চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কর্মস্থলে চিকিৎসকদের উপর হামলা কারণ ও প্রতিকার

চিকিৎসা শ্রমিকের দিনলিপি

ডা. হাসান শহীদুল আলম

২৮ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ভাদ্রের প্রথম সপ্তাহ। ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। মেঘলা আকাশ। পটিয়াস্থ চেম্বার।

নি¤েœর সংবাদচিত্রটির প্রতি সম্মানিত পাঠকগণের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি : বরিশালে চিকিৎসকদের মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে চিকিৎসকরা বলেন, বিগত ১৩ জুলাই স্কয়ার হাসপাতালে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাসিমউদ্দীনকে লাঞ্ছিত করে এক পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্বজনরা। যা কোনভাবে বরদাশত করা যায় না। দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকদের নানাভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এর যথাযথ বিচার না হওয়ায় চিকিৎসকদের উপর হামলা বন্ধ হয় নি। তাই নিরাপদ কর্মস্থলের দাবী এবং ডা. নাসিম এর উপর হামলাকারীদের আটক ও শাস্তির দাবী জানিয়েছেন তাঁরা (ভোরের আলো, ২৩-৭-১৯)।

উল্লিখিত সংবাদচিত্রটির আলোকে বিগত বৎসর সমূহে স্বাস্থ্যখাতের সব ধরনের কর্মস্থল সমূহে চিকিৎসকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার যে ঘটনাসমূহ সংগঠিত হয়েছে সেগুলোর কয়েকটি পর্যালোচনা করে ঘটনাসমূহের নেপথ্যে কারণসমূহ বের করার চেষ্টা করবো।

তার আগে নি¤েœাক্ত তথ্যসমূহ পেশ করছি : বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কিছু তথ্যাদি : ক) রোগীদের চিকিৎসা অর্থনৈতিক অবস্থা : বাংলাদেশে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ে সরকারী ব্যয় সর্বনি¤œ এবং ব্যক্তিগত ব্যয় সর্বোচ্চ। মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ে সরকারী ব্যয় ভারতে ৩৩ শতাংশ, নেপালে ৪০ শতাংশ, বাংলাদেশে ২৩ শতাংশ। মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ে ব্যক্তিগত ব্যয় ভারতে ৫৭ শতাংশ, নেপালে ৪৯ শতাংশ, বাংলাদেশে ৬৩ শতাংশ। খ) বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা : তিনটি ধাপে বিভক্ত : ১) প্রাইমারী ধাপ : ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, বেসরকারী প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পৌর ও সিটি কর্পোরেশন স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহ : ২) সেকে-ারী ধাপ : জেলা পর্যায়ে অবস্থিত সরকারী হাসপাতালসমূহ, বেসরকারী পর্যায়ের হাসপাতালসমূহ, পৌর ও সিটি কর্পোরেশন হাসপাতালসমূহ, ৩) টারশিয়ারী ধাপ : জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অবস্থিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহ, বেসরকারী পর্যায়ে বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহ। গ) ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাইমারী স্বাস্থ্যখাত অবহেলিত : প্রতি ইউনিয়নে চিকিৎসক প্রয়োজন ১৪ জন। বর্তমানে রয়েছে ৫জন। অতএব আরো প্রয়োজন (১৪-৫) বা ৯ জন। অর্থাৎ ৪৫৫৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্রে এ মুহূর্তে আরো (৪৫৫৪ঢ৯) বা ৪০৯৮৬ জন চিকিৎসককে নিয়োগ দিতে হবে। ঘ) সরকারী খাতে অপর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ : বর্তমানে সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ২৬১৫৩ জন। কিন্তু ২৫০০ জনগণের জন্য একজন চিকিৎসক হিসেব করলে বর্তমানে সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক থাকা উচিৎ ১৭ কোটি জনগণের জন্য প্রায় ৬৮০০০জন। অর্থাৎ সরকারের উচিৎ আরও ৪১৮৪৭ জন চিকিৎসককে এখনই নিয়োগ দেয়া। দেখা যাচ্ছে, সরকারী খাতে নিয়োগকৃত চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ৩৮ শতাংশ। ঙ) অপর্যাপ্ত সেবাকর্মী নিয়োগ : প্রয়োজনের তুলনায় নার্স রয়েছে ১৩-৩ শতাংশ। চ) স্বাস্থ্যখাতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ : বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী একটি দেশে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপি এর কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। সে হিসেবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মোট বাজেটের পরিমাণ ৫২৩১৯০ কোটি টাকার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেয়া উচিৎ ছিলো ৭৮৪৭৮ কোটি টাকা। কিন্তু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৫৭৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৫২৭৪৬ কোটি টাকা কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ হিসেবে দেখা যায়, বিগত ১০ বছরে প্রায় ৩ থেকে ৫ লক্ষ কোটি টাকা কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কর্মস্থলে চিকিৎসকের উপর হামলার নেপথ্য কারণসমূহ :
ক) জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া এবং জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য জনশক্তি নীতি না থাকা : রোগী অনুপাতে ডাক্তার-নার্স খুবই স্বল্প হওয়ায় চিকিৎসক ও সেবাকর্মীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেও রোগীদের সন্তুষ্ট করতে পারছেন না। রোগীদের সম্পূর্ণ ক্ষোভ থাকে ডাক্তারদের উপর। ফলে চিকিৎসকদের উপর হামলা বাড়ছে। খ) প্রচার বাড়ানোর অসদুদ্দেশ্যে মিডিয়া কর্তৃক ভ্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করা : চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞানের সাথে সম্পর্কহীন একজন মানুষ হতে পারেন তিনি সাংবাদিক কিভাবে বলতে পারেন ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং পত্রিকায় শিরোনাম দিচ্ছেন চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু বা ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু। একজন মহিলা চিকিৎসককে বাথরুম থেকে দরজা ভেঙ্গে বের করে রোগীর স্বজনরা মারধর করলে চিকিৎসকরা যখন উক্ত মহিলা চিকিৎসকের উপর নির্যাতনের বিচার চেয়ে কর্মবিরতি পালন করে তখন মিডিয়া উক্ত মহিলা চিকিৎসক নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা না করে শুধূ রোগীদের দুর্ভোগই দেখিয়ে থাকে যার কারণে দর্শক শ্রোতারা প্রকৃত সত্য না জেনে চিকিৎসকদের এক তরফা দোষারোপ করে থাকে। গ) হাসপাতালসমূহকে দলীয় রাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে স্থানীয় ক্ষমতাশালী রাজনীতিবিদগণ কর্তৃক মাস্তানদের আশ্রয় প্রশ্রয় দান। ঘ) হাসপাতালে দলীয় রাজনীতির প্রভাব । ঙ) ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর আইন ও পদক্ষেপ না থাকা : ওষুধের পাশর্^প্রতিক্রিয়ার কারণে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হলে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের দোষারোপ করার সুযোগ পায়। চ) হাসপাতাল পরিচালনায় কার্যকর নীতিমালার অভাব : হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে কোন অনভিপ্রেত ব্যাপার ঘটলে সেটা দেখার দায়িত্ব হলো সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাতে সমাধান না হলে পর্যায়ক্রমে স্থানীয় প্রশাসন, বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতা ক্রমান্বয়ে নেয়া হয়। কিন্তু বিগত ১৯১৭ সালে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন নারী চিকিৎসক রোগীর স্বজন কর্তৃক ঈভ টিজিং এ অপমানিত হওয়ায় উদ্ভুত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনরকম নিয়ম কানুন অনুসরণ না করে মন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার সন্তানদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য মাস্তানদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে অন্যায়ভাবে চারজন ইন্টার্নী চিকিৎসকের ইন্টার্নশীপ ছয় মাসের জন্য বাতিল করা হয়। এ ধরনের ঘটনায় চিকিৎসকদের সাথে দুর্ব্যবহার করতে রোগীর স্বজনরা ভবিষ্যতে আরও তৎপর হবে। ছ) উপজেলা হাসপাতাল সমূহে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা না থাকা : জ) চিকিৎসার সকল দায় শুধুমাত্র চিকিৎসকদের অন্যায়ভাবে বহন করতে দেয়া : ঝ) জনগণকে চিকিৎসার জন্য বিদেশমুখী করার জন্য দালালদের তৎপরতা : হাসপাতালের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ভিনদেশী হাসপাতালের দালাল রোগীর স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে উসকে দেয়। ঞ) নারী চিকিৎসকদের চেম্বারে বা হাসপাতালে বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যথাযোগ্য শাস্তি না হওয়া : ইন্টার্ন নারী চিকিৎসকরা অনেক সময় রোগীর আত্মীয় স্বজনদের বা কখনও কখনও রোগীদের দ্বারা ঈভটিজিং এর শিকার হন। একটি ঘটনার গ্লাস ভেংগে সেই কাঁচের টুকরো দিয়ে হাত কেটে দেয়া হয়েছে নারী চিকিৎসকের। অপর এক ঘটনায় ধর্ষণে বাধা দেয়ায় খুন হয়েছেন নারী চিকিৎসক। নারী চিকিৎসকরা তাদের কর্মস্থলে বা কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার পথে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ফরিদপুরে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রোগী মারা যাওয়ায় কর্তব্যরত ইন্টার্নী নারী চিকিৎসক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, রোগীর স্বজনদের কর্তৃক লাঞ্ছিত হলে নারী চিকিৎসকরা কোন বিচার পান না। ট) তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে যেকোন প্রকার বিশৃংখলা রোধ করার জন্য সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতালের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা না থাকা। ঠ) হাসপাতালে অ প্রয়োজনীয় লোকের প্রবেশে বাধা না থাকা। ড) চিকিৎসকদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চিকিৎসকদের উপর ক্ষমতার দাপট দেখানোর প্রবণতা।

কর্মস্থলে চিকিৎসকদের উপর হামলা রোধে করণীয় : ক) জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া। খ)জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য জনশক্তি পরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন করা : প্রাইমারী, সেকে-ারী ও টারশিয়ারী প্রতিটি ধাপে রোগী অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স, সেবাকর্মীর সংখ্যা বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা নিরূপিত মানদ- অনুযায়ী হতে হবে। তখন জনগণ সুচিকিৎসা পেয়ে সন্তুষ্ট থাকবে এবং কখনও চিকিৎসকদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবে না। গ) চিকিৎসাধীন রোগী সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনের জন্য জাতীয়ভাবে নীতিমালা প্রণয়ন এবং নীতিমালা লংঘিত হলে দায়ী সাংবাদিক ও মিডিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা রাখা। ঘ) হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় যাতে দলীয় সরকার অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থাপনার নীতিমালা এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে কর্মচারীরা রাজনীতি করার সুযোগ হাসপাতালে না পায়। ঙ) সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল পরিচালনার জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন। চ) রাজধানী ও বিভাগীয় শহরসমূহে কর্মরত বিদেশী হাসপাতাল সমূহের প্রতিনিধি এবং লিয়াঁজো অফিসসমূহের কার্যক্রম সরকারী তদারকিতে নিয়ে আসা : যাতে তারা এদেশের রোগীকে ফুসলিয়ে বিদেশী হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারে এবং এ দেশের চিকিৎসককে বিতর্কিত করার জন্য কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে। সেসঙ্গে হাসপাতালসমূহকে বিদেশীদের দালালমুক্ত রাখতে হবে।

ছ) ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে আরো কার্যকর কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। জ) হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার নীতিমালা এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যাতে চিকিৎসার সকল দায় অযৌক্তিকভাবে শুধুমাত্র চিকিৎসককেই বহন করতে না হয় : আমাদের দেশে হাসপাতালে চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিবিধ যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক, ওষুধ ইত্যাদির সংরক্ষণজনিত ত্রুটির কারণে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে এবং চিকিৎসা বিল বড় আকারের হলে রোগীগণ একতরফাভাবে চিকিৎসককেই দায়ী করে থাকে। উন্নত দেশের অনুকরণে আামদের দেশেও নিয়ম হওয়া উচিৎ যে, চিকিৎসকরা রোগীর চিকিৎসা ও ফলোআপ করবেন এবং শল্য চিকিৎসকগণ শুধু অপারেশন করবেন। এর বাইরে চিকিৎসকের আর কোন দায় যেন না থাকে সেভাবে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় নিয়ম থাকবে। ঝ) চিকিৎসকদের সুরক্ষার আইন প্রণয়ন করতে হবে : রোগীর মৃত্যু চিকিৎসকের ভুলে হয়েছে কিনা এটা বিশেষজ্ঞ তদন্ত ছাড়া কোন নন মেডিকেল ব্যক্তির সিদ্ধান্ত হতে পারে না। সেজন্য রাষ্ট্রীয় আইনে তদন্ত হবে। ঞ) বিএমডিসিকে সরকারের তাবেদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্বল ও অকার্যকর না রেখে এটিকে স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে। ট) চিকিৎসকদের চেম্বারে বা হাসপাতালে বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা ঠ) হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় লোকের প্রবেশ বন্ধ এবং রোগীর স্বজনদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যথাযোগ্য আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করা। ড) প্রাইমারী, সেকে-ারী ও টারশিয়ারী ধাপের প্রতিটি হাসপাতালে এমনকি চিকিৎসকদের চেম্বারে নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা রাখা যারা যেকোন প্রকার বিশৃংখলা রোধ করতে পারে। প্রয়োজনে পুলিশ ফাঁড়ি বা পুলিশের বিশেষ স্কোয়াডের ব্যবস্থা রাখা। ঢ) চিকিৎসকদের চাকুরীগত মান উন্নয়ন করে কর্মরত অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা।
উপসংহার : এ পর্যন্ত যেটুকু আলোচনা হলো তার সারমর্ম হিসেবে উপসংহারে বলতে চাই যে, জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে প্রাপ্য বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করে প্রাইমারী স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজিয়ে সচল করার মাধ্যমে রোগীদের চাপে নিষ্পেষিত সেকে-ারী ও টারশিয়ারী স্বাস্থ্যখাত দুটিকে বিপর্যস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। এভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রোগীবান্ধব পরিবেশ তৈরী করে জনগণকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর আস্থাশীল করতে হবে। পাশাপাশি কার্যকর ‘চিকিৎসক সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসকদের প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এরূপ অনভিপ্রেত পরিস্থিতির অবসান ঘটাবে। নতুবা মেধাবী ছাত্রছাত্রীগণ মেডিকেল শিক্ষা গ্রহণে অনাগ্রহী হয়ে পড়বে যার সুদূরপ্রসারী ফল হিসেবে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার মান নিম্নাভিমুখী হবে।

লেখক : চর্মরোগ ও ডায়াবেটিস-এ ¯œাতকোত্তর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট