চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

শোকাবহ ১৫ আগস্ট

১৫ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের এ দিন মধ্যরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে শাহাদাতবরণ করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের স্থপতি ও নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানকে সপরিবারের এমন ভয়াবহ ও জঘন্যতম কায়দায় হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও। ঘাতকদের বুলেট থেকে রেহাই পাননি ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা শুধু ব্যক্তিকে হত্যাপ্রয়াস ছিল না, ছিল জাতির স্বাধীনতার শক্তিকে হত্যার অপচেষ্টা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। সংগত কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী প্রতিজন বাঙালির কাছে শোকাবহ ১৫ আগস্টের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির সব মুক্তি সংগ্রামের অগ্রনায়ক। তিনি আপাদমস্তক একজন আপোসহীন জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বকে ঘিরেই বাঙালি জাতি গত শতাব্দীর মধ্যষাট দশক হতে শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তিলাভের স্বপ্নে বিভোর হয়। তিনি তাঁর জাতিসত্তা বাঙালিত্বের চেতনায় এই জনপদের মানুষকে জাগ্রত করেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও প্রেরণায় এ জাতি উদ্বেল হয়ে উঠে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায়। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে তিলে তিলে গড়ে তুলেন স্বাধীনতার লড়াইয়ের জন্যে। শেষ পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বে একাত্তরে এক রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের বহুকাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। লাখো মানুষের আত্মদান ও সম্পদ-সম্পত্তির সীমাহীন ক্ষয়-ক্ষতির মধ্য দিয়ে বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রে ভাস্বর হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতা লাভের পর তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন এবং সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত করার কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পচাত্তরে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করতে হয় তাঁকে। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন শুরু করে দেয়। এখন উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ‘এশিয়ার উদীয়মান টাইগার’ খ্যাত বাংলাদেশ বিশে^ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ‘ভিশন- ২০২১’ এর মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আর ‘ভিশন-২০৪১’ এর মাধ্যমে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশে পরিণত হতো।
বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের কল্যাণেই তাঁর সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছেন। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন, আর স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী। আজীবন লড়াই করেছেন প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে। তাঁর সারাটা জীবন ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রচ- দ্রোহ। তিনি এই দেশের সর্বস্তরের মানুষকে মনেপ্রাণে ভালবেসেছিলেন। মানুষের প্রতি তাঁর বিশ্বাস ও আস্থা ছিল আকাশচুম্বী। সেজন্যই হাসি মুখে, নির্ভীকচিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সব ধরনের জুলুম-নির্যাতন বরণ করেছেন তিনি। তিনি স্বদেশের মাটি আর মানুষকে এমন গভীর ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছিলেন, যে বন্ধন কোনোদিন ছিন্ন হওয়ার নয়। আমরা আজ শোকাবহ এই দিনে গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু একটি অসাম্প্রদায়িক, সুশাসন সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক, উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশের যথাযথ রূপায়ণে কাজ করাই হবে আজ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সর্বোত্তম উপায়। তিনি যে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা এগিয়ে নিতে হবে সম্মিলিতভাবে। আগামী প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হোক আমাদের চলার পথের পাথেয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট