চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জোর তৎপরতা দরকার

কোরবানির হাটে অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য

৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১:০২ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছরই ঈদুল আজহাসহ বিভিন্ন উৎসব-পার্বণকে সামনে রেখে অজ্ঞানপার্টিসহ বিভিন্ন অপরাধীচক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। কৌশলে চেতনানাশক খাইয়ে বা শুঁকিয়ে মানুষকে অজ্ঞান করে টাকা ও মালামাল হাতিয়ে নেওয়াই এদের কাজ। মানুষের ভিড়ে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় চেতনানাশক প্রয়োগ করে নিরীহ মানুষকে সর্বস্বান্ত করে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী প্রতিনিয়তই হাতিয়ে নেয় এই চক্রটি। গামছা পার্টি, অজ্ঞানপার্টি, টাকা জালিয়াতচক্র, মলমপার্টিসহ বিভিন্ন অপরাধীচক্র এ সময় চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এদের দমনে নানা পদক্ষেপ নিলেও সাধারণ মানুষ তাদের হাত থেকে পুরোপুরি নিস্তার পায় না। তারা নানা কৌশলে সাধারণ মানুষের সর্বনাশ করে যায়। এবারও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিভিন্ন অপরাধীচক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। এদের তৎপরতা ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত সকলকে সতর্ক-সাবধান হওয়ার, একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা জোরদারের বার্তা দিচ্ছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামে গত তিন মাসে চক্রটির কবলে পড়ে অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অন্তত ৪৪ জন ভর্তি হয়েছেন। সম্প্রতি থানা পুলিশ ও ডিবির পৃথক অভিযানে চক্রের ১২ সদস্যকে আটকের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে অজ্ঞান কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ চেতনানাশক পাউডার, ডরমিটল ও সেডিল ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। এদের মধ্যে কোতোয়ালী থানায় গ্রেপ্তার হওয়া একটি চক্রের সদস্যের ব্যাপারে পুলিশ বলছে, গত ১০ বছরে চক্রটি ৮০০ মানুষকে অজ্ঞান করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ‘অজ্ঞান পার্টি’সহ নানা এই দুর্বৃত্ত চক্র। প্রসঙ্গত, বছরচারেক আগে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পশুর বাজার সিটি বাইপাস হাটে হোটেলের খাবার খাওয়ার পর সেখানকার সরবরাহ করা টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে ৩০ গরুবেপারী অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। গুরুতর অসুস্থ ৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে ঘটনায় ওই হোটেলের মালিকের ছেলেসহ ৪ কর্মচারীকে আটক করেছিল গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। অজ্ঞানপার্টি সম্পর্কে অনেক তথ্যও পাওয়া গিয়েছিল। তাদের অপতৎপরতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চেষ্টারও ত্রুটি নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ না হয়ে উল্টো বাড়ছে। এবারও তারা সারাদেশের পশুর হাটগুলোতে বেপরোয়া তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে হুমকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই চক্রের টার্গেটে পরিণত হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে। বিষয়টি অবশ্যই আতঙ্কের জন্ম দেয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, আইনপ্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা অজ্ঞানপার্টিসহ নানা অপরাধীচক্রের অপতৎপরতা বন্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই পুলিশ ও র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্টরা অজ্ঞানপার্টি ও জালনোট চক্রের অপতৎপরতা বন্ধে তৎপর রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস এ ধরনের তৎপরতা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
এ কথা ঠিক যে, মাঝেমধ্যে অজ্ঞানপার্টি ও জালনোটচক্রের অনেককে আটক করা হয়। কিন্তু কোনো গডফাদারকে আটকের খবর নেই। আবার আটককৃতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হয় না। তারা বেরিয়ে এসে আবার পূর্ণোদ্যমে তাদের অশুভ কর্মে নিয়োজিত হয়। ফলে এদের তৎপরতার ভয়াবহ বিস্তারই ঘটছে ক্রমশ। তারা নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এদের কৌশলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও আরো কৌশলী হয়ে তৎপর হতে হবে। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দানে যত্নবান হতে হবে এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এতে অপরাধীরা একটি পরিণাম-বার্তা পাবে।
ঈদ-পার্বণের মৌসুমকে অপরাধীচক্র তাদের সুসময় মনে করে। আবার এ সময় মানুষের অর্থ ও মালপত্র নিয়ে চলাচলও বাড়ে। এ অবস্থায় পুলিশ ও র‌্যাবের উচিত ভ্রাম্যমাণ মানুষের নিরাপত্তায় বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একইসঙ্গে গণমাধ্যমে নানা বিজ্ঞাপন ও নাটক-নাটিকা প্রচারের মাধ্যমে অজ্ঞানপার্টি, জালনোটচক্র এবং পশু মোটাতাজাকারীচক্রের ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক করার বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া দরকার। সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে হবে। হকার ও অপরিচিতজনদের কাছ থেকে কিছু না খাওয়া এবং কাউকে সন্দেজনক মনে হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা উচিত। সাধারণভাবে সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য কমাতেও বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এতে কুরবানির পশুর হাটে, সড়ক ও পরিবহনে মানুষের নিরাপত্তা বাড়বে, ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের জীবনে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট