চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হোক ঈদুল আজহা

১১ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

আগামীকাল সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা মানে ত্যাগের ঈদ। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদুল আজহা হচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর হিজরিক্যালেন্ডার অনুযায়ী জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা হাজির হয় পশুত্বপ্রবৃত্তির কুরবানি করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করার সুমহান বার্তা নিয়ে। এই ঈদ মহান কুরবানির শিক্ষা দেয়। কুরবানি হচ্ছে মূলত ত্যাগ। ত্যাগের মধ্যেই এর সার্থকতা ও তাৎপর্য নিহিত। ত্যাগের আনন্দে উদ্ভাসিত পবিত্র ঈদুল আজহা মানুষকে মানবিক চেতনায় পুষ্ট হয়ে জগতের সকল সৃষ্টির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার শিক্ষা দেয়। উৎসাহ জোগায় একটি সাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হতে। ফলে সমগ্র মুসলিমজাহান তো বটেই সমগ্র বিশ্বমানবের কাছে পবিত্র ঈদুল আজহার সীমাহীন গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে।
আরবি শব্দ ঈদ-এর অর্থ আনন্দ উৎসব এবং আজহা’র অর্থ পশু জবাই করা। অর্থাৎ ঈদুল আজহা একই সঙ্গে পশু কুরবানী দেয়ার এবং ত্যাগের উৎসবের দিন। বস্তুত মানুষের স্বচ্ছ-নির্মল হৃদয়ে পশুর স্বভাব বিদ্যমান থাকে। তাতে মানুষের স্বভাবে প্রকাশ পায় হিংসা-বিদ্বেষ, গর্ব-অহংকার, কপটতা, পরশ্রীকাতরতা, পরনিন্দা ইত্যাদি। মানবহৃদয়ের এই পশুত্ব মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে প্রধান বাধা। তাই পশু কুরবানির পাশাপাশি নিজেদের পশুত্বকে কুরবানি দিতে হয় তাকওয়ার শাণিত ইচ্ছার মাধ্যমে। আর তখনই সার্থক হয় প্রতীকী পশুর কুরবানি। আল্লাহতা’লার উদ্দেশে পশু কুরবানী উপলক্ষ হলেও এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা। সেদিক থেকে ঈদুল আজহা একটি অত্যন্ত মহিমান্বিত দিন। প্রসঙ্গত, একশ্রেণির মুসলমান ঈদুল আজহাকে কেবলই পশু কুরবানী দেয়ার এবং উৎসব করার দিনে পরিণত করলেও দিনটির প্রধান উদ্দেশ্য মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহতা’লার প্রতি পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও আনুগত্য তৈরি করা এবং স্বার্থচিন্তার উচ্ছেদ করে আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়া। আল্লাহতা’লার কাছে নিজেকে সম্পর্ণরূপে সমর্পণ করাই ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। তাই যাদের ওপর কুরবানি আদায় করা আবশ্যক তাদের উচিত নির্দিষ্ট নিয়মে ও নির্দিষ্ট সময়ে পশুকুরবানি দেয়া। আর কুরবানির মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নিজেদের পশুত্বপ্রবৃত্তির কুরবানি করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করা, সেহেতু এই উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের গৌরব-মর্যাদার প্রতীক হিসেবে কুরবানিকে বিবেচনা করা উচিত নয়।
যে মুসলমান ঈমানের বলে বলিয়ান হয়ে আল্লাহর রাহে নিজের পশুত্বকে কোরবানি করে দেবে সেই কামিয়াবি হবে। তার কোরবানিই কবুল হবে মহান আল্লাহর দরবারে। কোরবানির এই ফজিলত অর্জন করতে প্রয়োজন ওই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতা যা নিয়ে কোরবানি করেছিলেন আল্লাহর খলিল হযরত ইব্রাহিম (আ.)। মনে রাখতে হবে আল্লাহর রাহে নিজের সবকিছু বিলিয়ে দেবার এক দৃপ্ত শপথের নামই কোরবানি। প্রকৃতপক্ষে, কোরবানিদাতা কেবল পশুর গলায় ছুরি চালায় না, ছুরি চালায় সব কুপ্রবৃত্তির গলায়। আমাদের সকলেল উচিত ঈদুল আজহার প্রকৃত তাৎপর্য, গুরুত্ব ও ফজিলত অনুধাবন করে কোরবানির মৌলিক শিক্ষাকে ধারণ করে ইহ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ অন্বেষণ করা।
সাধারণত চট্টগ্রাম মহানগরে বাসাবাড়ির সামনের সড়কের, অলিতে-গলিতে পশু জবাই করা হয়। আবার উন্ম্ক্তু ও অপরিচ্ছন্ন স্থানে চলে পশুর চামড়া ছাড়াই, গোস্তকাটা ও ভাগবাটোয়ারার কাজ। মানা হয় না কোনো প্রকার পরিবেশগত ও স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত বিধি। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি কুরবানির গোস্তে ক্ষতিকর জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। আবার জবাইকৃত পশুর রক্ত ও বর্জ্যে নালা-নর্দমাও ভরাট হয়ে যায়। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা টানা কয়েকদিন কাজ করেও নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে পারে না। উৎকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে নগরব্যাপী। এ অবস্থা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবেশসম্মত উপায়ে পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নাগরিকসাধারণকে সচেতন করার সুচিন্তিত কর্মসূচি থাকা দরকার। পাশাপাশি পরিবেশের সুরক্ষা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে আইনের কঠোর প্রয়োগও দরকার। চামড়ার পাচার বন্ধেও নিতে হবে যুৎসই উদ্যোগ।
ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল ও মহিমান্বিত হোক ঈদুল আজহা। সবার জীবনে বয়ে আনুক শান্তি ও কল্যাণ। ঈদুল আজহা উপলক্ষে দৈনিক পূর্বকোণের পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট ও শুভানুধ্যায়ী সবাইকে জানাচ্ছি শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট