্যমান।

প্রতিটি মা বাবারই উচিত ছোট্ট শিশুটি যখন হাঁটতে শিখে, বলতে শিখে, কিছু করতে শিখে তখন তাকে ভালো কাজ, কথা ও রাস্তার সন্ধান দেয়া। ৪/৫ বৎসর বয়সেই আমরা শিশুটির হাতে ৭/৮টা বই তুলে দেই, পড়ালেখা শেখানোর জন্য, আফসোসের বিষয় সেখানে অনেক সময় একটাও ধর্মীয় শিক্ষার বই থাকে না। থাকলেও তেমন গুরুত্ব পায় না, অন্য আট দশটা বিষয়ের মতোই সাধারণ ভাবে ধর্মীয় শিক্ষার বইটাকে পড়া হয়। শিক্ষক নৈতিকতার বিষয়ে শেখায় একটি ছাত্র ক্লাস ২/৩ তে উত্তীর্ণ হবার পর। কিন্তু একটি শিশু তার আগেই অনেক কিছু শিখে ফেলে, সে শিক্ষাটা পরিবারের সদস্যদের থেকে বিশেষ করে মা-বাবা থেকেই পায়। এই সময় যদি মা-বাবা ভালো শিক্ষা না দেয়, তাহলে সে পাঠ্যবই ভালো ভাবে শিখলেও নৈতিক শিক্ষার অভাবটা ঠিকই রয়ে যায়। শিক্ষক ক্লাসে নৈতিকতার শিক্ষা দিলেও এটা চর্চা করতে হয় প্রথমে পরিবারের সাথে, আর এই সময় যদি পরিবার ভালো বিষয়ে আগ্রহী করে না তুলে তাহলে বইয়ের পড়ায় কোন ভাবেই নৈতিকতা অর্জন হয় না।
অনেক মা বাবা উভয়ে চাকুরিজীবী হওয়ার কারণে শিশুটি একাকিত্বে, অনাদর, অবহেলা ও উদাসীনতায় বড় হতে থাকে। এতে করেও শিশুটি একাকিত্বে ভোগে, মনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় মা-বাবার প্রতি। প্রতিটি শিশুকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব মা-বাবার ওপর। বিবেকবান মানুষ কখনোই খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে না। আর যাদের সন্তানেরা ছোট বেলায় নৈতিক শিক্ষা পায় না, ভালো মন্দের তফাৎ, বিধি-নিষেধ শিখতে পারে না, এটা বড় হয়ে ততটা খারাপ না হলেও যেকোন মুহূর্তেই তাদের দ্বারা জঘন্য কাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। অমানবিক ঘটনারোধ করতে শিশুদেরকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান ও মানবিক করে তোলার কোন বিকল্প নেই। মা বাবা তথা অভিভাকদেরকেই এই দায়িত্বটা পালন করতে হয়।

জুবায়ের আহমেদ
শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম, অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট