চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

রুখতে হবে সড়ক দুর্ঘটনা

অধ্যাপক রতন কুমার তুরী

২৫ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

প্রা য় প্রতি দিনই সড়ক এবং মহা সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। আবার অনেকেই হচ্ছে পঙ্গু। এমন দুর্বিসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না কেউ। সড়ক দুর্ঘটনা যেনো দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৬ সালে বিশে^ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ২০১২ সালে এ সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৪৭ হাজার। ২০০০ সালে বিশে^ মৃত্যুর শীর্ষে ১০টি কারণের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল দশম স্থানে। ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু অষ্টম স্থানে চলে আসে। ২০৩০ সাল নাগাদ এটি সপ্তম স্থানে আসবে। অন্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ মতে দুর্ঘটনায় এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সাল নাগাদই সড়ক দুর্ঘটনা তৃতীয় শীর্ষ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বলা হয় Ñ নি¤œ এবং মধ্যম আয়ের দেশে মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। তাছাড়া সারা বিশে^ ১৫-২৯ বছর বয়সে যারা মারা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর আহত হয় দুই থেকে পাঁচ কোটি মানুষ। গরিব এবং মধ্যম আয়ের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং আহত হওয়া পরিবারে তা দুর্বিসহ বোঝা হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে চীনে আনুমানিক ২ লাখ ৬১ হাজার। তারপর ভাবতে ২ লাখ ৭ হাজার, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৮ হাজার, নাইজেরিয়া ৩৫ হাজার, যুক্তরাষ্ট্র ৩৪ হাজার, পাকিস্তান ২৫ হাজার, ইথিওপিয়ায় ২৩ হাজার ৮০০, কঙ্গোয় ২২ হাজার। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে প্রতিদিন বিশে^ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ মানুষ। এ সংস্থার ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যু হয় এমন দুর্ঘটনার ৯০ ভাগই ঘটে নি¤œ এবং মধ্যম আয়ের দেশে। যদিও এসব দেশে বিশে^র ৫৪ ভাগ যানবাহন চলাচল করছে। আর বছরে গড়ে বিশে^ ১২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। গরিব এবং মধ্যম আয়ের দেশের মোট দেশীয় উৎপাদনের তিন শতাংশ নস্যাৎ হয়ে যায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বিশে^ প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয় ২০১৩ সালে বাংলাদেশে আনুমানিক ২১ হাজার ৩১৬ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। সংস্থার মতে, এ সংখ্যা নি¤েœ ১৭ হাজার এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। অন্য দিকে, সরকারি হিসাব মতে, ২০০৩ সালে ৩ হাজার ২৯৬ জন মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। প্রকৃতপক্ষে পরিসংখ্যান গুলোতে প্রাপ্ত দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক সময় ঠিক নাও হতে পারে। কারণ দুর্ঘটনার বেশিরভাগ তথ্যই মিডিয়াগুলোতে আসেনা কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগুলো সংরক্ষণ করেনা ফলে পরিসংখ্যানগুলোর প্রাপ্ত তথ্য অনেক সময় খন্ডিতই থেকে যায়।
২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্যাসেঞ্জারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন মানুষ মারা গেছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা গরিব এবং মধ্যম আয়ের দেশের অর্থনীতিতে খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে গরিব পরিবারে এটি অসহনীয় বোঝা হয়ে নেমে আসে। এখন প্রশ্ন হলো সড়ক দুর্ঘটনা রোধের উপায় কি? প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে রাস্তার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি।
অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে মানুষজন যেখানে সেখানে বাড়ি-ঘর-দোকান পাট তৈরি করার কারণে অনেক সময় যানবাহনের রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ে এতে অতি সংকুচিত রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে তা দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এর বাইরে অদক্ষ এবং অপেশাদার যানচালক, ট্রাফিক ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা, জনসাধারণের মধ্যে রাস্তা পারাপারের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তায় ট্রাফিক, চালক এবং সাধারণ জনগণের সমন্বয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারলেই দুর্ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, মানবাধিকারকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট