চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

কোরবানির শিক্ষা

জহিরুদ্দীন মো. ইমরুল কায়েস

১১ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ

‘কোরবান’ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো ত্যাগ বা বিসর্জন। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় দু’টি খুশির দিনের একটি ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতর এর ঠিক দুই মাস দশ বা নয় দিন পরে ঈদুল আজহা বা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে কোরবানির ঈদ বা বক্রী ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি কোরবানি দেওয়ার নির্দেশ পান।
পবিত্র কোরান শরীফের সুরা সাফ্ফাতের ১০২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে- “অতঃপর সে যখন (ইসমাঈল আ.) পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ, বৎস আমি স্বপ্নে দেখি-যে, তোমাকে যবেহ করছি: এখন তোমার অভিমত কি বল। সে বললঃ পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহেতো আপনি আমাকে সবরকারী রূপে পাবেন”। অতঃপর হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু তথা নিজ পুত্র ইসমাঈল (আ.)কে কুরবানী দেওয়ার জন্য সম্মত এবং উদ্যত ছিলেন। আল্লাহতায়ালা এ মহান আত্মবির্সজন এবং বলিদানের মানসিকতায় খুশি হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর পুত্রের পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি কবুল করেন। সেই থেকেই কোরবানি হজ্বের একটি আবশ্যকীয় কর্তব্য হিসেবে এবং সামর্থবানদের উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়।
কোরবানি হিসেবে উট, মহিষ, গরু, দুম্বা, ছাগল ইত্যাদি পশু আল্লাহ্র নাম নিয়ে “আল্লাহু আকবর” বলে যবেহ করা হয়ে থাকে। এসব পশুর মাংস সমান তিনভাগে ভাগ করে এক ভাগ নিজের জন্য, একভাগ আত্মীয়ের জন্য এবং আরেক ভাগ গরীব মিসকিনদের মাঝে বন্টন করা হয়। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে গরীব মিসকিনদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। ঈদুল ফিতরের মতই ঈদুল আজহাতেও মুসলমানেরা নতুন পাঞ্জাবী-পায়জামা পড়ে ব্যাপক আনন্দ উচ্ছ্বাসে ঈদের জামাতে সামিল হন। ঈদুল আজহার সালাতে ওয়াজিব নামাজের ফজিলত রয়েছে। নামাজের পরেই উপস্থিত সকল মুসল্লী একজন আরেকজনের সহিত কুশলাদি বিনিময় ও কোলাকুলি অতঃপর নিকট আত্বীয়ের কবর জেয়ারত করে ঈদুল আযহার নামাজের প্রাথমিক পর্ব সম্পন্ন করেন। নামাজের পরে কোরবানির পশু জবেহ করা হয়। কোরবানি উপলক্ষে গরু-ছাগল ইত্যাদি কেনা থেকে শুরু করে ঈদুল আজহার প্রতিটি পর্বে প্রচুর আনন্দের ধুম উঠে। কোরবানি আসার অন্ততঃ দু’সপ্তাহ পূর্বে গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগর এর বাজার-ঘাট গুলো পশুতে ভরে থাকে। এত এত মনোরম গরু-ছাগল দেখে নয়ন জুড়িয়ে যায়। বছরের অন্যান্য সময়ে সাধারণতঃ এ পরিবেশ চোখে পড়ে না। কোরবানিকে ঘিরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসাপাতি হয়। কোরবানিতে দেশীয় গরু আর ছাগলের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এ ব্যাপারটি মাথায় রেখে বর্তমানে দেশে ৫ লাখের বেশী পশুখামার গড়ে উঠেছে। এসব খামার থেকেই কোরবানির বেশির ভাগ পশু সরবরাহ করা হয়।
আমাদের দেশে এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হয়। এর মধ্যে গরু কোরবানির সংখ্যা ৪৫ লাখের মতো।
এবছর চট্টগ্রামে কোরবানি দেওয়া হতে পারে সোয়া সাত লাখের মতো। চট্টগ্রামে সাত হাজার পাঁচশত খামার রয়েছে। এসমস্ত খামার থেকে ছয় লাখ বিশ হাজারের বেশী পশু স্থানীয় বাজারগুলোতে যোগান দেওয়া সম্ভব হবে। বাকী পশুগুলো দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে যোগান হবে। কিছুসংখ্যক গরু ভারত থেকে এবং কিছু গরু পার্শ¦বর্তী মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে।
প্রতিবছরের ন্যায় বাংলাদেশে মাঝারী মাপের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশী। অধিক বিত্তবানরা ছাড়া বড় বড় পশুগুলো কেনা মধ্যবিত্তদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে নিজ নিজ সামর্থানুযায়ী সুন্দর এবং নিদাগী পশু কেনাই উত্তম। প্রতিযোগিতার সহিত পশু কিনলে কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্যে ব্যাঘাত হয়।
আমাদের সজাগ থাকতে হবে যে, কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্ট এবং গোবর বিষ্টায় আমাদের শহর গ্রামের পরিবেশ যেন বীভৎস আকার ধারণ না করে। যেখানে সেখানে পশুর উচ্ছিষ্টগুলো না ফেলে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত ডাস্টবিন এবং গ্রামে নির্দিষ্ট জায়গায় অন্ত্রাদি পুঁতে রাখতে হবে। জবাই করার পরমুহূর্তেই পশুর রক্তকে ধূয়েমুছে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে জবাইকৃত জায়গার আশেপাশে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। কোরবানির পশুর উচ্ছিষ্টে আমাদের আশে-পাশের পরিবেশ যাতে কোনভাবেই ক্ষতি না হয় সেবিষয়ে আমাদের অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। আসুন, কোরবানি থেকে প্রকৃত বিসর্জনের শিক্ষা নিয়ে আমরা যদি আল্লাহ্তায়লার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি তাহলেই কেবল কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল হবে।

লেখক : কলামিস্ট, পরিবেশকর্মী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট